প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে নয় হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, যার মধ্যে সাত হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়া হবে। আর সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে এক হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা।
‘ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ব্রডগেজ নির্মাণ এবং বরিশাল থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল লাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই’ নামের এ প্রকল্পের মধ্যে ভাঙ্গা-বরিশাল রেলপথের প্রাথমিক প্রস্তাব (পিডিপিপি) ইতোমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এরপর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বিদেশি সহায়তা পাওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান নজরুল ইসলাম সরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেল সচিব মো. ফিরোজ সালাহউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছি। কমিশনের অনুমোদনের পর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে এরপর বাস্তবায়ন শুরু হবে।”
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বৃহত্তর বরিশালের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের রেল যোগাযোগ তৈরি হবে। ২০২১ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে আগামী বছরের জুলাইয়ে এ প্রকল্প শুরু করতে চায় রেল মন্ত্রণালয়।
রেল সচিব বলেন, ভাঙ্গা-বরিশাল রেলপথটি প্রস্তাবিত পদ্মা রেললিংক, পাটুরিয়া-ফরিদপুর-ভাঙ্গা রেললাইন এবং খুলনা মংলা রেললাইনের সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে বরিশালের সঙ্গে দেশের অন্যান্য স্থানের যোগাযোগ নিশ্চিত হবে।
এর আগে গত ৩ মে ঢাকা থেকে ঢাকা থেকে পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ব্রডগেজ রেল লাইন নির্মাণে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকের অনুমোদন পায়।
রেল মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে রেল যাবে যাবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত। এরপর ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হবে।
প্রথম ধাপে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরের ধাপে বরিশাল থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণ করা হবে।
ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত লাইন নির্মাণে এবং বরিশাল থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনে সম্ভব্যতা যাচাইয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাশনস করপোরেশনের (সিসিইসিসি)। এ জন্য চীন সরকারের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থয়ানের নিশ্চয়তা দিয়েছে সংস্থাটি।
প্রস্তাবে বলা হয়, নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হলে পদ্মাসেতুর মাধ্যমে ঢাকা থেকে বরিশালের দূরত্ব কমে ১৮৫ কিলোমিটারে নেমে আসবে আর ভ্রমণে সময় কমবে তিন ঘণ্টা।
বর্তমানে সড়ক পথে ঢাকা থেকে বরিশালের দূরত্ব প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে অধিকাংশ মানুষ ঢাকায় এসে তাদের প্রতিদিনের কাজকর্ম শেষে বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন।
তাছাড়া প্রস্তাবিত রেললাইন নির্মিত হলে খুলনা, যশোর, বেনাপোল, দর্শনা, মংলাবন্দর, রাজশাহী এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও আধুনিক হবে।
প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয়ের একটি খসড়া তৈরি করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এতে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা, রেলপথ ও উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ বাবদ ছয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা, সিঙ্গেল লাইন এবং যোগাযোগ বাবদ ৪০০ কোটি টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে।
এছাড়া জনবল নিয়োগ বাবদ ২০ কোটি টাকা, পরামর্শক বাবদ ২০০ কোটি টাকা, স্টেশন নির্মাণ বাবদ ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে প্রস্তাবে।