Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

63খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১০ আগস্ট ২০১৬: মতো জঙ্গিদমনের যুদ্ধেও বীরপ্রতীক ওডারল্যান্ডের মতো বিদেশীরা আমাদের সাথে রয়েছে, বলেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘বীরপ্রতীক ওডারল্যান্ড’ প্রামাণ্যচিত্রের প্রিমিয়ার শো উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধে রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত একমাত্র বিদেশী, ওলন্দাজ-অস্ট্রেলীয় নাগরিক ওডারল্যান্ড স্মরণে মাহমুদুর রহমান বাবু পরিচালিত এ প্রামাণ্যচিত্রটি প্রযোজনা করেছেন বাংলাদেশী নাগরিক সি আর প্লাসিড এবং জাপানী নাগরিক হরিইকে নাওয়া।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিরাও পাক-হানাদার বাহিনীর মতো দেশের ওপর তাদেও মনগড়া ব্যবস্থা চাপাতে চায়, তাদের মতোই দেশ দখল করতে চায়। কিন্তু পাক-হানাদারদের মতো জঙ্গিরাও হারবে। আর বিশ্ববাসী যেমন মুক্তিযুদ্ধে আমাদের পাশে ছিল, জঙ্গিদমন যুদ্ধেও তেমনই সাথে রয়েছে।’

এসময় ইতিহাসে জঙ্গি-সন্ত্রাসী ঘৃণ্য তৎপরতার দিকে দৃষ্টিপাত করে মুক্তিযোদ্ধা ইনু বলেন, ‘পঁচাত্তরেও পাক-হানাদারদের মতো বিপথগামীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশ ও জাতির ইতিহাসকে দলিত-মথিত করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারাই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।’

‘বীরপ্রতীক ওডারল্যান্ড’ প্রামাণ্যচিত্রটির অন্যতম প্রযোজক সি আর প্লাসিডের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘এ প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে তারা ইতিহাসকে সামনে এনেছেন, সার্বজনীন সত্যকে সামনে এনেছেন, তাদের প্রতি সত্যপ্রিয় সকলের অভিনন্দন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আআমস আরেফিন সিদ্দিকী, সাবেক রাষ্ট্রদূত ডঃ একেএম আব্দুল মোমেন এবং লেঃ জেনারেল (অবঃ) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, বিএফইউজে সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, পিএসসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব হোসেন ও সাংবাদিক রাজু আলীম বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

১৯১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর হল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডাম শহরে জন্মগ্রহণকারী উইলিয়াম আব্রাহাম সাইমন ওডারল্যান্ড (ডরষরধস অনৎধযধস ঝরসড়হ ঙঁফবৎষধহফ) ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সক্রিয় একজন সামরিক কমান্ডো অফিসার। বাটা স্যু কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নেদারল্যান্ডস থেকে ১৯৭০ সালের শেষ দিকে তিনি ঢাকায় আসেন। এবং বাংলাদেশেকে ভালোবেসে ২ নম্বর সেক্টরের গণবাহিনীর সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে চতুর্থ সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব বীর প্রতীক প্রদান করে। ওডারল্যান্ডই একমাত্র বিদেশী যিনি এই রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।

১৯৯৮ সালের ৭ মার্চ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে ওডারল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি। তিনি বীর প্রতীক পদকের সম্মানী ১০,০০০ টাকা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে দান করে দেন।

ওডারল্যান্ড তার চাকুরীস্থল বাংলাদেশের বাটা স্যু কোম্পানি থেকে ১৯৭৮ সালে অবসর নিয়ে তার পিতার দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ফেরত যান। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থের এক হাসপাতালে ২০০১ সালের ১৮ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে নামের সঙ্গে বীর প্রতীক খেতাবটি লিখতেন তিনি।

বাংলাদেশের প্রতি অপরিমেয় ভালবাসার জন্য বাঙ্গালী জাতির কাছে তিনি বিশেষভাবে সম্মানিত ও স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে।