Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৭ আগস্ট ২০১৬: হোসেন, তানোর : রাজশাহীর তানোর, চৌবাড়িয়া ও মুন্ডুমালা পৌর সদরে সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে গড়ে ওঠা অধিকাংশ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি হাসপাতাল, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক, পল্লী চিকিৎসক ও ওষুধ কোম্পানির একশ্রেণির বিক্রয় প্রতিনিধিদের রোগী ধরা দালাল হিসেবে কাজ করছে। রোগী প্রতি কমিশনের আশায় এসব দালালরা অভিনব কৌশল ও প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগী বাগিয়ে নিয়ে এসব ক্লিনিকে ভর্তি করছেন। ফলে সার্বক্ষনিক চিকিৎসক ছাড়াই এসব ক্লিনিক চললেও তাদের রোগীর অভাব হচ্ছে না। চিকিৎসার নামে চলছে অপচিকিৎসা অধিকাংশক্ষেত্রে মালিক-কর্মচারীরা চিকিৎসক সেজে প্রতারণা করে সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। স্থানীয়রা ক্লিনিকের নামে পরিচালিত এসব যমালয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সচেতন মহলের অভিমত, এসব ক্লিনিকে নিয়মিত ভ্রামম্যান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হলে অনিয়ম ও দূর্নীতি কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে ও রোগীদের দুর্ভোগ কমবে। তারা আরো বলেন, বিশেষ করে তানোর পৌর সদরের মহানগর ও সেফা ক্লিনিক, চৌবাড়িয়া হাটের ফারিহা ও মুন্ডুমালা পৌর সদরের আসনারা ক্লিনিকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা জরুরী হয়ে উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, সরকারিবিধি মোতাবেক প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগণষ্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল পরিচালনা করতে পরিবেশ ছাড়পত্র, স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিস অনুমতিপত্র, পারমাণবিক শক্তি কমিশনের অনুমতিপত্র, আয়কর-ভ্যাট, ডিপ্লোমা নার্স ও প্যাথলজি ডিপ্লোমাধারী সার্বক্ষণিক এমবিবিএস চিকিৎসক অবশ্যই থাকতে হবে। এ ছাড়াও ১৯৮২ সালের ‘দ্য মেডিকেল প্রাকটিস অ্যান্ড লাবরেটরিজ রেগুলেশন’ অনুযায়ী ১০ শয্যাবিশিষ্ট কোন হাসপাতালের জন্য জরুরি বিভাগে তিনজন স্থায়ী চিকিৎসা কর্মকর্তা, তিনজন ডিপ্লোমাধারী জ্যেষ্ঠ সেবিকা, তিনজন কনিষ্ঠ সেবিকা, তিনজন আয়া, তিনজন ওয়ার্ডবয়, একজন ব্যবস্থাপক, দু’জন পাহাদার, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ অস্ত্রপাচার কক্ষ (অপারেশন থিয়েটার) না থাকলে সেখানে কোনো রোগীর অস্ত্রপাচার (অপারেশন) করানো যাবে না বলে শর্ত দেয়া রয়েছে। কিšত্ত সংশ্লিষ্ট বিভাগের একশ্রেণীর অসাধু দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারির যোগসাজশে এসব ক্লিনিক মালিকরা নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয়রা জানান, তানোরের অধিকাংশ ক্লিনিক যেনো প্রতারণা, অসামাজিক কার্যকলাপের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র, মৃত্যু ফাঁদ বা মিনি পতিতালয় বললেও ভুল হবে না। অধিকাংশ ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও সরঞ্জামাদি নেই। তারা কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। বিষয়টি ওপেনসিক্রেট হলেও যেনো দেখার কেউ নেই। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করে অর্থদন্ড দেয়া হলেও ক্লিনিক বন্ধের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। ক্লিনিকের রয়েছে নিজস্ব দালাল বাহিনী। দালাল বাহিনীর মুল কাজ হচ্ছে হাসপাতাল ও বিভিন্ন এলাকা থেকে রোগী বাগিয়ে এনে ক্লিনিক ভর্তি করা। ক্লিনিক সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অধিকাংশ ক্লিনিকে অনৈতিক কার্যকলাপ, রোগী ধরার ফাঁদ হিসেবে কথিত (নার্স) সেবিকাদের দিয়ে গ্রাম্য ডাক্তার, দালাল, স্থানীয় হোমরা-চোমরাদের জন্য মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা ও গরীব অসহায় রোগীদের বিনামূল্য চিকিৎসার প্রলোভন দিয়ে মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচার করা হতে পারে বলেও এলাকায় ব্যাপক প্রচার রয়েছে। এব্যাপারে তানোর উপজেলা হাসপাতালের কর্মকর্তা (টিএইচও) বলেন, কোনো ক্লিনিকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।