খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট ২০১৬: জাহাঙ্গীর আলম,কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার নাজিম খাঁন ইউনিয়নে বিরোধপূর্ণ জমির মালিকানা নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম সাধারণ পাঠাগারে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় রাজারহাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রজব আলীসহ ২০জন মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকার ভুক্তভোগী জনতার ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আহবান করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান অভিযোগকারী সাইফুল ইসলামের পক্ষে আমিনুর ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ৮ আগস্ট কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শাহ আলম খন্দকার কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেন, তা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শাহ আলম খন্দকারের পরিবার মামলাবাজ, দাঙ্গাবাজ ও ভুমিদস্যু। তারা এলাকার নিরিহ মানুষকে টার্গেট করে বিভিন্নভাবে ফাঁসিয়ে জমি দখল করেন। এই পরিবার প্রায় সাড়ে ৩ একরের মতো জমি জবরদখল করার চেষ্টা করছেন। সাইফুল ইসলাম জানান, আমার বাবা ও চাচা জন্মলগ্ন থেকে বোবা ও পাগোল। ফলে আমাদের স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। আমরা নিরক্ষর হওয়ায় আমার প্রতিবন্ধী বাবা-চাচার সাথে প্রতারণা করে ভুমিদস্যু শাহ আলম খন্দকার পৈত্রিক জমি দখলে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। আমাদেরকে হয়রানী করার জন্য বিভিন্ন থানায় ৯টি মামরা করা হয়েছে। ফলে আমরা রাজারহাট, উলিপুর বা কুড়িগ্রামে যেতে পারিনা। এছাড়াও তার বড় মেয়ে কুড়িগ্রাম পিটিআইতে চাকুরী করার সুবাদে মেয়ে জামাই আব্দুল খালেককে দিয়ে আমাদের উপর কয়েকবার হামলা চালিয়েছে। তার মেজ মেয়ে জামাই মঞ্জুর কাদের বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যিক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হওয়ায় বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম খন্দকার স্থানীয় প্রশাসনের উপর অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দখলদারীত্বের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। তার বড় ছেলে শাহেদুল আলম খন্দকার স্বপন পাটগ্রাম সোনালী ব্যাংকে ম্যানেজার থাকা অবস্থায় ৫৫ লক্ষ টাকা আত্মসাতের দায়ে সরকার তাকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করেছে। তার দ্বিতীয় ছেলে মাহবুবুর রহমান খন্দকার বিপ্লব একজন চাঁদাবাজ। কুড়িগ্রাম প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টারের কাছে চাঁদাবাজী করতে গিয়ে ধরা পড়ে মোবাইল কোর্টে ৬০ দিনের সাজা খেটে বাহির হয়। তার ছোট ছেলে ফেরদৌস আলম খন্দকার দীপু গত ৫ আগস্ট রিভলভারসহ কিছু বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে আমার বোনা জমির বীজধান নষ্ট করার উদ্দেশ্যে চারা নষ্ট করে। এসময় বাঁধা দিলে দীপু কোমড় থেকে রিভলভার বের করে আমার ভাই সাইদুর রহমান (৪৫) এর বুকে বাট দিয়ে আঘাত করে। এ সময় দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। তাদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে আশপাশে লোকজন ছুটে আসলে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অবস্থা বেগতিক দেখে পালিয়ে যায়। পরে গ্রামবাসী রিভলভারসহ দীপুকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ব্যাপারে রাজারহাট থানায় দি আর্মস এ্যাক্ট ১৮৭৮ এর ১৯ (এ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সাইফুল ইসলাম আরো জানান, আমি ও আমার আত্মীয়-স্বজন চাষাভুষা ও অশিক্ষিত। আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভুমিদস্যু শাহ আলম খন্দকার সবকিছু গ্রাস করতে ছলনার আশ্রয় নিচ্ছেন। তিনি ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য সাংবাদিক সম্মেলনে তাদেরই নিকটাত্মীয় আবুল কালাম আজাদ ও নুরন্নবী খন্দকারের সাথে আমাদেরকে জড়িয়ে যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন। তা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। সামাজিকভাবে আমরা দুর্বল হওয়ায় চতুর শাহ আলম খন্দকার প্রভাব খাটিয়ে আমাদেরকে হয়রানীসহ মিথ্যা মামলায় জীবন অতিষ্ট করে তুলেছে। তারা বারবার আমাদেরকে মেরে ফেলার হুমকী দিচ্ছে। এছাড়াও অস্ত্র মামলাটি তুলে নিতে আলটিমেটাম ঘোষনা করছে। ফলে আমি ও আমার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি। সাংবাদিকভাইদের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাই, এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, ভুমিদস্যু শাহ আলম খন্দকার গং’র বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক যেন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রাজারহাট মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রজব আলী জানান, গত ৮ আগস্ট শাহ আলম খন্দকার কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে যে সংবাদ সম্মেলন আহবান করেছেন। আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি একজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। তার মেজ মেয়ে জামাই মঞ্জুর কাদের বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যিক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হওয়ায় বিএনপি-জামাত সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় তিনি ২০০১ সালের পর গোপনে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছেন। আমরা তার ছাত্র ছিলাম। তাকে যুদ্ধ করতে দেখিনি। যুদ্ধের সময় তিনি নাজিমখা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাছাড়াও তিনি কোন সেক্টরে কার অধীনে কোথায় যুদ্ধ করেছেন তা আমাদেরকে বলতে পারেননি। ফলে আজ আমরা সকল মুক্তিযোদ্ধা প্রতিবাদ জানাতে এখানে হাজির হয়েছি। অথচ শাহ আলম খন্দকারের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে একজন বাইরের মানুষ আসে নাই। তিনি তার মেয়ে, মেয়ে জামাই, নাতনি ও নাতনী জামাইকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি প্রকৃত মুত্তিযোদ্ধা হলে তার পাশে আমরা সবাই দাঁড়াতাম। ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে তার বিরুদ্ধে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার ব্যাপারে প্রকৃত ঘটনা জানিয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। আমরা সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি শাহ আলম খন্দকারসহ আরো ৭ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে আমরা সনাক্ত করেছি। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন আসল সত্য কি লুকিয়ে আছে।