Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

20খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১০ আগস্ট ২০১৬: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যশোরের প্রাক্তন এমপি সাখাওয়াত হোসেনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া মামলার অপর সাত আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়ছে।

বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যর বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। গতকাল রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল।
সাখাওয়াতসহ আটজনের বিরুদ্ধে আনিত পাঁচটি অভিযোগের সবগুলোই প্রমাণিত হয়।
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মো. ইব্রাহিম হোসেন (৬০), বিল্লাল হোসেন, শেখ মোহাম্মদ মুজিবর রহমান (৬১), মো. আ. আজিজ সরদার (৬৫), আ. আজিজ সরদার (৬৬), কাজী ওহিদুল ইসলাম (৬১), আব্দুল খালেক মোড়ল (৬৮)।
এর আগে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৪ জুলাই ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। পরে মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) মামলাটি কার্যতালিকায় আসলে তাদের বিরুদ্ধে রায়ের এই নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল।
আদালতে সাখাওয়াতের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। পলাতক আসামিদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও রেজিয়া সুলতানা চমন।
চলতি বছর ৯ ফেব্র“য়ারি এই মামলায় প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউশনের আনা ১৭ জন সাক্ষী তদের জবানবন্দি পেশ করেন। অপরদিকে আসামি পক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী ছিল না।
সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে যশোরে একাধিক মামলা করা হয়। পরে ওই সব মামলা ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ১ এপ্রিল সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে মামলা তদন্ত করার জন্য নথিভুক্ত হয়। ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খান।
সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেনকে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয়। ২০১৫ সালের ১৪ জুন তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫ অভিযোগ আনে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। মামলায় প্রাথমিকভাবে ১২ জন আসামি থাকলেও বাকি তিনজনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় আদালত।
আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল এবং ২৩ ডিসেম্বর এমপি সাখাওয়াতসহ এই ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ৯ ফেব্র“য়ারি সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। গত ১৪ জুলাই উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে ট্রাইব্যুনাল। ৯ জনের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেও পরে একজন মারা যাওয়ায় ৮ জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হচ্ছে।
একনজরে সাখাওয়াত : জামায়াতের হয়ে ১৯৯১ সালে যশোর-৬ আসন থেকে সাখাওয়াত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু মেয়াদপূর্তির আগেই জামায়াত ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারির নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন তিনি। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে নির্বাচন করে পরাজিত হন সাখাওয়াত।
সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ২০০১ সালে বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন সাখাওয়াত। তখন বিএনপি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে। এরপর তিনি এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।
গত সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ আসন থেকে তিনি জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেলেও নির্বাচিত হতে পারেননি। বর্তমানে তিনি জাতীয় পার্টির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক।