খোলা বাজার২৪,রবিবার, ২৮ আগস্ট ২০১৬: রাজশাহীর ও চাপাইনবাবগঞ্জের বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলে মাল্টা ‘মিষ্টকমলা’ চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই অঞ্চলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মাল্টা চাষের পরিধি। আমদানি নির্ভর বিদেশে ফল হিসেবে পরিচিত মাল্টা চাষ একদশক আগেও এই অঞ্চলের কৃষকরা কল্পনা করতে পারেনি। অথচ সেই অসাধ্য সাধন করে কয়েক জন কৃষক মাল্টা চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর ধরে বরেন্দ্র অঞ্চলে মাল্টা চাষের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। কুল ও পেয়ারা চাষের চেয়ে মাল্টা ‘মিষ্টিকমলা’ চাষে খরচ কম ও মুনাফা বেশি হওয়ায় প্রতিনিয়ত এই অঞ্চলের কৃষকরা মাল্টা চাষে ঝুকছে। আবার অনেকে শখের বসে বাড়ির আঙিনা ও আশপাশে মাল্টার গাছ রোপণ করেছেন। কেউ কেউ ইতিমধ্যে ফল পেতে শুরু করেছে। বরেন্দ্র অঞ্চল প্রচন্ড খরাপ্রবণ এলাকার অর্ন্তভূক্ত হওয়ায় এখানে উৎপাদিত মাল্টা উৎকৃষ্ট ও সুস্বাদু। স¤প্রতি রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ ওমর ফারুক চৌধূরী মাল্টা বাগান পরিদর্শন করে মুগ্ধ ও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি প্রতি বাড়িতে অন্তত্ব একটি করে মাল্টা গাছ লাগানোর জন্য উপস্থিতদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
বরেন্দ্র অঞ্চলের চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর উপজেলার আমনুরা ঝিলিম ইউনিয়নের জামতলা এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান ২০১৩ সালে প্রথম দুই বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে মাল্টা চাষ শুরু করেন। গত বছর থেকে তার মাল্টা বাগানে ফল ধরতে শুরু করেছে। গতকাল সরেজমিন, মতিউর রহমানের সঙ্গে তার মাল্টা বাগানে কথা হয়-মতিউর রহমান জানান, তার দুই বিঘা জমিতে ২০০ মাল্টা গাছ রয়েছে। গাছে থোকায় থোকায় মাল্টা ধরেছে ও মাল্টা পাকায় তার পুরা বাগান রঙীন হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, মাল্টার স্বাদ নিয়ে প্রথমে তার ভয় ছিল, কিšত্ত পাকার পরে দেখা গেছে, আমদানি করা বিদেশি মাল্টার থেকে এখানকার মাল্টা সুস্বাদু তাছাড়া পাকার পরেও অনেকদিন রেখে খাওয়া যায় স্বাদ নষ্ট হয় না। ফলে এই অঞ্চলের উৎপাদিত মাল্টার চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আর এই জন্য বাইরের জেলা থেকে পাইকার ব্যবসায়ীরা আসছেন একটি মাল্টা ২২ থেকে ২৮ টাকা ও ১০০ মাল্টার আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত্য দাম হাকছেন। আর কিছু দিন পরে মাল্টা বিক্রি শুরু হবে বলে তিনি জানান।
চাপাইনবাবগঞ্জ হার্টিকালচার সেন্টারের উদ্যান প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম জানান, ২০১৩ সালে ঝিলিম বাজার এলাকার মতিউর রহমান নামের এক কৃষককে প্রথমে দুই বিঘা জমিতে প্রদর্শনীর জন্য মাল্টার চারা দেয়া হয়েছিল, এর এক বছর পরেই সে ফল পেতে শুরু করে। ২০১৫ সালে মাল্টা বাগান থেকে তার প্রায় ৫ লাখ টাকা আয় হয়ে ছিলো। তার এই সফলতা দেখে অনেক কৃষক মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠে মাল্টা চাষ শুরু করেছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে এখন মাল্টা চাষে বিপ্লব ঘটতে চলেছে। রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি বিভাগের কৃষ বিশেজ্ঞ ও কর্মকর্তাগণ জানান,আমদানি করা ভারতীয় মাল্টার চেয়ে আমাদের দেশের উৎপাদিত মাল্টা উৎকৃষ্ট. সুস্বাদু ও অন্য মৌসুমি ফলের চেয়ে এটিতে লাভের ব্যাপকতাও বেশি হওয়ায় বৃহত্তর বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।