খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৬ আগস্ট ২০১৬: সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জে স্থাপিত দেশের ২য় বৃহত্তম মৎস্য হ্যাচারিটিতে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন হচ্ছে না। হ্যাচারিতে বর্তমান উৎপাদনের চেয়ে দ্বিগুন উৎপাদন বাড়ানোর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বে প্রয়োজনী লোকবল ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধির যে পরিকল্পনা ছিল তা ব্যস্তে যাওয়ার পথে।
শান্তিগঞ্জ মৎস্য হ্যাচারি সূত্র মতে, জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পাশে শান্তিগঞ্জে ১৯৯৭সালে হ্যাচারির অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়। হ্যাচারিটি উৎপাদনে আসে ২০০০-২০০১অর্থ বছরে। হ্যাচারিতে আছে ২৫০কেজি রেণু ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন কার্ব হ্যাচারি, ডরমেটরি, অফিস কাম হ্যাচারি ভবন, রেণু উৎপাদন শেড, স্টোরেজ রুম, পাম্প হাউজ, ওভারহেড ট্যাংক ও ৪টি আবাসিক ভবন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাওরাঞ্চলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি ও হবিগঞ্জের কুরশিতে আরো দু’টি মৎস্য হ্যাচারি নির্মাণ করা হয়। ওই দু’টি হ্যাচারিতেও অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ৪টি আবাসিক ভবনের একটিতে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারিদের গরু রাখা হয়। অন্য ৩টি ভবনের অবস্থাও বেহাল। বিদ্যুৎ ও স্যানিটেশনের অবস্থাও নাজুক। নির্মাণের পর থেকে সংস্কার কাজ করা হয়নি। অনেক যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়েছে। ওভারহেড ডিপ টিউবওয়েলে আয়রণের পরিমাণ বেশি হওয়ায় রেণু উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
জনবল সংকট রয়েছে মৎস্য হ্যাচারিতে। ১৮ বছর আগে পুকুর খনন করলেও আজ পর্যন্ত আর সংষ্কার করা হয়নি। এতে দিন দিন ভরাট হচ্ছে পুকুরগুলি।
জানা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে পুকুর প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে রেণু উৎপাদন শুরু হয়। এখানে উৎপাদিত রেণু ও মাছের পোনা বিক্রি করা হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস পর্যন্ত। সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণার মৎস্য খামারীরা এখান থেকে এসে পোনা ও রেণু কিনে নিয়ে যায়।
সুনামগঞ্জের মৎস্য খামারী আব্দুল জলিল বলেন, শান্তিগঞ্জ মৎস্য হ্যাচারির রেণু ও পোনা খুবই উন্নতমানের। এখানের রেনু ও পোনা নিয়ে মাছ চাষ করলে উৎপাদন ভাল হয়। মৎস্য খামারীরা লাভবান হয়। মিয়া হোসেন নামের আরেক খামারী বলেন, রেণু ও পোনা ভাল হলেও সবসময় তা পাওয়া যায় না।
শান্তিগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম বলেন, হ্যাচারির দিকে তাকালেই মনে হয় প্রতিষ্ঠানটিতে যত্নের অবহেলা রয়েছে। অথচ এখানে সব সময় মৎস্য খামারীদের পোনা ও রেণু সংগ্রহের জন্য ভিড় থাকার কথা ছিল। এলাকাবাসী জানান, শুধুমাত্র উদ্যোগের অভাবে মৎস্য হ্যাচারিটি রুগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে। হ্যাচারিটির দিকে কর্তৃপক্ষ সুনজর দিলে হাওরাঞ্চলে প্রাকৃতিক মাছের উৎপাদন বেড়ে যাবে। মাছের ঘাটতি পূরণে এ হ্যাচারিটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে এলাকাবাসী মনে করেন।
শান্তিগঞ্জ মৎস্য হ্যাচারি কর্মকর্তা অশোক কুমার দাস জানান, শুরুর দিকে হ্যাচারির অবস্থা আরো খারাপ ছিল। এখন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পোনা বিক্রয় সম্ভব। তিনি আরো জানান, যথাযথ উদ্যোগ নিলে এখানে পোনা ও রেণু উৎপাদন দ্বিগুন করা সম্ভব।