Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

53খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট ২০১৬: নৌ-প্রোটকল চুক্তির আওতায় ব্রহ্মপুত্র নদ ও কুশিয়ারা নদীর নাব্যতা রক্ষার নামে ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ বছরে দশ কোটি টাকা নিলেও এই খাতের একটি টাকাও খরচ করছে না বি আইডব্লিউটিএ। এর ফলে ব্রহ্মপুত্র নদ ও কুশিয়ারা নদী নৌ চলাচলের উপযোগিতা হারাচ্ছে। তাই বর্ষা মৌসুমে দু-একটি ভারতীয় জাহাজ চলাচল করতে পারলেও নাব্যতা সঙ্কটের কারণে শুষ্ক মৌসুমে কোনও জাহাজ চলাচল করতে পারছে না। যে কারণে প্রতিবছর নৌ-প্রোটোকল চুক্তির আওতায় এ খাতে ভারত যে বিশাল অঙ্কের অর্থ দিচ্ছে তার পুরোটাই ক্ষতি হচ্ছে।

এ নদীপথ দুটি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় গত ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে কলকাতার হলদিয়া বন্দর থেকে মাত্র ১১টি জাহাজ আসামের পা-ু যায়। কিন্তু আসামের করিমগঞ্জে একটি জাহাজও যায়নি। আর এ নৌপথ দুটি সচল থাকলে বাংলাদেশের নদীপথ ব্যবহার করেই কম করছে আসামের পা-ু ও করিমগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে সেভেন সিস্টার্সে মালামাল পরিবহন করতে পারত ভারত।
এ পথ দুটি সচল না থাকায় নৌপথে মালামাল বাংলাদেশের আশুগঞ্জ কন্টেনার টার্মিনালে টান্সশিপমেন্ট করে সেখান থেকে সড়কপথে ভারতের ত্রিপুরার আগরতলা মালামাল পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, আশুগঞ্জ পোর্ট ব্যবহার করে মালামাল পরিবহন করলে সাত রাজ্যের মধ্যে ত্রিপুরার পূর্ব অংশ ও মিজোরাম কাছে হয়। কিন্তু আশুগঞ্জ কন্টেনার টার্মিনাল ব্যবহার করে ত্রিপুরায় মালামাল নেওয়ার জন্য একবার মালামাল আনলোড করে ট্রাক বা লরিতে তুলতে নির্ধারিত হারে অর্থ দিতে হবে। আর শুল্ক দফতর,বি আইডব্লিউটিএ ও বাংলাদেশ সড়ক বিভাগকে প্রতি টন ১৯২ টাকা ২২ পয়সা দিতে হবে।
এছাড়া বাংলাদেশের গাবখান চ্যানেল, মংলা-ঘুষিয়াখালি চ্যানেল ব্যবহারের জন্য বি আইডব্লিউটিএকে টোল ও বাংলাদেশের জল সীমায় জাহাজ চলাচলের জন্য নির্ধারিত চার্জ দিতে হবে। শুধু তাই নয়, আশুগঞ্জ কন্টেনার টার্মিনালকে আধুনিকীকরণ করার জন্য বাংলাদেশ সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে লাইন অব কেডিটের (এলওসি) আওতায় বাংলাদেশি ৪৬১ কোটি টাকা ভারতের কাছে দাবি করেছে। এছাড়া আশুগঞ্জ থেকে আগরতলা পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন ও চার লেনে উন্নীত করার জন্যও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে ঋণ সহায়তা চাওয়া হচ্ছে বলে বাংলাদেমের সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয় থেকে জানা গেছে।
জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরপরই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উভয় দেশের নদী পথ ব্যবহার করে মালামাল পরিবহনের জন্য পাক-ভারত আলোচনা হয়। কিন্তু ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ হওয়ায় সে আলোচনা থেমে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের পহেলা নভেম্বর ২৫ হাজার (বাংলাদেশী) টাকা নির্ধার করে বাংলাদেশের নদী পথ ব্যবহার করে মালামাল পরিবহনের জন্য ভারত-বাংলাদেশ নৌ-প্রোটকল চুক্তি স্বাক্ষর হয়। পর্যায়ক্রমে তা বেড়ে ২০০৯ সালে ১০ কোটি (বাংলাদেশী) টাকা নির্ধারন হয়। আর ২০১৪ সালে এ নদী পথ দুটি সচল করার জন্য ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমিটি ভারতের ধুবরা বা পান্ডুয়া বন্দর নৌচলাচল ঠিক রাখার জন্য বাংলাদেশের ব্রক্ষ্মপুত্র নদের অংশে ৩৬ লাখ ঘনমিটার ও করিমগঞ্জ বন্দরে মালামাল নেয়ার জন্য বাংলাদেশের অংশের কুশিয়ারা নদীর ১৫ লাখ ড্রেজিং করার সিদ্ধাঅ্ হয়।
