খোলা বাজার২৪,সোমবার, ২৯ আগস্ট ২০১৬: আবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। কতক ক্ষেত্রে দাম প্রায় ডবল করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। গতবছর একলাফে দাম প্রায় দ্বিগুণ করার পর, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তা আরেক দফা প্রায় ডবল করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। গ্যাসের দাম ছাড়াও বিদ্যুতের দামও কিছুদিন পরপরই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ানো হয়েছে। যারা গ্যাস-বিদ্যুতের সরাসরি ব্যবহারকারী তারা সবাই এসব মূল্যবৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ তাদের আয় অপরিবর্তিত থাকলেও তাদেরকে এখন গ্যাস-বিদ্যুতের পেছনে কয়েকগুণ বেশি খরচ করতে হবে। এদিকে গ্যাস-বিদ্যুত্ হলো বহুল ব্যবহূত জ্বালানি। এসবের দাম বাড়লে প্রায় সবরকম পণ্য উত্পাদন খরচ বেড়ে যায়। যাতায়াত ও পরিবহন ভাড়া বেড়ে যায় এবং এসবের মূল্যবৃদ্ধি অন্যান্য সব পণ্যের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ট্রিগার হিসেবে কাজ করে। চক্রাকারে মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে থাকে। ফলে কেউ গ্যাস-বিদ্যুত্ ব্যবহার করুক আর না করুক, এসবের মূল্যবৃদ্ধি ঘটলে তার চাপ সব মানুষের ওপরেই এসে পড়ে।
মূল্যবৃৃদ্ধির প্রসঙ্গ উঠলেই সরকার ও কর্তাব্যক্তিরা ‘বাজারের’ অজুহাত দিয়ে থাকে। তারা বলে থাকে যে ‘বাজারের কাজ বাজার করছে, তাতে আমাদের কি করার আছে?’ তর্কে বেশি বেকায়দায় পড়লে তারা ‘বিশ্ববাজারের’ দোহাই দেয়। আরো তারা বলেন যে, ‘মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে কোথায়’ শুধু তো ‘মূল্য র্যাশনালাইজ বা যুক্তিসংগতকরণ করা হচ্ছে’। ‘মূল্যবৃদ্ধির’ পরিবর্তে ‘মূল্য যুক্তিসংগতকরণ’ শব্দ ব্যবহার করলেই যেন সাত খুন মাফ! নির্দোষ বাক্য ব্যবহার করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে জনগণকে দিয়ে বিনা প্রতিবাদে গলাধঃকরণ করিয়ে নেয়ার জন্য তারা এই কৌশল প্রয়োগ করে। আমরা সবাই যেন ‘বাজারের’ দাস। ‘বাজারের’ দাস হওয়াটাই যেন আমাদের বিধিলিপি। কিন্তু কে বলেছে যে ‘বাজারের’ কাছে আমাদের দাসত্ব মেনে নিতেই হবে? তাছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ করে সরকার ও সরকারি সংস্থা। সেটিতো ‘বাজারের’ অধীনস্থ নয়। তথাপি দেয়া হয় ‘বাজারের’ অজুহাত।
অবাধ পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতিতে ‘বাজার’কে পরিণত করা হয়েছে সবকিছুর নিয়ন্তা হিসেবে। সেই অসীম শক্তিধর অদৃশ্য ‘বাজার-শক্তির’ কাছে আজ গোটা দেশবাসী যেন অসহায় জিম্মি। মানুষের মনে জিজ্ঞাসা, এ থেকে পরিত্রাণের কোনো পথ কি নেই?
