খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট ২০১৬: মোস্তাক আহমেদ মনির, জামালপুর: অবশেষে টানা ১২ দিনের অভিযানে উদ্ধার হলো বানের ¯্রােতে ভেসে আসা ভারতীয় বুনোহাতি। টানা ৪৩ দিন পানিতে অবস্থান করা হাতিটিকে বৃহষ্পতিবার দুপুরে বাগে আনতে সক্ষম হয় বন বিভাগের উর্দ্ধতন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কাজ করা উদ্ধারকর্মীরা। বর্তমানে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের কয়ড়া গ্রামে ওই হাতিকে মোটা গাছের সাথে চার পায়ে লোহার শিকল ও প্লাস্টিকের শক্ত দড়ি দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে।
উদ্ধার টিমের সাথে থাকা স্থানীয় ফরেস্টার খলিলুর রহমান জানান, বেশ কয়েকবার হাতি উদ্ধার অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পর বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ড. তপন কুমার দে’র নেতৃত্বে বৃহষ্পতিবার সকাল থেকে বন বিভাগের বিশেষজ্ঞ দল পুনরায় অভিযান শুরু করে। দুপুরে হাতিটি সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের কয়ড়া গ্রামে শুকনো বিলের পাশে রাস্তার কাছাকাটি আসে। এ সময় উদ্ধারকর্মীরা তার পিছু নেয়। দুপুর ১.৫৮টায় উদ্ধার টিমের সদস্য কক্সবাজারের ডুলাহাযরা সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান হাতিটিকে লক্ষ্য করে অত্যাধুনিক ‘ট্যাঙ্কুলাইজার গান’ দিয়ে ‘মেটাল ডার্ট’ (চেতনানাশক ইনজেকশন) নিক্ষেপ করেন। এতে ‘মেটাল ডার্ট’টি ডান পায়ের উরুতে লাগলে হাতিটি দৌড়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে কয়ড়া গ্রামের প্রাক্তন ইউপি সদস্য নুরুল ইসলামের বাড়ির কাছাকাছি একটি পুকুরে পড়ে অচেতন হয়ে যায়। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বন বিভাগের বিশেষজ্ঞ দল, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা হাতির চার পায়ে লোহার শিকল ও শক্ত দড়ি বেধে টেনে ডাঙায় তোলে।
জানা গেছে, গত বুধবার সকাল ১০টার দিকে কামরাবাদ ইউনিয়নের সৈয়দপুর এলাকায় ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ‘ট্যাঙ্কুলাইজার গান’ দিয়ে ‘প্লাস্টিক ডার্ট’র চেতনানাশক ইনজেকশন নিক্ষেপ করেন। কিন্তু হাতির চামড়া ভেদ করে মাংশে প্রবেশ না করে ‘প্লাস্টিক ডার্ট’র সুচটি বেঁকে যায়। পরে উর্দ্ধতন বন বিভাগকে খবর দিয়ে অত্যাধুনিক ‘ট্যাঙ্কুলাইজার গান’ ও ‘মেটাল ডার্ট’ এনে হাতিটি উদ্ধার করা হয়।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাতিটি অর্ধচেতন অবস্থায় মোটা গাছের সাথে শিকল ও দড়ি দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে। হাতিটিকে এক নজর দেখার জন্য হাজার হাজার উৎসুক জনতা ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়।
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষনের অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ড. তপন কুমার দে জানান, হাতিটি সংরক্ষনের জন্য প্রযুক্তিগতভাবে স্থানান্তর করতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। এ কয়েকদিন হাতিকে বেধে রেখে চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।
সরিষাবাড়ী থানার ওসি বিল্লাল উদ্দিন বলেন, বন বিভাগের উদ্ধার টিমের সাথে পুলিশ আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করায় হাতিটি উদ্ধার সম্পন্ন হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েদ এজেড মোরশেদ আলী বলেন, হাতি উদ্ধার কাজে বন বিভাগকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।
সুত্র জানায়, গত ২৮ জুন উজানের ঢলে ভারতীয় একটি বুনো হাতি বাংলাদেশের সীমান্তের ঢুকে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে কুড়িগ্রাম, বগুড়া, ও সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ২৮ জুলাই মধ্যরাত থেকে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার চরাঞ্চলে এসে বন্যার পানিতে অবস্থান নেয়।