খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৯ আগস্ট ২০১৬: আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের পদত্যাগপত্র গ্রহণে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এটি অনুমোদনের জন্য আগামী সপ্তাহে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হচ্ছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।
তবে চাকরি ফিরে পেতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সরকারের সুদৃষ্টির জন্য বাবুল আক্তার অপেক্ষায় থাকবেন বলে জানিয়েছেন তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, বাবুলের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে। বাবুল আক্তার একটি পক্ষের ষড়যন্ত্রের শিকার। ওই পক্ষ চায় না বাবুল আর চাকরিতে ফিরে আসুক। তবে তিনি এ মুহূর্তে চক্রটির নাম প্রকাশ করতে চাননি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বৃহস্পতিবার বলেন, ‘বাবুল আক্তারের পদত্যাগপত্র আমরা পেয়েছি এবং ওই কাগজের ওপর ভিত্তি করেই সব প্রক্রিয়া শেষ করে এনেছি। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তের জন্য আগামী সপ্তাহে রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র সংক্রান্ত নথিটি পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই কার্যকর হবে।’
বাবুল আক্তারের কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্র নেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ হাস্যকর উল্লেখ করে সচিব বলেন, ‘আমি তো জোরটোর দেখি না, কারণ আমার কাছে কাগজ আছে। কাগজে তো জোর করার গন্ধ পাই না। এমনকি জোর করে তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে সই নেয়া হয়েছে তা কখনও তিনি (বাবুল) বলেননি।
বাবুল আক্তার চাকরি ফিরে পেতে ফের আবেদন করেছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘না, এমন আবেদন করেননি এবং এর সুযোগও নেই। এ ব্যাপারে প্রাকটিস হচ্ছে- একবার আবেদন করলে তা ফেরত নেয়া যায় না।
মোজাম্মেল হক খান আরও জানান, বাবুর আক্তার তার পদত্যাগপত্রে বলেছেন, স্ত্রী খুন হওয়ার পর তিনি (বাবুল) মানসিক চাপে আছেন। এ মুহূর্তে চাকরি চালিয়ে যেতে তিনি সক্ষম নন।
প্রসঙ্গত, স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু নির্মমভাবে খুন হওয়ার পর থেকেই এসপি বাবুল আক্তারকে নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক। বিশেষ করে ৫ জুন স্ত্রী খুন হওয়ার ১৯ দিনের মাথায় হঠাৎ করেই বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা কার্যালয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় এ বিতর্ক। এ সময় বাবুল আক্তার চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি শর্ত দিয়ে তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্র নেয়া হয়েছে এমনটিও শোনা যায়। কিন্তু এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কেউ মুখ খোলেননি। এমনকি বাবুল আক্তারও থেকেছেন নিশ্চুপ।
বাবুল আক্তারকে নিয়ে যখন সর্বত্রই আলোচনা চলছে ঠিক সেই মুহূর্তে (২২ জুলাই) চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে আইজিপি একেএম শহীদুল হক প্রথম মুখ খোলেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাবুল আক্তার চাকরিতে আছেন, তবে অফিস করছেন না।’ এর পরপরই দুই দফা পুলিশ সদর দফতরে গিয়ে চাকরিতে যোগদানের চেষ্টা করেন বাবুল আক্তার। কিন্তু তার সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। চাকরিতে যোগদান তো দূরের কথা, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা তার সঙ্গে দেখাই দেননি।
সর্বশেষ ১৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আলোচিত এ পুলিশ কর্মকর্তার প্রসঙ্গে প্রথম মুখ খোলেন। তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুগান্তরকে বলেন, ‘বাবুল আক্তার পদত্যাগপত্র দিয়েছেন, যা বিবেচনায় রয়েছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, ‘পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা এভাবে পদত্যাগ করতে পারেন না। তিনি কোথায় বসে, কীভাবে পদত্যাগপত্র দিচ্ছেন সেটাও বিবেচ্য বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘২৪ জুলাই রাতে জিজ্ঞাসাবাদের নামে বাবুলকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেয়া হয়েছিল। দিনটি ছিল শুক্রবার। ওই রাতে ডিবি অফিসে বসেই তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে সই নেয়া হয় বলে তিনি অভিযোগ করেছিলেন। পাশাপাশি এ প্রতিবেদকের কাছে তিনি উল্টো প্রশ্ন রেখেছিলেন, একজন পদস্থ কর্মকর্তা ছুটির দিনে কীভাবে পদত্যাগ করবেন, আর এতদিন পদত্যাগপত্রটি কোথায় ছিল? মোশাররফ হোসেন বলেন, বাবুল যদি পদত্যাগই করবেন তাহলে কেন আবার কর্মস্থলে যোগদান করতে যাবেন? আবার পদত্যাগপত্র দিলে পুলিশের পক্ষ থেকে কেন বলা হবে ‘বাবুল চাকরিতে আছেন, তবে কর্মস্থলে যাচ্ছেন না।’
এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, কে কি বলল এটি দেখার বিষয় নয়। তাছাড়া বাবুল আক্তার বললে তারা বিষয়টি নিয়ে ভাবতেন। তার শ্বশুর চাকরিতে নেই। তাই তার বক্তব্যও গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া বাবুল আক্তার অক্ষম কিংবা অনুপস্থিত নয়, উনার (বাবুল) কথা আরেকজনের বলার সুযোগ নেই। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাবুল আক্তার যদি এ ধরনের অভিযোগ করতেন, সেক্ষেত্রে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যেত।
৫ জুন সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের অদূরে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে গুলি ও ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সেদিনই তার লাশ আনা হয় রাজধানীর মেরদিয়া ভুঁইয়াপাড়ায় বাবার বাসায়। মেরাদিয়া কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। সেই থেকে বাবুল দুই সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই এক প্রকার ‘স্বেচ্ছাবন্দি’ জীবন কাটাচ্ছেন।