আরো একটু ভালোভাবে জীবন কাটানোর উপায় করার জন্য মানুষ তার আয়-উপার্জন বাড়াতে প্রাণান্তকর চেষ্টা করে থাকে। এজন্য সে কষ্ট করে, পরিশ্রম করে, সংগ্রাম করে। পরিবার-পরিজন নিয়ে দৈনন্দিন জীবন যাপনের কষ্টটা তাতে একটু লাঘব করা যাবে, জীবনযাত্রার মান সামান্য হলেও একটু বাড়ানো যাবে— এটুকুই তার আশা। সময়ের চলমান ধারাবাহিকতায় তার আয় কিছুটা বাড়ে বটে। কিন্তু তার কষ্ট লাঘবের ও জীবনযাত্রার উন্নতির সেই আশাটি পূরণ হয় না। কারণ, তার আয় যদি বাড়ে দশ টাকা, ‘বাজারে’ জিনিসপত্রের দাম বাড়ে বিশ টাকা। ‘বাজার’ নামক দানবের মুখ-গহ্বরে বিলীন হয়ে যায় তার এত কষ্ট করে অর্জন করা বাড়তি আয়।
মানুষের আয়ের পরিমাণ ও বাজারে জিনিসপত্রের দাম— এই দু’য়ের মধ্যে যথাযথ সামঞ্জস্য থাকা বা না থাকাটাই হলো দ্রব্যমূল্য সমস্যার ক্ষেত্রে আসল কথা। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার তুলনায় মানুষের আয় বাড়ল কি না, কিম্বা অন্যভাবে বললে, মানুষের আয় বৃদ্ধির তুলনায় বাজারে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি কম থাকল কি না— তার ওপরই নির্ভর করে যে একজন মানুষ তার প্রকৃত আয় অর্থাত্ তার ক্রয়ক্ষমতা সে বাড়াতে পারবে কি না।
পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে ‘বাজার’ হলো একটি সর্বব্যাপী বিস্তৃত ব্যবস্থা। অর্থনীতির পুঁজিবাদী রূপান্তর ও বিকাশ যত অগ্রসর হয়, ‘বাজার’ নামক সত্তাটি ততই গভীরভাবে শুধু অর্থনীতিকেই নয়, সামাজিক সম্পর্কগুলো, সংস্কৃতি, রাজনীতি ইত্যাদি সবকিছুকেই গ্রাস করে ফেলতে থাকে। বাজারে প্রধানত দু’কিসিমের সামগ্রীর কেনা-বেচা হয়। এক. পণ্য ও সেবা সামগ্রী, এবং দুই. মানুষের মেহনত করার ক্ষমতা অর্থাত্ শ্রম-শক্তি। কার্ল মার্কস তাত্ত্বিকভাবে একথা প্রমাণ করে গেছেন যে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় পুঁজিপতিরা পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্যই মুনাফার হার, তথা শোষণের হার ক্রমাগত বাড়াতে বাধ্য হয়। এবং এটি তাকে নিশ্চিত করতে হয় মজুরি বৃদ্ধির তুলনায় উত্পাদিত পণ্য অথবা সেবা সামগ্রীর দাম বেশি হারে বাড়ানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে। সে কারণেই বাজার-অর্থনীতিতে আমরা সবসময় যে জিনিসটা দেখতে পাই তা হলো, ক্রমাগত সব জিনিসপত্রের দাম কেবল বাড়তেই থাকে। কেবল একটি পণ্যেরই প্রকৃত মূল্য তুলনামূলকভাবে না বেড়ে ক্রমাগত কমতে থাকে। সেটা হলো মানুষের মেহনত অর্থাত্ তার শ্রমশক্তি। কার্ল মার্কসের তত্ত্ব থেকেই শুধু নয়, আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেও আমরা এই কথার সত্যতার প্রমাণ পাই।
পুঁজিবাদী অর্থশাস্ত্রের আদি তাত্ত্বিক পিতা এ্যাডাম স্মিথ মুক্ত বাজারের তত্ত্বের ভিত্তি হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন বিশুদ্ধ প্রতিযোগিতার (perfect competition) ধারণাকে। বিশুদ্ধ প্রতিযোগিতার শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ক্রেতা, অসংখ্য বিক্রেতা, পণ্যের অবারিত স্থানান্তরের সুযোগ, ক্রেতা ও বিক্রেতা কর্তৃক বাজার মূল্য সম্পর্কে বিশুদ্ধ জ্ঞান ইত্যাদি। এ্যাডাম স্মিথের মতে, আদর্শ পরিবেশে সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য স্থাপনের মাধ্যমে বাজারের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেকোনো পণ্যের মূল্য নির্ধারিত হওয়ার কথা। বাস্তব জগতে