খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৭ আগস্ট ২০১৬: স্বার্ণালংকার চুরির ঘটনা দেখে ফেলায় আদিবা নামে অষ্টম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যা করার দায়ে দোষী হত্যাকারী মিজানুর রহমান ওরফে মিজান (২৮)কে ফাঁসির দন্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি চুরির মামলায় সাজা দিয়েছেন ১০ বছর কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ২ বছরের সশ্রম কারাদন্ড। হত্যাকারী মিজান নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলাইয়াপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীনের পুত্র।
জানা গেছে, ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানার কর্মচারী আহমেদ আলমগীর একই কারখানায় চাকুরীর সূত্রে কারখানার কলোনীতে বসবাস করতো। প্রতিদিন চাকুরী শেষে সে সরকারখানার গেইটে একটি দোকানে ওষুধ বিক্রি করতো। ২০১২ সালে ২৬ জানুয়ারী রাতে আদিবার পিতা আহমেদ আলমগীর ওষুধের দোকানে চলে যায়। তার মা ডায়াবেটিসের রোগী হওয়ায় মেয়েকে পড়ার টেবিলে বসিয়ে নিচে হাটা হাটি করতে চলে যায়। এই সুযোগে একই কারখানার কর্মচারী মিজানুর রহমান ওরফে মিজান তার ঘরে ঢুকে আলমিরা ভেঙ্গে স্বর্ণালংকার চুরি করতে থাকে। পার্শ্ববতী রুমে আওয়াজ শুনে আদিবা সেখানে গিয়ে দেখতে পায় যে মিজান আলমিরা ভেঙ্গে তার মায়ের র্স্বনালংকার চুরি করছে। এই ঘটনা বুঝতে পেরে মিজান আদিবাকে ডেকে পার্শ্ববতী রুমে নিয়ে শাসরুদ্ধ করে হত্যা করে।
এরপর তাকে বাথরুমে নিয়ে শাওয়ারের সাথে লটকিয়ে নেইলকাটার দিয়ে তার গলা কেটে লাশ ফেলে রেখে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর তা মা বাসায় গিয়ে আদিবাকে বাথরুমে নিহত অবস্থায় দেখতে পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করলে আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পরে ঘটনা পুলিশকে জানানো হলে পলাশ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আদিবার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। পরদিন ২৭ জানুয়ারী আদিবার বাবা বাদী হয়ে পলাশ থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করে।
পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বজলুল আলম বিভিন্ন লোকের মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করে জানতে পারে ঘোড়াশাল সারকারখানার সংরক্ষিত এলাকায় মিজান নামে একজন চিহ্নিত অপরাধী রয়েছে। হত্যাকান্ডের পর সে ও তার স্ত্রী এলাকা থেকে উধাও হয়ে গেছে। এ অবস্থায় সে মোবাইল ট্রেকিং’র এর মাধ্যমে মিজানুর গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকে। একমাস পর মিজান তার স্ত্রীকে নিয়ে সারকারখানায় একটি বিয়ে বাড়ীতে বিয়ে দাওয়াত খেতে এলে এসআই বজলুল আলম তাকে গ্রেফতার করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুলিশের নিকট হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে।
এব্যাপারে দায়েরকৃত চার্জশীটের পরীপ্রেক্ষিতে ২২ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শাহিন উদ্দিন খুনী মিজানকে ফাঁসি ও কারাদন্ডাদেশ প্রদান করে।
সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এড. সরকার কাউছার আহমেদ, এড. সুইটি রায়, এড. আসাদুজ্জামান।