এ সময় যৌথ কমিটি ব্রক্ষ্মপুত্র নদ ও কুশিয়ারা উভয় নদীতে সকল সময় ২.৫ টির নাব্যতা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের স্বদিচ্ছার অভাবের কারণে তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। শুধু তাই নয় নৌ-প্রোটোকলে চুক্তির আওতাধীন নদীসহ বাংলাদেশের নদ-নদীর নব্যতা ঠিক রাখার জন্য ড্রেজার কেনার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে ২০১১-২০১২ অর্থবছরে লাইন অব কেডিটের (এলওসি) আওতায় ২০০ কোটি রুটি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবে টেন্ডারের মাধ্যমে ভারতের কাছ থেকে ড্রেজার কেনার শর্ত দেওয়া হয়। ভারতের ড্রেজার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ব্যাপক সারা মিললেও বাংলাদেশের নৌপরিবহন মঅ্ী শাজাহান খানের ভারত বিদ্বেষী নীতি ও মন্ত্রীর পছন্দের বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলি শিপল্ডার্সকে ড্রেজার কেনার কাজ দেয়ার সুযোগ না থাকায় কয়েকবার টেআর করে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়।
তবে নদী গবেষক বাংলাদেশে নদী রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা মিহির কান্তি বিশ্বাস বলেন, ভারতের দেয়া ঋণে ড্রেজার না কিনতে পারার কারণ হচ্ছে শুধুমাত্র বাংলাদেশের নৌমন্ত্রীর ভারত বিরোধী নীতি ও তার নিজস্ব পছন্দের প্রতিষ্ঠাকে কাজ না দিতে পারা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান মুলত ভারতকে বাংলাদেশের কাছে নির্ভরশীল করে রাখতে চায়। আর সে জন্যই আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতকে জিম্মি করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু ভারতের বাংলাদেশের কাছে জিম্মি না হয়ে ব্রক্ষ্মপুত্র নদ ও কুশিয়ারা নদীর ক্যাইপটাল ড্রেজিং করে এই নৌরুট দুটি সচল করা দরকার।
মিহির বিশ্বাস বলেন, এ ক্যাপিটাল ড্রেজিং করাতে হবে ভারতের তত্ত্বধানে। না হলে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য কোন অর্থ দিলে তা বাংলাদেশের নদী রক্ষার দায়িত্বে থাকা বি আইডব্লিউটিএর অসাধু কর্মকর্তরা ও মন্ত্রী ড্রেজিং নাকরেই পুরো টাকা আত্মসাৎ করবে।
জানা গেছে ব্রিটিশ আমলে ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পর থেকে ইংরেজ শাসকেরা কলকাতা-ঢাকা-আসাম পথে ইঞ্জিনচালিত স্টিমার সার্ভিস চালু করেন। কলকাতার সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ সহজ করে তুলতে ব্রিটিশ মালিকানাধীন সম্মিলিত স্টিমার কোম্পানি (আইজিএ) ও রেল কোম্পানি মিলে আসাম ও গোয়ালন্দের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় স্টিমার সার্ভিস চালু করে। এছাড়া আসামের করিমগঞ্জ থেকে কলকাতা বন্দর পর্যন্ত আসাম বেঙ্গল স্টিমার সার্ভিস চালু করে। দেশ বিভাগের পর তা বন্ধ হয়ে যায়।
নৌ-প্রোটল চুক্তির আওতায় ভারতের কাছ থেকে টাকা নিলেও সে অর্থ এ খাতে খরচ না করার ব্যাপারে বাংলাদেশের নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের কাছে জানতে চাইলে,তিনি বলেন, নৌ-প্রোটোকলের অর্থ ড্রেজিংয়ে খরচ না হলেও ভারতের জাহাজ চলাচলের জন্যই খরচ করা হয়। তিনি বলেন, নৌ-প্রোটোকলের জন্য ভারত যে অর্থ দেয় তা খুবই সামাস্য। শিগগির ভারতের সঙ্গে বৈঠক করে প্রোটোকলের টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হবে।