খোলা বাজার২৪, শনিবার, ২৭ আগস্ট ২০১৬:
তৈলের যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে সব মহলেই নানাবিধ গল্প শোনা যায়। কাকে, কোন্ সময়, কিভাবে, কী পরিমাণ এবং কী তৈল প্রয়োগ করতে হবে এবং যিনি কোনোভাবেই এ বিষয়টি পছন্দ করেন না তাঁর থেকে কোনো প্রক্রিয়ায় স্বার্থ আদায় সম্ভব তা নিয়ে কোনো গবেষণা কর্ম করার কোনো সুযোগ আছে কিনা তা ভাববার বিষয়। বর্তমানে আমাদের দেশে নানা ক্ষেত্রে ডক্টরেটের সংখ্যা দিনকে দিন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেলেও অতিপ্রয়োজনীয় আলোচ্য ক্ষেত্রে কোনো সনদধারী বিশেষজ্ঞ থাকার প্রশ্নটি হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়া যায় না কোনোভাবেই। স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ না থাকলেও আলোচ্য বিষয়ে পারদর্শী মানুষের সংখ্যা যে এ দেশে নেই তা কিন্তু বলা যাবে না। ‘যে দেবতা যে ফুলে তুষ্ট’ তা না দিতে পারলে যেমন দেবতার আশীর্বাদ বা অনুগ্রহ পাওয়া যায় না তেমনি বিশেষ বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী কর্তাব্যক্তিকে কোনো না কোনোভাবে সন্তুষ্ট করতে না পারলে ন্যায্য পাওনা প্রাপ্তির বিড়ম্বনা ভুক্তভোগীরা ভালো বলতে পারবেন। যোগ্যতার মাপকাঠি শুধুই’ তৈলপ্রয়োগ’ তা নিশ্চয় নয় বা তা হওয়াও বাঞ্ছনীয় নয়।

তৈলবাজ লোক তৈলপ্রয়োগের মাধ্যমে সব সময় নিজ স্বার্থ উদ্ধার করতে সক্ষম হন এটাও সঠিক নয়। তবে এ শ্রেণির মানুষ একজন প্রকৃত যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ সম্পর্কে কর্তাব্যক্তির কানে বিষ ঢেলে তাকে পচানোর কাজে তারা সিদ্ধহস্ত। এরা যেহেতু সব সময় কর্তাব্যক্তির পায়ের দিকে চোখ রেখে কথা বলেন এবং যিনি কখনো এ কাজটি করেন না তিনিও তা পছন্দ করেন কাজেই কর্তাব্যক্তি তাকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ না করলেও তার কথা কিন্তু সব সময় অবিশ্বাস করেন না। ফলে একজন প্রকৃত যোগ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সমাজে যোগ্য মানুষের সংখ্যা খুব বেশি না থাকায় অল্প স্টক থেকে একটা একটা করে পচতে থাকলে সমাজের ভবিষ্যত্ নিয়ে আতঙ্ক তো বেড়েই যাবে। আর সে কারণে বিভিন্ন বাণী সম্বলিত স্টিকারের সাথে ‘তৈলবাজ থেকে সাবধান’ শ্লোগান সম্বলিত স্টিকার অফিস-আদালতসহ ক্ষমতাধর কর্তাব্যক্তিগণের টেবিলে টেবিলে লাগিয়ে রাখা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। ইনোভেশনের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খুবই যুগোপযোগী, যে কেউ এটা লুফে নিতে পারেন নিজস্ব অধিক্ষেত্রে সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে। আর এর সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব হলে কর্মকর্তাদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে যে সকল যোগ্যতার বর্ণনা উল্লেখ আছে তাতে নিশ্চয়ই ১০০-এর মধ্যে ১০০ বা ৯৯ বা পছন্দের কর্মকর্তাকে নিদেনপক্ষে ৯৮ দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভবপর হবে না। তবে বর্তমানে পারফরমেন্স ভিত্তিতে যে গোপনীয় প্রতিবেদনের হাঁকডাক শোনা যাচ্ছে তা যোগ্যতার সঠিক মাপকাঠি বা পদ্ধতি কিনা তা নিরূপণে আরো কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
অতিসম্প্রতি আমার এক শ্রদ্ধেয় স্যারের অফিসে একটা কাজে গিয়েছিলাম। আমার সেখানে অবস্থান একটু দীর্ঘ হবে জেনে সামনেবসা এক ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন যাকে আমারও চেনা চেনা মনে হচ্ছিল। বললেন পরে এসে জরুরি কথা বলবেন। স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি ঐ ভদ্রলোককে চিনি কিনা। আমার চেনা চেনা লাগার কথা শুনে স্যার বললেন ভদ্রলোককে রহস্যজনকই মনে হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষমতাধর ব্যক্তিগণের কক্ষে যেভাবে বিনা পারমিশনে ঢুকে যেতে এবং আলাপ করতে দেখেছি তাতে তাকে উপেক্ষা করার মত সাহস পাচ্ছি না। আমার জানামতে আমার ঐ স্যার একজন সত্ এবং সচরাচর ভয় পাওয়ার মত কর্মকর্তা নন। তারই যখন এ অবস্থা তখন সাধারণদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়।
তৈলবাজ লোকেরা কেবলমাত্র প্রশাসনে নয়। সমাজের সর্বত্র এদের অবাধবিচরণ। মৌমাছি যেভাবে গাছের উঁচুডালে ঝুলে থেকে চাকের মধু তৈরি ও পাহারা দেয়, এ শ্রেণির মানুষগুলোও ক্ষমতার গায়ে গায়ে লেগে থেকে ক্ষমতার মধু সিঞ্চনে নিজেদের নিয়োজিত রাখে। মৌচাকের মধু ভাঙতে গেলে যেমন মৌমাছি হুল ফুটিয়ে দেয়। তেমনি ক্ষমতাধর ব্যক্তির সংস্পর্শ ঠেকাতে তৈলবাজরা হুল ফুটানোর ন্যায় নানাবিধ কৌশল ব্যবহার করে থাকে।
এ সকল মানুষ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সূঁচ হয়ে প্রবেশ করে ফাল হয়ে বের হয়ে আসে। এ শ্রেণির মানুষ এতটায় সুচতুর যে তারা ক্ষমতাধর এমন এমন ব্যক্তিকে নিজ আয়ত্তে আনতে সক্ষম হয় যার প্রভাবে সমাজ, রাষ্ট্র বা বিশ্বের যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটানোর বহু নজির রয়েছে। একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির সুনির্দিষ্ট ইতিহাস জানা থাকা সত্ত্বেও তোষামদকারীদের দাপট কিন্তু বহাল তবিয়তেই রয়েছে। কাজেই সাধুকে সাবধান হওয়ার পরামর্শ প্রদান ছাড়া নিরীহদের কিইবা করার আছে।