খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট ২০১৬: গ্যাসের এক চুলা ১১শ’, দুই চুলা ১২শ’ টাকা করার প্রস্তাবদাম বৃদ্ধির গণশুনানি অব্যাহতযাযাদি রিপোর্ট

মিটারযুক্ত আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাসের দাম ১৪০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।
সোমবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণশুনানির দ্বিতীয় দিনে এ প্রস্তাব করে গ্যাস বিতরণ কোম্পানি।
কোম্পানিটি আবাসিক খাতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ৭ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৬ দশমিক ৮০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
গ্যাস বিতরণ কোম্পানিটি আবাসিকে এক চুলার মাসিক বিল ৬০০ টাকা থেকে ৮৩ শতাংশ বাড়িয়ে ১১০০ টাকা, দুই চুলা ৬৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে।
এছাড়া মিটারযুক্ত আবাসিকের পরেই রয়েছে ক্যাপটিভ পাওয়ার (শিল্প কারখানায় স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন জেনারেটর)। এই খাতে ১৩০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে তিতাস গ্যাস। বর্তমানে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম রয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ টাকা। দাম বৃদ্ধি করে সেটিকে ১৯ দশমিক ২৬ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া বিদ্যুতে ৬৩ শতাংশ, সার উৎপাদনে ৭১ শতাংশ, শিল্প কারখানার জন্য ৬২ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ৭২ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে তিতাস গ্যাস।
রোববার গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) গ্যাসের সঞ্চালন ট্যারিফ বাড়ানোর প্রস্তাবের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে এ গণশুনানি। গতকাল দ্বিতীয় দিনে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের গণশুনানি চলে। ১০ আগস্ট পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, ১১ আগস্ট বাখরাবাদ গাস কোম্পানি, ১৪ আগস্ট কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, ১৬ আগস্ট জালালাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও ১৭ আগস্ট সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর শুনানি গ্রহণ করা হবে।
১৮ আগস্ট পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস ও বাপেক্সের সরবরাহ করা গ্যাসের পাইকারি মূল্য বাড়ানোর বিষয়ে গণশুনানি হবে।
গণশুনানিতে অংশ নিয়ে মতামত দেয়ার সুযোগ রয়েছে ভোক্তাদের। জানা গেছে, গ্যাসের আপস্ট্রিম খরচ, সঞ্চালন ভাড়া এবং ভোক্তাপর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে গত ২৯ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল সময়ের মধ্যে আবেদন করে ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। একই সময়ে ৩০ মার্চ গ্যাসের ট্রান্সমিশন চার্জ পুনর্নির্ধারণের জন্যও আবেদন করে জিটিসিএল। প্রস্তাব যাচাইবাছাই শেষে গত ১৩ জুলাই এই বিষয়ে গণশুনানির দিন ধার্য করে কমিশন।
গণশুনানি শেষে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে গ্যাসের মূল্যহার বিষয়ে কমিশন ঘোষণা দেবে বলে জানিয়েছেন বিইআরসির পরিচালক (গ্যাস) একেএম মনোয়ার হোসেন আখন্দ।
‘সরি’ বলে রক্ষা পেলেন
বিইআরসি চেয়ারম্যান
এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাসের শেয়ারের বর্তমান মূল্য ও লভ্যাংশের বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মোস্তাক সাদেক ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চেয়ারম্যান এআর খান।
এ সময় বিইআরসি চেয়ারম্যান শেয়ারহোল্ডারদের ‘তথাকথিত’ বললে পরিস্থিতি তার প্রতিকূলে চলে যায়। উপস্থিত শেয়ারহোল্ডাররা তাকে ‘শব্দটি’ প্রত্যাহার করতে বলে শেষতক ‘সরি’ বলে রক্ষা পান বিইআরসি চেয়ারম্যান।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ভবনে সোমবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণশুনানির দ্বিতীয় দিনে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি কালে এ ঘটনা ঘটে।
এতে বিইআরসি চেয়ারম্যান এআর খান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সদস্য মাকসুদুল হক, রহমান মোর্শেদ।
সকালে গণশুনানি শুরুর পর দুপুর ১টা ২০ মিনিটে তিতাস গ্যাসের পক্ষে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব উত্থাপন শেষে ভোক্তা ও বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের পক্ষ থেকে জেরা চলছিল।
একপর্যায়ে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মোস্তাক সাদেক তিতাস গ্যাসের শেয়ারের আগের ও বর্তমান মূল্যের পার্থক্যের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আমরা যে শেয়ার সাড়ে ৩০০ টাকায় কিনেছিলাম সে শেয়ার এখন ৪০ টাকা। এসব কারণে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারী পথে বসতে শুরু করেছেন। শেয়ারবাজ?ারে বড় ক্ষতি হয়েছে।’
এ সময় বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা কার কথায় শেয়ার কিনেছেন।’ জবাবে মোস্তাক সাদেক বলেন, যেহেতু বাজারে লিস্টেড হয়েছে সেহেতু শেয়ার কিনতে কারো অনুমতি প্রয়োজন হয় না।
পাল্টা উত্তরে চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগকারীরা এখান থেকে কারি কারি টাকা তুলে নিয়ে চলে যান। প্রসঙ্গ শেষ না হতেই কথা ক?াটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন উপস্থিত শেয়ারহোল্ডার সংশ্লিষ্টরা।
একপর্যায়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা একটি ওয়ার্কশপ করেন। এটি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির শুনানি। শেয়ারের বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনার কিছু নেই। আপনারা রাউন্ড টেবিল করেন, সেখানে আলোচনা করেন।’
এ সময় চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা ‘তথাকথিত’ শেয়ারহোল্ডার। এ কথা বলার পর উপস্থিত শেয়ারহোল্ডাররা হৈচৈ শুরু করেন। সবাই চেয়ারম্যানকে ‘শব্দটি’ প্রত্যাহার করতে বলেন। এভাবে প্রায় ৮-১০ মিনিট হৈচৈ চলে।
অবস্থা বেগতিক দেখে একপর্যায়ে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসলে আমি আপনাদের ‘তথাকথিত’ বলিনি। বলেছি সেইসব বিদেশি বিনিয়োগকারীদের, যারা এখান থেকে টাকা তুলে নিয়ে যায়।’
কিন্তু ‘শব্দটি’ প্রত্যাহার না করায় তখনো শেয়ারহোল্ডাররা চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকেন। অবশেষে তিনি ‘সরি’ বললে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি গত বছর মাত্র ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। যদিও আগের বছর লভ্যাংশের পরিমাণ ছিল ৩৫ শতাংশ। কথা কাটাকাটির সময় লভ্যাংশের বিষয়টিও উঠে আসে