আমরা এ্যাডাম স্মিথের বিশুদ্ধ প্রতিযোগিতার শর্ত পূরণ হওয়ার মতো পরিস্থিতি কখনোই খুঁজে পাই না। বাস্তবে যে বাজার ব্যবস্থা আমরা দেখতে পাই সেটা হলো অ-বিশুদ্ধ প্রতিযোগিতা (imperfect competition)। আমরা যে বাজারের দেখা পাই সেখানে পণ্যের অবাধ চলাচল নেই, বাজারে পণ্য-মূল্য সম্পর্কে পরিপূর্ণ তথ্য সকলের আয়ত্তে নেই, পাইকারি ও খুচরা স্তরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যা অগণিত না হয়ে বরঞ্চ স্বল্প সংখ্যকের মধ্যে সীমিত। উত্পাদন পর্যায়ে, বাজারজাতকরণের নানা স্তরের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা দেখতে পাই (ক্ষেত্রবিশেষে) ক্রেতা বা বিক্রেতা হিসেবে একজনের অথবা গুটিকয়েক মানুষের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ। অর্থনীতিতে এই একচেটিয়া কারবারকে অবস্থাভেদে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মনোপলি, মনোপসনি, অলিগোপলি ইত্যাদি অভিধায় চিহ্নিত করা হয়। যেমন- একটি নির্দিষ্ট পণ্যের বাজার যখন কয়েকজন বড় বিক্রেতা মিলে পরস্পর সমঝোতা করে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, তখন সেটাকে মনোপসনি বলা হয়। এটাকেই আমরা চলতি কথায় চিনি, তেল, চাল ইত্যাদির ‘সিন্ডিকেট’ বলে আখ্যায়িত করে থাকি। অন্যদিকে পণ্য, সেবা, পুঁজির বিশ্বব্যাপী অবাধ স্থানান্তরের সুযোগ থাকলেও, শ্রমজীবী মানুষের তথা শ্রম শক্তির অবাধ যাতায়াতের সুযোগ নেই। তাহলে যেটাকে মুক্ত বাজার বলা হয় সেটি আসলে হলো ‘শ্রম শক্তি’ ব্যতীত অন্যান্য পণ্যের জন্য সীমিত মুক্ত বাজার।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে পুঁজিবাদী বিশুদ্ধ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থাতেই একটি সাধারণ মৌলিক সমস্যা বিরাজ করে। অর্থাত্ সাধারণভাবে সবসময় এটা নিশ্চিত করতে হয় যেন ব্যবহার্য পণ্য ও সেবা সামগ্রীর দাম শ্রমজীবীদের মেহনতের দামের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। এ বিষয় সম্পর্কে আগেই বলা হয়েছে। আর, বিশুদ্ধ প্রতিযোগিতার পরিবর্তে বাস্তবে সর্বত্রই আমরা যেখানে অ-বিশুদ্ধ প্রতিযোগিতা দেখতে পাই, সেক্ষেত্রে বাজার-শক্তির স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা দ্বারা দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্বাভাবিক স্তরে রাখাটা তাই সম্পূর্ণ অসম্ভব।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার যে নীতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে তার মূল ভিত্তি হলো, ব্যক্তিমালিকানাধীন মুক্ত বাজার ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে চলা। সেই সাথে আরেকটি লোক দেখানো বা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য যে কার্যক্রম সরকার অনুসরণ করছে, সেটা হলো বাজার ‘মনিটরিং’ করা। ‘মনিটরিং’-এর আসল ফলাফল যে কী, তা আমরা প্রতিদিনই বেশ দেখতে পাচ্ছি। মন্ত্রীদের হম্বি-তম্বি, টিভি ক্যামেরা সাথে নিয়ে মাঝে-মধ্যে বাজার পরিদর্শন, বাণিজ্যিক সমিতির নেতাদের সাথে একাধিক্রমে বৈঠক করে ‘দাম বাড়ানো হবে না’ মর্মে নিষ্ফল প্রতিশ্রুতি আদায়, মাঝে-মাঝে মুনাফালোভী সিন্ডিকেটের উদ্দেশ্যে কড়া ধমকের ভাষায় হুঁশিয়ারি ঘোষণা করা আবার কখনো বা সযত্ন তোয়াজের আচরণ করে তাদের মন ভেজানোর চেষ্টা করা ইত্যাদি। ‘মনিটরিং’-এর এসব পদক্ষেপ দিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে কি?
