খোলা বাজার২৪, রবিবার, ১৪ আগস্ট ২০১৬: বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেশটির লোকসভায় আটকে গেছে। লোকসভার চলতি অধিবেশনে এই সংক্রান্ত বিল পাস হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কংগ্রেসসহ দলগুলোর বিরোধিতায় প্রস্তাবটি তুলতেই পারেনি নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার।
আগামী ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ভারতে চলে যাওয়া প্রায় ৩০ হাজার হিন্দু শরণার্থীকে নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল মোদি সরকারের।
প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে চলে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন ও পার্সিদের অনুপ্রবেশকারী বলা যাবে না। তারা শরণার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ভারতে বসবাস করায় দেশের পূর্ণ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ভারতের লোকসভার সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কেন্দ্রীয় সংসদবিষয়কমন্ত্রী অনন্ত কুমার বলেন, এই অধিবেশনেই ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং নাগরিকত্ব আইন সংশোধন বিল পাস করতে চান। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসসহ বাম ও তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরা এতে আপত্তি জানায়।
প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সংসদের রাজ্যসভার কক্ষে কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ বলেন, এই ধরনের আইন কোনোভাবেই ভারতে কার্যকর হতে পারে না। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কোনো মুসলিম শরণার্থী যদি ভারতে এসে আশ্রয় নিতে চান তাহলে কেন তাঁকে বঞ্চিত করা হবে? এ ধরনের আইন ধর্মীয় ক্ষেত্রে বিভাজনের প্রমাণ দেয়।
ভারতের লোকসভায় কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির সংখ্যগরিষ্ঠতা হলেও রাজ্যসভায় সংখ্যালঘু বিজেপি। ফলে, কোনো বিলের ক্ষেত্রে লোকসভায় পাস হলেও রাজ্যসভায় বিরোধীদের সম্মতি না পেলে সেই প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত আইনে পরিণত করা যাবে না।
বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে যাওয়া হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রস্তাব বিলের পাশাপাশি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তান ও বাংলাদেশিদের সম্পত্তি শত্রু আইনের মাধ্যমে অধিগ্রহণের যে প্রস্তাব পাস করাতে চেয়েছিল, সেটিও করা যাচ্ছে না।
প্রস্তাবটি আবার বিবেচনার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার চলতি অধিবেশনে পণ্য সেবা প্রস্তাব পাস করানোর জন্য সর্বসম্মতিকে গুরুত্ব দিতে চাইছে, সেখানে দাঁড়িয়ে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের মতো বিতর্কিত প্রস্তাব তুলে আপাতত বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতাকে নষ্ট করতে চাইছে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।