ন্যায়নীতি ও আদর্শের কারণে তিনি দেশে এবং বিদেশে আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বেগম খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করেন।
খালেদা জিয়ার বাবা ইস্কান্দার মজুমদার একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ছিলেন। মা বেগম তৈয়বা মজুমদার ছিলেন দিনাজপুরের চন্দন বাড়ির মেয়ে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে খালেদা জিয়া ছিলেন তৃতীয়।
১৯৬০ সালের আগস্টে বগুড়ার ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন এবং ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ইন্তেকাল করেছেন। তারেক রহমানের ঘরে তার এক নাতনী জাইমা ও আরাফাত রহমানের ঘরে জাফিয়া ও জাহিয়া নামে দুই নাতনী রয়েছে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে দেশী-বিদেশী চক্রান্তে বিপথগামী সৈন্যদের হাতে শাহাদাতবরণ করেন। এর পরপরই জিয়াউর রহমানের গড়া বিএনপির রাজনীতিতে আগমন ঘটে খালেদা জিয়ার। দলের নেতাকর্মীদের দাবির মুখে ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হন। ৮৩ সালের মার্চে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং ৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৮৪ সালের ১ মে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী দীর্ঘ আপসহীন আন্দোলনের পর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হওয়ার পর ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এ পর্যন্ত তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন খালেদা জিয়া। ১৯৯৩ সালে তিনি সাকের্র প্রথম মহিলা চেয়ারপারসন হন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট নির্বাচনে জয়লাভের পর তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। ওয়ান-ইলেভেনের পর মইন-ফখরুদ্দীন সরকার ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তাকে কারাবন্দী করে। কারাগারে থাকা অবস্থায় তার অনড় মনোভাবের কারণে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় ওই সরকার। পরে তারা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি কাঙিক্ষত ফল না পেয়ে সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়। সেই থেকে সরকারি দলের দমন-পীড়ন ও মামলা-হামলার বৃত্তে বন্দী দেশের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
দেশের চলমান সংকটময় পরিস্থিতির কারণে খালেদা জিয়া এ বছর জন্মদিন পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চেয়ারপারসনের কার্যালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। একইসঙ্গে সারাদেশের বিএনপি নেতাকর্মীদেরও একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জাতীয় সংকটের কারণে জন্মদিনে কোনো আনুষ্ঠানিকতা করছেন না চেয়ারপারসন। যে কোনো আনন্দদায়ক কর্মসূচি থেকে বিএনপি এখন বিরত থাকবে।
আজ সোমবার খালেদা জিয়া ৭১ এ পা দিচ্ছেন। সূত্র জানায়, বরাবর খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের আনা কেক কেটে নিজের জন্মদিন পালন করতেন। নেতাকর্মীদের থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করতেন। কাটা কেক এতিমখানাসহ দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন। তবে এবার দেশের বর্তমান সংকট, বন্যা পরিস্থিতি মিলিয়ে তিনি নিজের জন্মদিন উদযাপন বাতিল করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, উত্তরাঞ্চল-মধ্যাঞ্চলে ব্যাপক বন্যায় মানুষের দুর্দশা, সর্বত্র গুম-খুনে মানুষের লাশ আর লাশ, দলের নেতা-কর্মীদের ওপর গ্রেপ্তার-নিপীড়ন-নির্যাতনের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই ম্যাডামের জন্মদিনে এবার আমরা কেক কাটার অনুষ্ঠান করছি না।