Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

3খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২২ আগস্ট ২০১৬: প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার এক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তা প্রত্যাহারের দাবিতে সভা করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, যাতে সরকার ও বিরোধী উভয় দলের সমর্থক আইনজীবীরাই ছিলেন।

সভায় অংশ নেওয়া আইনজীবী সমিতির নেতাদের অভিযোগ, সম্প্রতি একটি মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদারকে নিয়ে ‘অশোভন’ কথা বলেছেন।
তবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলছেন, গত ১৮ অগাস্ট প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্য ছিল লক্ষ্মীপুরের আইনজীবীদের একাংশকে নিয়ে।
সোমবার সমিতির দক্ষিণ হলে অনুষ্ঠিত সভায় আলোচ্য বিষয় ছিল- ‘গত ১৮ অগাস্ট আপিল বিভাগে আবদুল বাসেত মজুমদার কর্তৃক একটি মামলার শুনানিকালে প্রধান বিচারপতির আইনজীবীদের সম্পর্কে মন্তব্য প্রসঙ্গে’।
সভায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, “আমি বক্তব্য শুনছি, একটা প্রস্তাব এসেছে, যেটা পরিষ্কার হয়েছে, আবদুল বাসেত মজুমদার বলেছেন, তাকে উদ্দেশ্য করে কথাবার্তা বলা হয়েছে।
“মাননীয় প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের উদ্দেশে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা অশোভন বলে আমি বিশ্বাস করি। এটা শোভা পায় না। আমাদের মর্যাদা আছে। আপনাদের মনে আছে, রেফারেন্স মিটিংয়ে আইনজীবীদের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।”
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হুমায়ুনের সুর ছিল সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকনের কণ্ঠেও।
“আমাদের সমস্যা, ভালো-খারাপ, সব দেখার দায়িত্ব আপনার (প্রধান বিচারপতি)। এখন আপনি আমাদেরকে ভুলে যদি কর্মচারীদের দেখেন, সেটা আমরা মানব না,” বলেন তিনি।
সভায় বিএনপি সমর্থক আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার, আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবী মো. মমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদি, মামুন মাহবুবও বক্তব্য দেন।
সভার এক পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও উপস্থিত হন।
তিনি বলেন, “প্রধান বিচারপতির বক্তব্য ছিল লক্ষ্মীপুরের বারের কিছু সদস্য সম্পর্কে। সেখানকারও সবাই না, যারা আদালতের জায়গায় ভবন করছে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, সব আইনজীবীদের উপর এটা আপনারা নেবেন না।”
সর্বোচ্চ আদালতে সামনের দিনগুলোতে মীর কাসেম আলীর আপিল শুনানিসহ গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হওয়ার কথা জানিয়ে এই সময়ে আইনজীবীদের কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে এসব বিবেচনার আহ্বান জানান।
এ সময় আইনজীবীদের মধ্য থেকে এক দল হৈ চৈ করে উঠলে সভা এক সপ্তাহ মুলতবি করার সুপারিশ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মাহবুবে আলম।
আইনজীবী সমিতির সম্পাদক খোকন বলেন, “যুদ্ধাপরাধী যারা আছে, তাদের বিচার করেন, ফাঁসি দেন, আমাদের আপত্তি নাইৃ. যারা জ্বালাও-পোড়াও করেছে, তাদের বিচার করেন, আমাদের কোনো আপত্তি নাই। ঠিক আছে, আমাদের আজকের মিটিংয়ের সাথে এটার সম্পর্ক কী, মাননীয় স্পিকার (সভাপতি)।
“আমরা চাই, অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব, উনি বারের সম্পাদক ছিলেন, সভাপতি ছিলেন, বার কাউন্সিলেরও চেয়ারম্যান, উনি আইনজীবীদের পক্ষে থাকবেন বলে আমরা আশা করি। ”
আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের অন্যতম নেতা বাসেত মজুমদার এরপর বলেন, “আমি অত্যন্ত আনন্দিত, অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব ছিলেন, যে কমেন্ট নিয়ে কথা, সেটা তিনি স্বীকার করেছেন। ডিফারেন্স হল, উনি বলতেছেন- ‘গুটিকতককে বলেছেন, সবাইকে বলেন নাই’।
“যে টার্মগুলো (প্রধান বিচারপতি) বলেছেন, প্রত্যেকটা আপত্তিজনক।”
বিএনপি সমর্থক আইনজীবী তৈমুর বলেন, “আইনজীবী নেতৃবৃন্দ যারা আছেন, তারা যদি মনে করন, জলে বাস করে কুমিরের সাথে লড়বেন না, সেটা ভুল হবে, অন্যায় হবে। সংবিধানকে রক্ষা করার জন্য, আইনজীবীদের রক্ষা করার জন্য, আইন পেশাকে রক্ষার জন্য এটাকে সহজভাবে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।”
সবশেষে আগামী রোববার পর্যন্ত সমিতির সভা মুলতবি করে এই সময়ের মধ্যে প্রধান বিচারপতিকে বক্তব্য প্রত্যাহার করতে আহ্বান জানানো হয়।