Fri. Mar 14th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

 

morel
খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট ২০১৬: নিউইয়র্কে বাংলাদেশি ইমাম আকুনজি ও তার মুসল্লি তারা মিয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহভাজন খুনিকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে নিউইয়র্ক পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ। সন্দেহভাজন ওই সন্ত্রাসীর নাম অস্কার মোরেল (৩৫)।
রবিবার গভীর রাতে তাকে ব্রুকলিনে নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করা হয় বলে নিউইয়র্ক টাইমসহ মূলধারার সবকটি মিডিয়া নিশ্চিত করেছে।

তার ব্যবহৃত অস্ত্রটিও তার বাসার আঙ্গিনা থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। খুন করে পালিয়ে যাওার সময় তার প্রাইভেটকার একজন সাইকেল আরোহীকে আঘাত করে। ওই সাইকেল আরোহী সন্ত্রাসীর গাড়ীর নাম্বার টুকে রেখে পুলিশকে অবহিত করে। সেই সূত্র ধরেই তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

সন্ত্রাসী অস্কার মোরেলকে একজন পরিপক্ক খুনি হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। কারণ সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, খুব কাছ থেকে গুলি করে দিনের আলোতে খুবই ধীরস্থীর গতিতে এলাকা ছাড়ে ওই খুনি। সোমবার সন্ধ্যায় অস্কার মোরলকে দুই বাংলাদেশীকে হত্যায় অভিযুক্ত করে আদালতে হাজির করে নিউইয়র্ক পুলিশ। পুলিশের এই তরিৎ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন মাওলানা আলা উদ্দিন আকুনজির পুত্র নইম উদ্দিন আকুনজি।

কান্না জড়িত কণ্ঠে গণমাধ্যমকে বলেন, শুধু খুনিকে ধরলেই হবে না কেন আমার শান্তি প্রিয় বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। কারা এর পেছনে জড়িত তা প্রকাশ করতে হবে।

এদিকে ইমাম আকুনজি ও তারা মিয়ার জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে সোমবার স্থানীয় সময় আড়াইটায় নিউইয়র্কের গ্রান্ট এভিনিউ মিউনিসিপল পার্কে। তপ্ত রৌদ্র উপেক্ষা করে এতে হাজির হন যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম কমিউনিটির নেতা ও বিভিন্ন মসজিদের খতিবসহ প্রায় ২০ হাজার মুসলমান। জানাজা নামাজ পরিণত হয় প্রতিবাদ সমাবেশে। ব্যানার ফেস্টুনে দাবি উঠে ‘আমরা এখনই সুবিচার চাই’।

শোক জানাতে জানাজা নামাজ মাঠে ছুটে আসেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র ডি ব্লাসিওসহ নিউইয়র্ক স্টেইটের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। জানাজা নামাজ পূর্ব সমাবেশটি কাভার করতে নিউ ইয়র্কের মূল ধারার শতাধিক গণমাধ্যম কর্মীরা হাজির হন। ১০টির অধিক টিভি চ্যানেল জানাজা নামাজপূর্ব সমাবেশ ও নামাজ পরবর্তী বিক্ষোভ সরাসরি সম্প্রচার করে।

এসময় মেয়র ডি ব্লাসিও বলেন, আমি নিউইয়র্ক সিটির সাড়ে আট মিলিয়ন নাগরিকের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবার, মসজিদের মুসল্লি ও প্রতিবেশিদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকান পার্টির কিছু নেতৃবৃন্দের মুসলিম বিরোধী বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে মেয়র ব্লাসিও এসময় বলেন, আমরা জানি সারা দেশ জুড়ে ঘৃণার বমি ছড়াতে কারা আওয়াজ তুলেছে, কারা আমাদের মাঝে বিভাজন তৈরি করবার চেষ্টা করছে। কারা এক আমেরিকানকে অপর আমেরিকানের পেছনে লাগানোর চেষ্টা করছে। যারা আমাদের মাঝে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করছে তাদের কথা আমরা শুনতে যাচ্ছি না এবং তারা এই ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে যে উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছে তা আর আমরা তাদেরকে করার সুযোগ দিতে পারি না। আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, যেই এই ধরণের কাজ যেই করুক না কেন তাকে বিচারের আওতায় আসতেই হবে।

সিটি মেয়র আরো বলেন, আমরা শুধু এই ঘটনায় জড়িত খুনিকেই চিহ্নিতই করতে চাই না বরং এ ঘটনার পেছনের কারণ খুঁজে বের করে জনগণকে জানাতে চাই।

এসময় সিটি মেয়র ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সামনে বাংলাদেশি কমিউনিটির পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি পেশ করেন মুসলিম কমিউনিটির নেতা আনোয়ার হোসেন। এসবের মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত না করে এটিকে একটি ‘হেইট ক্রাইম’ হিসেবে বিবেচনা করা। নিউইয়র্কের প্রতিটি মসজিদ আঙ্গিনায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ নিরাপত্তা জোরদার করা। সর্বোপরি যে সড়কটিতে হত্যাকোণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সে সড়কটি মাওলানা আলা উদ্দিন আকুনজির নামে নামকরণ করা।

সমাবেশ শেষে জানাজা নামাজ পড়ান জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের ইমাম মাওলানা আবু জাফর বেগ। এর পরই শুরু হয় বিক্ষোভ। ওজনপার্কের পুরো এলাকার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে ঘটনাস্থলে শ্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে যান মুসল্লিরা। মঙ্গলবার দুই বাংলাদেশির লাশ দেশে পাঠানোর কথা রয়েছে।