Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

16খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১২ আগস্ট ২০১৬ : কাজী কামাল হোসেন,নওগাঁ : গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা এক সময় ছিল বেশ জনপ্রিয়। আবহমানকাল ধরে নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলায় বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে লাঠিখেলা। কিন্তু কালের বির্বতনে মানুষ ভুলতে বসেছে এ খেলা। বাংলার ঐতিহ্যের অংশ লাঠি খেলা নিয়ে মানুষের আগ্রহ আছে। কিন্তু লাঠি খেলার নতুন করে কোন সংগঠন বা দল তৈরি হচ্ছে না। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা। ঢোল আর লাঠির তালে তালে নাচা নাচি। অন্য দিকে প্রতিপক্ষের হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বনের প্রচেষ্টা সম্বলিত টান টান উত্তেজনার একটি খেলার নাম লাঠি খেলা। এ খেলা একটি ঐতিহ্যগত মার্শাল আর্ট, মূলত ঢাকের বাজনা, মার্শাল আর্ট আর লাঠি এই দুইয়ের সংমিশ্রন। লাঠি খেলা অনুশীলনকারীকে লাঠিয়াল বলা হয়। এই খেলার জন্য লাঠি সাড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা, তবে প্রায় তৈলাক্ত হয়। প্রত্যেক খেলোয়ার তাদের নিজ নিজ লাঠি দিয়ে রণকৌশল প্রদর্শন করে। শুধুমাত্র বলিষ্ঠ যুবকেরাই এই খেলায় অংশ নিতে পারে। কিন্তু বর্তমানে শিশু থেকে শুরু করে যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সের পুরুষেরাই লাঠি খেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। লাঠিখেলার আসরে লাঠির পাশাপাশি যন্ত্র হিসেবে ঢোলক, কনের্ট, ঝুমঝুমি ইত্যাদি ব্যবহৃত হয় এবং সঙ্গীতের পাশাপাশি চুড়ি নৃত্য দেখানো হয়। এ খেলা বিষয়ে উপজেলার হাতিয়াপাড়া গ্রামের হাসিবুল হাসান শান্তর সাথে কথা বললে তিনি জানান, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এ লাঠি খেলা আজ বিলুপ্ত প্রায়। আমাদের অঞ্চলে বিভিন্ন ধারনের লাঠিখেলা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম সড়কি খেলা, ফড়ে খেলা, ডাকাত খেলা, বানুটি খেলা, গ্রুপ যুদ্ধ, নরি বারী খেলা এবং দা খেলা ( ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপহাস যুদ্ধ) খেলা ইত্যাদি। গ্রামের সাধারণ মানুষেরা তাদের নৈমিত্তিক জীবনের উৎসব-বাংলা বষৃ বরণ, বিবাহ, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি উপলক্ষে লাঠি খেলার আয়োজন করে থাকেন। এক্ষেত্রে সাধারণত কোনও লাঠিয়াল দলকে ভাড়া করে আনা হয়। বিগত দশকেও গ্রামাঞ্চলের লাঠি খেলা বেশ আনন্দের খোরাক জুগিয়েছে। সাধারণ মানুষের হৃদয়ে ঠাই করে নিয়েছিল এ খেলাটি। দুর-দুরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসত এ খেলা দেখার জন্য। বিভিন্ন জায়গায় মাঝে মধ্যে এ লাঠিখেলা দেখা গেলেও তা খুবই নিমিত। এ খেলাটি দিন দিন বিলুপ্তি হওয়ার কারণে এর খেলোয়ার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে না কোন নতুন খেলোয়ার। আর পুরনো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা অর্থাভাবে প্রসার করতে পারছেন না এ খেলা। নির্মল বিনোদনের খোরাক আর গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এ লাঠি খেলাটি আর চোখে পড়েনা বললেই চলে।
এ ব্যাপারে আত্রাই মোল্লা আজাদ মেমোরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সমাজ কর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ লোকমান হোসেন জানান, মানুষ যখন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে হারিয়ে ফেলে তখন সমাজে অপসংস্কৃতি ঢুকে পড়ে। এটা আমাদের দেশেও ঘটছে। আমাদের ছেলে মেয়েরা দেশি খেলাধুলা ভুলতে বসেছে। আমরা দিন দিন অপসংস্কৃতির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছি। লাঠিখেলা আমাদের দেশি ঐতিহ্যপূর্ণ একটি খেলা যা আজ বিলুপ্ত প্রায়। এ ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার এ খেলাগুলো চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার বলেও তিনি মনেকরেন।#