মোটেও না। দেখা যাচ্ছে যে, বেশি ধমক খেলে, গ্রেপ্তার হয়ে গেলে অথবা গুদাম ঘর সিলগালা করে দেয়া হলে সিন্ডিকেট একত্র হয়ে বাজার থেকে পণ্যসামগ্রী উধাও করে দিচ্ছে। ফলে বাজারে পণ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম কমার বদলে, বাজারের নিয়মের সূত্রেই, উল্টো আরো বেড়ে যাচ্ছে। আর তোয়াজ করলে পণ্য-মূল্য আপন খুশিমতো বাড়িয়ে দিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করার পাশাপাশি অন্যান্য অন্যায্য সুবিধাও তারা সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে। বাজারের অর্থশক্তির কাছে জনগণকে সঁপে দিয়ে তাদেরকে ক্রমাগত দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার হামলায় ক্ষত-বিক্ষত করা হচ্ছে। জনগণের স্বার্থে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সে ক্ষেত্রে যা আসলে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন তা হলো দেশের বাজার কাঠামোর মধ্যে একটি শক্তিশালী ‘গণবণ্টন ব্যবস্থা’ চালু করা। এক্ষেত্রে প্রথমেই যা করা প্রয়োজন তা হলো, অবিলম্বে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা। এজন্য ভোটার আইডি কার্ড প্রদানের কার্যক্রমের কায়দায় সংশ্লিষ্ট দু’তিন কোটি দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের পরিবারের জন্য রেশন কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা করা। কার্ডধারীদের জন্য প্রতি সপ্তাহে রেশন দোকান থেকে কন্ট্রোল দামে চাল, গম, তেল, ডাল, চিনি এবং প্রয়োজন মতো অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সামগ্রী প্রদান করা।
একই সাথে প্রয়োজন, দেশের সর্বত্র রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ন্যায্যমূল্যের দোকান, কৃষি-উত্পাদকদের বাজার-সমবায় কার্যক্রম, ক্রেতা সমবায়ভিত্তিক বাজার কার্যক্রম ইত্যাদির মাধ্যমে দেশব্যাপী শক্তিশালী বিপণন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। পাইকারি বাজারে সরকারের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও খুবই প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগে খাদ্যদ্রব্যসহ অত্যাবশ্যক পণ্যের বাফার স্টক গড়ে তোলা। প্রয়োজন টিসিবি-র কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে অত্যাবশ্যক পণ্যসামগ্রীর আমদানি, মজুদ ও সরবরাহ ব্যবস্থা সচল ও শক্তিশালী করা। এসব সহ আরো নানা উপযুক্ত কার্যক্রম ও স্থায়ী ব্যবস্থার মাধ্যমে শক্তিশালী, সাশ্রয়ী, দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত একটি ‘গণবণ্টন ব্যবস্থা’ (public distribution system) চালু করা হলে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি অনেকটাই মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এটি একটি বিশাল কাজ। এজন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয়, কিংবা নিদেনপক্ষে একটি বিশেষ বিভাগ বা ডাইরেক্টরেট অবিলম্বে স্থাপন করা অপরিহার্য। এগুলোই হলো একটি গণমুখী ও মুক্তিযুদ্ধের ধারার প্রকৃত অনুসারী সরকারের আসল কাজ। পুরনো কায়দায় বাজার অর্থনীতির ‘সুমতির’ ওপর ভরসা করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আগেও যেমন কোনো সরকার কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি, মহাজোট সরকারও যে তা পারবে না, সেকথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
দ্রব্যমূল্য সমস্যা মোকাবিলায় সরকার পুরনো নীতি পরিত্যাগ করে সাহসের সাথে ‘গণবণ্টন ব্যবস্থা’ চালুর নীতি গ্রহণ করে কিনা এবং বাজার অর্থনীতির ব্যর্থ ও ক্ষতিকর দর্শন থেকে মুখ ঘুরিয়ে ’৭২-এর সংবিধানে উল্লিখিত ধারায় অর্থনৈতিক নীতি ও দর্শনের আমূল পরিবর্তন করে কিনা, তার দ্বারাই সরকারকে প্রমাণ দিতে হবে যে সে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ধারার প্রতি ষোলআনা আস্থা রেখে জনগণকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ক্রমাগত কষাঘাত থেকে মুক্ত করার যোগ্যতা রাখে কি না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে সরকার লুটেরা ধনীক শ্রেণি দ্বারা এতোটাই নিয়ন্ত্রিত যে সে তার বর্তমান পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতি ভিত্তিক সামাজিক-অর্থনৈতিক নীতি পরিবর্তন করতে রাজি নয়। বরঞ্চ দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া যেন জনগণকে আরো অতিষ্ঠ করে তুলতে পারে সে জন্য যার মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব তার নিজের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেই গ্যাসের দাম ডবল করতে উদ্যত হয়েছে। তার পরেও কি একথাটি বলা যুক্তিযুক্ত হবে না যে, বর্তমান মহাজোট সরকার হলো বস্তুত পুরনো দুঃশাসনের একটি ‘নব-সংস্করণ’ মাত্র।