Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৭ আগস্ট ২০১৬: রংপুর: রমেকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বেহাল অবস্থা। বিছানায় কাতরাচ্ছেন অগ্নিদগ্ধ নারী,পুরুষ ও শিশুরা। গত মঙ্গলবার রমেকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে ১ মাস ধরে নেই এসি ও পানির ব্যবস্থা। অকেজো হয়ে পড়ে আছে এসি ও পানির কল। আর প্রচন্ড গরমে অগ্নিদগ্ধ মানুষগুলো যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন বিছানায়। হাতপাখা দিয়ে তাদের বাতাস করছেন স্বজনরা। রমেকের বেহাল অবস্থা দেখলে মনে হয় মেডিকেল নয়, যেন দুর্ভোগের নরক। চিকিৎসা হলেও সেবা দেওয়ার জন্য যে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম থাকার কথা সেগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ১মাস ধরে। সাংবাদিক দেখলেই অভিযোগ আর অভিযোগ। ভুক্তভোগীরা কাতর মিনতি করেন:‘‘ একটা রিপোর্ট করেন ভাই। আগুনে ঝলসে যাওয়া শরীর নিয়ে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে নারী,পুরুষ ও শিশুরা ১ মাস ধরে এই দুরাবস্থার মধ্যে নারকীয় যন্ত্রণা ভোগ করছেন। অথচ হাসপাতালের পরিচালক ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দেখেও-না দেখার-ভাব স্পষ্ট। এসিসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কবে মেরামত করা হবে , কবে পানির সুব্যবস্থা করা হবে এ নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। অথচ প্রতিদিনই রমেকের এই ইউনিটটিতে দুই একজন করে নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এভাবে দুর্ভোগের শিকার হওয়াদের তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। ৩ বছরের শিশু ওদুদ দত্ত কাতর স্বরে চেঁচিয়ে জানাচ্ছিল ওর কষ্টের কথা: ‘‘মোর অনেক কষ্ট হয়। মা..মা..’’ আর তখনই মা সুমিত্রা রান্রী কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে যায়। লালমনির হাট জেলার খুদ্দ সাপটানা গ্রামের নারায়ণ দত্তের ছেলে ওদুদ দত্ত। সুমিত্রা রান্ ী বলেন,‘‘ ১১মাস হয় আমার ছেলেকে নিয়ে রমেকে আসি। ১ থেকে দেড়মাস হয় এসি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ফ্যানও চলছে না, প্রচন্ড গরমে আমার ছেলেকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। যন্ত্রনায় সারারাত ছেলে আমার ঘুমাতে পারে না।’’ লালমনিরহাট পাটগ্রাম থানার আবুল হোসেনের ছেলে ২২বছর বয়সী কলেজছাত্র সাজু মিয়া। কণ্ঠে ক্ষোভ আর কষ্ট নিয়ে বললেন, ‘‘বাড়ীতে আগুন লাগার পর আমি দগ্ধ হয়ে ১৩ দিন হয় ভর্তি হয়েছি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে। কিন্তু এসি নষ্ট হওয়ার কারণে অনেক কষ্টে আছি। একা শুয়ে আছেন জয়পুরহাট জেলার তেঁতুলতলা গ্রামের নুর আলমের স্ত্রী ফাতেমা বেগম। ২৫ বছর বয়সের ফাতেমা ২ মাস ধরে বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন। ফাতেমা বলেন,‘‘মোর খুব যন্ত্রণা হয় ভাই।মরে যাওয়াই ভালো। আল্লাহ কেন এত কষ্ট দেন মোকে। যন্ত্রণায় চিৎকার দিতে দিতে তিনি বলেন, ‘‘ঠান্ডা দেও, মোক ঠান্ডা দেও। মোর গাও পুড়ে যায়। ১৫ বছর বয়সের নিলিমা রানী। ৪ মাস ধরে রমেকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে ভর্তি আছেন তিনি। সমস্ত মুখ আগুনে পুড়ে গিয়েছে তার। কথা বলার মত অবস্থা নেই। নিলিমার বাবা তপনচন্দ্র বলেন, ‘‘এত কষ্টের চেয়ে আমার মেয়ের মৃত্যু অনেক ভাল।’’ ৩ বছরের শিশু অন্তর রায় খেলতে গিয়ে আগুনে পুড়ে যায়। শিশুটির মার আর্তনাদ আর কান্নায় ভারী হয়ে যায় পুরো রমেক-এর বাতাস। মা ববিতা রানী বলেন, ‘‘৩ মাস হয় আগুনে পুড়ে যায় ও । ভাল চিকিৎসার জন্য রমেকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়। হাতিবান্ধা উপজেলার পুর্ব বিচান্দায় গ্রামে আমাদের বাড়ি। এরা ছাড়াও রংপুর মহানগরের নুরপুর এলাকার আবদুল মান্নানের ছেলে সুমন(১৫), কেরানীপাড়ার আবদুল বারির স্ত্রী আফরুজা বেগম(৫০)সহ আরো অনেকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ভর্তি আছেন রমেকে। এভাবে ১৫ জন অগ্নিদগ্ধ নারী,পুরুষ ও শিশু চিকিৎসার জন্য রমেকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে ভর্তি হয়ে এসিহীন অব্যবস্থার মধ্যে কাতরাচ্ছেন যন্ত্রণায়। তবু তাতে কর্তৃপক্ষের গা-ছাড়া ভাব। রমেকে ডেপুটি ডাইরেক্টর ডা:শফিকুল ইসলাম জানান,এসিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ঢাকায় নিমু নামে একটি দপ্তর রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে লোক এসে মেরামত করবে। কিন্তু কবে তারা এসে এসি মেরামত করবে তা বলেননি তিনি। রমেকে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগীয় সহকারী অধ্যাপক ডা: মারুফুল ইসলাম বলেন, ‘‘এই বিভাগটি অতি জুরুরি। এ কারণেই নষ্ট এসিগুলো সরকারীভাবে ধীরগতিতে না করে, এই রমেকেই এগুলো মেরামতের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এসব রোগীর যে কোনো সময় ইনফেকশন হতে পারে। ১মাস নয় এক ঘন্টাও এসি ছাড়া অগ্নিদগ্ধ রোগিদের রাখা যায না বা রাখা উচিত নয়।