Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট ২০১৬: ঈশ্বরদী ,পাবনা: ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের গ্রীণ সিটি আবাসনের ২৮টি ২০ তলা ভবন নির্মানের মধ্যে ৩টি ভবনের পাইলিং কাজের শুরুতেই ওই এলাকার অসংখ্য আবাসিক বাড়ি-ঘরের মেঝে, দেওয়াল ও ছাদে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে উপজেলার দিয়াড় সাহাপুর গ্রামের অন্ততঃ ১৯টি বাড়ির বাসিন্দারা তাদের বাড়িতে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে বসবাস করছেন। খবর পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার ওই এলাকায় সরেজমিন গিয়ে বিভিন্ন বাড়ির দেওয়াল, ছাদ মেঝে ও কার্নিশে অসংখ্য ছোট বড় ফাটল দেখা গেছে।
সাহাপুর ইউনিয়নের দিয়াড় সাহাপুরের নতুনহাট এলাকায় রূপপুর প্রকল্পের সাইট অফিসে প্রকল্পের নিজস্ব জমিতে গত ১ মাস থেকে বহুতল ভবন নির্মানের জন্য পাইলিং এর কাজ শুরু হয়েছে। ৩টি ভবনের মধ্যে ১টি ভবনের পাইলিং এর কাজ করছে সাজিন এন্টারপ্রাইজ নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, অন্য ভবন ২টির কাজ করছে মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিঃ। গ্রীন সিটি আবাসন এলাকাটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দুরে।
আতঙ্কিত এলাবাসীরা জানান, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত যতক্ষণ পাইলিং চলে ততক্ষণ ভূমিকম্পের মত বাড়ি-ঘর, আসবাবপত্র, বিছানাসহ সবকিছু কাঁপতে থাকে। মেশিনের বিকট শব্দে কোন কথা-বার্তা বলা ও শোনা যায়না, মোবাইলে কথা বলতে হলে বাড়ি থেকে দুরে গিয়ে কথা বলতে হয়, নইলে কোন কিছুই বোঝা যায়না।
দিয়াড় সাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম জানান, তার বাড়ির ১০টি কক্ষের সবগুলো দেওয়াল, ছাদ ও মেঝের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে, প্রতিদিন এই ফাটলের পরিমান বাড়ছে এবং নতুন নতুন স্থানে ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে। আতঙ্কের মধ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়িতে বসবাস করছেন তারা। এ অবস্থায় আব্দুস সালামসহ এলাকার বাসিন্দারা গণপূর্ত অধিদপ্তর রাজশাহী, ঢাকা, পাবনা জেলা প্রশাসক, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে প্রতিকার চেয়ে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে পাবনা জেলা প্রশাসনের মাসিক সভায় বিষয়টি উত্থাপিত হয় এবং গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ এবং নির্বাহী প্রকৌশলী খালেকুজ্জামান ওই এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন।
ভূক্তভোগি গৃহবধূ সেলিনা বেগম জানান, পাইলিং শুরু হলে যখন ঘরবাড়ি কাঁপতে থাকে তখন বাড়ির শিশুরা ভয়ে চিৎকার করে, কাঁদে, তারা লেখাপড়াও করতে পারেনা। প্রবাসী আরিফুল ইসলামের স্ত্রী কারুন্নাহার জানান, প্রতিদিন এলাকার অন্যান্য বাড়ির মত তাদের বাড়িও মাঝে মাঝে ঘন্টা ব্যাপি আবার কখনো থেমে থেমে ভূমিকম্পের মত কাঁপতে থাকে, বাড়ির অসংখ্য স্থানে ছোট-বড় ফাটল দেখা দেওয়ায় প্রচন্ড আতঙ্কিত হয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে বসবাস করছেন। যখন মেশিন চালু হয় তখন বাড়িতে বসবাস করা যায়না। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে সদ্য পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে আসা ছাত্র ফারকাদ সানজি ও স্থানীয় বাসিন্দা কুইন আলী জানান, তাদের বাড়ির বিভিন্ন স্থানে ২০-২৫টি ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, গ্রীনসিটি আবাসনের আশেপাশে প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিঃ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প প্রকৌশলী মশিউর রহমান রাসেল জানান, প্রতিটি পিলার দৈর্ঘ ৬০ ফুট এবং ওজন ৭ মেট্রিক টন। এধরনের পিলার পাইলিং করে মাটির ৬৫ ফুট নিচ পর্যন্ত পুঁতে ফেলা হবে তার পর মূল ভবনের কাজ শুরু হবে। তারা ডিজেল হ্যামার পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। ২০ জুলাই থেকে শুরু হয়ে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ২’শয়ের বেশি পিলার পোঁতা হয়েছে। অপর দিকে সাজিন এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প প্রকৌশলী আলম হোসেন জনি জানান, তারা ৩৭০ মেট্রিক টন ওজনের হাইড্রোলিক পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
রূপপুর প্রকল্পের সাইড ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন, অভিযোগ অনুযায়ী কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তা তিনি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।