খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৯ আগস্ট ২০১৬: মুন্সীগঞ্জ : মুুন্সীগঞ্জ আদর্শ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সকল অপকর্ম ও পণ্যগ্রাফী তৈরীর কথা স্বীকার করে মাদ্রাসায় থেকে রাতের আঁধারে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদ্রাসার ছাত্র- শিক্ষকদের সূত্রে জানাযায়, মুন্সীগঞ্জ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জামাত নেতা মাহাবুবুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসায় বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতি করে আসছিল। মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল নিজের ক্ষমতার অপ-ব্যবহার করে তার আপন ভাগিনা শাকিব কামাল ও ভাগিনী আকলিমা আক্তারকে সহকারী শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেন। তার ভাগিনা আর ভাতিজি কোচিং বানিজ্য করে হাতিয়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। সেই সাথে আকলিমা আক্তারের সহযেগিতায় শিক্ষক শাকিব কামাল মাদ্রাসার বিভিন্ন ছাত্রীর সাথে পণ্য ভিডিও তৈরী করে আসছিল। ছাত্ররা এই ধরনের অপ-কর্মের প্রতিবাদ করায় শিক্ষক শাকিব কামাল ছাত্রদের মারধর করিত বলে জানান একাধিক ছাত্র। প্রায় ২ মাস আগে শাকিব কামালের এমন একটি পণ্য ভিডিও ছাত্রদের হাতে চলে আসে। ছাত্ররা পণ্য ভিডিওর কথা সকল শিক্ষকদের জানায়। এরপর মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সদস্যেদের উপস্থিতে সকল শিক্ষকরা এই পণ্য ভিডিও দেখে শিক্ষক শাকিব কামালের বিচার দাবি করেন। অধ্যক্ষ নিজের ভাগিনা আর ভাতিজির বিচার না করে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ভাগিনা শাকিব কামাল ও সহকারী শিক্ষিকা আকলিমা আক্তারকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে।
শিক্ষকরা আরো জানায়, ভাগিনা আর ভাতিজি চলে যাওয়ার পর সকল ছাত্রদের হুমকি এবং শিক্ষকদের চাকুরি খেয়ে ফেলবে বলে নিজের কব্জায় নেওয়ার চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ মাহাবুব। সঠিক বিচার না পেয়ে অধ্যক্ষের অপ-সারন ও বিচার দাবি করে ছাত্র ও শিক্ষকরা ডকুমেন্টসহ জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক অভিযোগটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ সুপার, শিক্ষামন্ত্রনালয়, শিক্ষাবোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি প্রেরন করেন। এর পর শুরু হয় মাহাবুবের নতুন কাহিনী। জনমনে সর্বমহলে প্রচার করতে থাকে এটা আমার ভাগিনা নয়। এদিকে ছাত্ররা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার , শিক্ষা অফিসার বরাবর ছাত্র ও শিক্ষকরা আলাদা আলাদা অভিযোগ করেন। ইতিপূর্বে মাদ্রাসার ছাত্ররা অধ্যক্ষের অপ-সারনের দাবিতে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচী অব্যাহত রাখেন। যা একাধিক জাতীয় পত্রিকা এবং জাতীয় অনলাইন প্রত্রিকাগুলো ধারাবাহিক নিউজ প্রচার করতে থাকে। নিজের অবস্থানে টিকে থাকার জন্য মাহাবুব মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিকে ম্যানেজ করে নানা কৌশল অবলম্বন করেন। কয়েকদিন আগে কিছু সাংবাদিককে ম্যানেজ করে পণ্যগ্রাফীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী সিনিয়র কম্পিউটার শিক্ষক আব্দুস সালামের নামে লোকাল দুটি অনলাইন পত্রিকায় টাকা দিয়ে মিথ্যা একটি রিপোর্ট করায়।
