Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

16খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৫ আগস্ট ২০১৬: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, এ দেশের মাটিতে কোনো জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ঠাঁই হবে না। জঙ্গিবাদকে সমূলে উপড়ে ফেলে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা হবে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ দেশের মাটিতে কোনো জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ঠাঁই হবে না। জঙ্গিবাদকে সমূলে উপড়ে ফেলে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত করবো- এই হোক জাতীয় শোক দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি এখনও দেশ ও জাতির অব্যাহত অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে বিভিন্ন অপকৌশলে লিপ্ত রয়েছে। তারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করার আহবান জানিয়ে বলেন, তার ত্যাগ ও তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ ধারণ করে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
তিনি বলেন, ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তার স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। আসুন ,আমরা জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করি। তার ত্যাগ ও তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ ধারণ করে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করি। আমরা অবশ্যই জয়ী হব।
তিনি বলেন, ঘৃণ্য ঘাতকরা এই দিনে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, পুত্র ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, ১০ বছরের শিশু স্কুলছাত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, কৃষকনেতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বেবী সেরনিয়াবাত, সুকান্ত বাবু, আরিফ, আব্দুল নঈম খান রিন্টুসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করে।
বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিলও নিহত হন। ঘাতকদের কামানের গোলার আঘাতে মোহাম্মদপুরে একটি পরিবারের বেশ কয়েকজন হতাহত হন এদিন। প্রধানমন্ত্রী মহান আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে জাতির পিতাসহ সেদিনের সকল শহিদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী, সাহসী এবং ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। বাঙালি পেয়েছে স্বাধীন রাষ্ট্র, নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সংগীত।
তিনি বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু যখন সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী চক্র জাতির পিতাকে হত্যা করে তারা বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস চালায়। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে ফেলাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য।
শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের পর থেকেই এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত স্বাধীনতাবিরোধী চক্র হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়।
প্রধান মন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে। মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করে। দূতাবাসে চাকুরি দেয়। স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের নাগরিকত্ব দেয়। রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার করে। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে পুনর্বাসিত করে। পরবর্তী বিএনপি-জামাত সরকারও একই পথ অনুসরণ করে।
বিএনপি-জামাত জোট সরকারের খুন, হত্যা, দুর্নীতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশের জনগণ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে পূর্ববর্তী সরকারগুলোর রেখে যাওয়া অচলাবস্থা এবং বিশ্বমন্দা কাটিয়ে আমরা দেশকে দৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে কাজ শুরু করি – বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা তার সরকারের আমলে দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে বলেন, ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত সাড়ে সাত বছরে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, গ্রামীণ উন্নয়ন, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, বৈদেশিক সম্পর্কসহ প্রতিটি সেক্টরে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করা হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৬৬ ডলার। রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্য আয়েরদেশ।
তিনি আশা করেন, ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতে সক্ষম হবে।
সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার বিচারের রায় কার্যকর এবং জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধীদের বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচার কাজ চলছে। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে সমুন্নত রেখেছি।’