খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট ২০১৬: জেসিকা চাকমা, রাঙ্গামাটি : উৎসবমুখর পরিবেশে রাঙ্গামাটিতে উদযাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও শোভাযাত্রায় নামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অগণিত জনতার ঢল।
এবার ‘আদিবাসীদের শিক্ষা, ভূমি ও জীবনের অধিকার’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে রাঙ্গামাটিতে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল শাখার উদ্যোগে আয়োজিত উদ্বোধনী ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। এ সময় পরিবেশিত হয়েছে উদ্বোধনী নৃত্য-সঙ্গীত।
সংগঠনটির পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের ২৯৯ পার্বত্য রাঙ্গামাটি আসনের সদস্য ঊষাতন তালুকদার। এছাড়াও রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা, এমএন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের আহবায়ক বিজয় কেতন চাকমা, নারীনেত্রী অ্যাডভোকেট সুস্মিতা খীসা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক ইন্টুমণি তালুকদার।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে এখনও আদিবাসীদের জাতিসত্তা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভূমি অধিকারসহ মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি নেই। আমরা আদিবাসী সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার বলার চেষ্টা করেছি যে, আদিবাসী জনগণের আত্ম-পরিচয়ের অধিকার রয়েছে। এটি আমাদের মানবাধিকার। আন্তর্জাতিকভাবেও আদিবাসীদের আত্ম-পরিচয়ের অধিকার স্বীকৃত। তাই সংবিধান সংশোধন করে আদিবাসী জাতিসত্তাগুলোর আশা-আকাক্সক্ষা ও দাবির ভিত্তিতে আদিবাসীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভূমি অধিকারসহ মৌলিক অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতির জোর দাবি জানান তারা।
সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, বাংলাদেশে আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো নয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আদিবাসীদের ভূমি জবরদখল ও তাদের চিরায়ত ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার হীন উদ্দেশ্যে আদিবাসীদের ওপর সা¤প্রদায়িক হামলা, তাদের ভূমি জবরদখল ও উচ্ছেদ, আদিবাসী নারীর ওপর ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণসহ নৃশংস সহিংসতা বাড়ছে।
চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় বলেন, সংবিধানে সরকারের চাপিয়ে দেয়া জাতিগত পরিচিতি আদিবাসীরা কখনও মেনে নেয়নি। আমরা ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী কিংবা স¤প্রদায়’ এসব চাইনি। চাই আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি। আদিবাসী জনগণের আত্ম-পরিচয় দেয়ার অধিকার রয়েছে। জোর করে কেউ তাদের জাতিগত পরিচিতি বদলে দিতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, সরকারের পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের সদিচ্ছা নেই। এখন চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চাইছে সরকার। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে পাহাড়ে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন না করায় পাহাড়ে আবার নতুন করে ক্ষোভ ও অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
উদ্বোধনী শেষে পৌরসভা প্রাঙ্গণ হতে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে রাজবাড়ির জেলা শিল্পকলা একাডেমি গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় নৃত্য-সঙ্গীত সহকারে দাবি সম্বলিত শ্লোগানে হাজার হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষের সন্মিলনে মুখর হয় গোটা রাঙ্গামাটির রাজপথ। এছাড়া বিকালে রাঙ্গামাটি স্টেডিয়ামে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।