এই রিপোর্ট করে উল্টো ফ্যাশাদে পড়েন অধ্যক্ষ। আন্দোলনরত সকল ছাত্রদের বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে হুমকি প্রদান করে বলে জানান শিক্ষক ও ছাত্ররা। ১৪ আগস্ট ২০১৬ইং দুপুর ২.৩০ মিনিটে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নুরুল হক পাটোয়ারী, সাহারবানু, মোনায়েম খান, সাহাব উদ্দিন এবং পিটিএ কমিটির সদস্য সাখাওয়াত হোসেন ছিনু, ছোয়ার মা এবং ২৩ শিক্ষক শিক্ষিকার উপস্থিতিতে পর্ণগ্রাফীসহ মাদ্রাসার সকল অপকর্মের দায়ভার স্বাীকার করেন অধ্যক্ষ মাহাবুবুর রহমান। পরে সকলের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং সকলকে মাফ করে দিতে বলেন। এমনটি জানিয়েছেন অভিভাবক, শিক্ষক ও একাধিক ছাত্ররা। কিন্তু কোন শিক্ষকই তাকে মাফ করতে রাজি হয়নি। কমিটির আবদার ছিল সকল শিক্ষকরা যেন জেলা প্রশাসক বরাবর বলেন, অধ্যক্ষের ভুল স্বীকার করেছে তাই তার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে তার চাকুরি বাঁচাতে।সে ক্ষেত্রেও সকল শিক্ষকরা আপত্তি জানিয়েছে। এতোদিন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি থেকে শুরু করে যারাই অধ্যক্ষকে সহযোগিতা করে আসছিল এই পুরো ঘটনার সত্যতা প্রকাশ পাওয়ার পর তাকে আশ্রয়- প্রশ্রয়কারীরা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। গত- ১৭ আগষ্ট এই ঘটনায় প্রতিবাদকারী ছাত্র হুজাইফাকে টিসি দিয়ে বের করে দেয় মাদ্রাসা থেকে।
১৮ আগষ্ট সকল শিক্ষককে তার হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অনুরোধ করে মাফ করে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। তখন শিক্ষকরা বলেন, কেন আপনি দায়ভার স্বীকার করার পরও কোন শিক্ষকের সাথে আলাপ না করে মাদ্রাসা ছাত্র হুজাইফাকে টিসি দিলেন? অধ্যক্ষক শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবক সমাজের রোশানলে পড়েন। অন্যদিকে এই ঘটনার দায়ভার স্বীকার করার পর এলাকাবাসী. শিক্ষক ও অভিভাবক সমাজ ফুঁসে ওঠে। জেলা প্রশাসনের পক্ষকে থেকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি টের পেয়ে যান মাহাব্বু। টিকে থাকার সব চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বৃহস্পতিবার রাতের আঁধারে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যায় অধ্যক্ষ মাহাবুব। এমনটাই জানিয়েছে একাধিক শিক্ষক ও হোস্টেলে থাকা আবাসিক ছাত্রগন।
এদিকে মাদ্রাসায় গিয়ে অধ্যক্ষ মাহাবুবুর রহমানকে পাওয়া যায়নি। তার থাকার এবং অফিস রুমে তালা লাগানো রয়েছে। পাওয়া গেল কেয়ারটেকার রফিককে তিনি জানান, অধ্যক্ষ পালিয়ে গেছে। কোথায় গেছে বলতে পারেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রফিক বলেন, অধ্যক্ষ বলে গেছে আসবেনা এর বেশী কিছু জানিনা। পরে অধ্যক্ষ মাহাবুবুর রহমানের নাম্বারে ফোন করিলে তার সেল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অধ্যক্ষ পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে সহকারী অধ্যক্ষ মোনায়েম খান বলেন, তিনি যাওয়ার সময় আমাকে ফোন করে বলেন, আমি অনেক অপরাধ করেছি। এখানে আমার কোন নিরাপত্তা নেই। এখানে থাকলে হামলা এবং মামলায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমি চলে যাচ্ছি আর আসব না আপনারা মাদ্রাসাটি ভাল করে চালাবেন।