Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

habigang-150x150

খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৭ আগস্ট ২০১৬:  হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল কাগাপাশা ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামটির নাম মাকালকান্দি। ১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট স্বাধীনতা যুদ্ধের এই দিনে গ্রামের ৪৪ জন নারীসহ ৭৮ জন নিরপরাধ সংখ্যালঘুকে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও বেয়নট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে পাকহানাদার বাহিনী। ঘাতকরা এতেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের পর নারীদের সম্ভ্রমহানী ঘটায়। পরে গ্রামবাসীর মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই ভয়াল দিনের স্মৃৃতি বুকে নিয়ে আজও নীরবে-নিঃভৃতে চোখের অশ্রু ফেলছেন স্বজনরা।
১৮ আগস্ট সকালে মাকালকান্দি গ্রামের চন্ডি মন্দিরে মনসা ও চন্ডিপুজার প্রস্ততি নিচ্ছিলেন পূজারীরা। এ সময় স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় ৪০ থেকে ৫০টি নৌকাযোগে পাকবাহিনী এসে গ্রামে হামলা চালায়।
পাক বাহিনী চন্ডি মন্দিরের সামনে দাঁড় করিয়ে তরনী দাশ, দীনেশ দাশ, ঠাকুর চান দাশ, মনোরঞ্জন দাশ, প্রভাসিনী বালা দাশ, চিত্রাঙ্গ বালা দাশ, সোহাগী বালা দাশসহ ৭৮ জনকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। এর মধ্যে ৪৪ জনই নারী।
হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় পাক বাহিনী লুটে নেয় তাদের কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দেয় অনেক বাড়ি ঘর। এতে জান-মাল, সহায়-সম্বল হারিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়েন। পাক-বাহিনীর হামলার পরও বেঁচে যাওয়া লোকজন পুনরায় হামলার আশংকায় ভারতে পালিয়ে যান। পথে ডায়ারিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও অন্তত ৫০ জন প্রাণ হারান।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কংশ মোহন দাশ (৮৮) জানান, তার চোখের সামনে তার পিতাসহ অন্যদের ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে পাকবাহিনী। মাকালকান্দি এলাকাটি প্রত্যন্ত এলাকায় হলেও লুট ও হয়রানীর জন্য গণহত্যা চালানো হয়। এই দিনটির কথা আজও ভুলতে পারেনি এলাকাবাসী। অতীতে কেউ আমাদের খোজ না নিলেও বর্তমানে প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আসছেন ঐ দিবসে। তিনি এই গণহত্যার ঘটনার বিচারের দাবি জানান।
বৃদ্ধা মিনতি রানী (৭৯) জানান- তার কোল থেকে ৪ দিনের শিশুকে ছিনিয়ে নিয়ে পাক-বাহিনী গুলি করে হত্যা করে।
বানিয়াচং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল খালেক জানান, রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনী যে নারকীয় তান্ডব চালিয়েছে তা ভাষায় প্রকাশের মতো নয়। রাজাকাররা গ্রামটি জ্বালিয়ে দিয়ে যে পরিমাণ ধন সম্পদ লুট করেছে তার বর্ণনা দেয়াও সম্ভব নয়। তিনি মাকালকান্দি গণহত্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারি সাহায্য কামনা করেন।
মাকালকান্দির এ ঘটনার কথা আলোচনায় আসেনি খুব একটা। এ নিয়ে এলাকবাসীর দুঃখের অন্ত ছিল না। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৩৬ বছর পর ২০০৭ সালে এলাকাবাসীর দাবির মুখে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে আলম সিদ্দিকীর প্রচেষ্টায় থোক বরাদ্দের অনুদানে সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।
কিন্তু আত্মদানকারী ৭৮ জনের স্বজনদের আজ পর্যন্ত পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। স্বজনহারা নারী-পুরুষের আর্তনাদে গ্রামে এখনও বেদনার সুর বাজছে। ’৭১-এর ঘাতকরা চিরদিনের জন্য তাদের সুখ কেড়ে নিয়েছে। গ্রামবাসী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বর্তমান সরকারের কাছে ৭৮ জন আত্মদানকারী স্বজনদের পুনর্বাসনসহ যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচারের জোর দাবি জানিয়েছেন।