Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
file1-1খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার,৩০ আগস্ট ২০১৬: জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। ফলে তার মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ আপিল বিভাগের ১নং বিচার কক্ষে জনাকীর্ণ আদালতে আজ সকাল ৯টায় এ আদেশ দেয়। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
গত ২৮ আগষ্ট আসামী ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে রিভিউ আবেদনের ওপর আজ আদেশ দেয়ার দিন ধার্য করেছিল। গত ২৪ আগস্ট আসামীপক্ষে আনা সময় আবেদন নাকচ করে দিয়ে মীর কাসেম আলীর আইনজীবীকে ওই দিন শুনানি শুরুর নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতি। এরপর গত ২৮ আগস্ট বিষয়টির ওপর মীর কাসেমের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি করেন। আসামীপক্ষের শুনানির বিপরীতে যুক্তি পেশ করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
যে অভিযোগে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদন্ডাদেশ হয়েছে তা সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত হয়নি দাবী করে রায় রিভিউর আবেদন পেশ করেন আসামীপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। অপরদিকে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আসামী মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি পেশ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে আল-বদর নেতা মীর কাসেম আলী চট্রগ্রামে টর্চার সেল ডালিম হোটেলের মূলহোতা ছিলেন উল্লেখ করে মুক্তিযোদ্ধা কিশোর জসিম হত্যায় এ আসামীর সম্পৃক্ততা বিষয়ে দেয়া সাক্ষিদের সাক্ষ্য তুলে ধরেন। এটর্নি জেনারেল আসামীপক্ষে আনা রিভিউ আবেদন খারিজ করে রায় বহাল রাখতে আর্জি পেশ করেছিলেন।
আজ রিভিউ আদেশ পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এটর্নি জেনারেল সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, এ রায় যুগান্তকারী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় ছাত্রসংঘের বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে গঠিত সশস্ত্র আলবদর বাহিনীর চট্রগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার হিসেবে মীর কাসেম আলী মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান, তা ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রমাণিত হয়। আপিলের রায় ও এ রায় রিভিউ আবেদনেও তা প্রমানিত হয়েছে বলে জানান এটর্নি জেনারেল।
গত ৮ মার্চ মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত রায় রায় ঘোষণা করেছিলো আপিল বিভাগ। গত ৬ জুন পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। এর আগে আনীত অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাশেম আলীকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল।
আপিলের রায়ে বলা হয়, আসামিপক্ষে আনা আপিল আংশিক মঞ্জুর করা হয়েছে। এ মামলায় প্রসিকিউশন আনীত অভিযোগের মধ্যে ৪, ৬ ও ১২ নং অভিযোগ থেকে মীর কাশেম আলীকে খালাস এবং ২, ৩, ৭, ৯, ১০, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনালে দেয়া দন্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ। একটি অভিযোগে তার মৃত্যুদন্ড বহাল এবং অপর ছয় অভিযোগে মোট ৫৮ বছরের কারাদন্ডের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ
যে অভিযোগে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদন্ড আপিলেও বহাল রাখা হয়, তা হচ্ছে: মুক্তিযুদ্ধকালে ঈদুল ফিতরের পরে একদিন মীর কাসেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা চট্রগ্রাম শহর থেকে মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে শহরের আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। তাকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলে জসিম মৃত্যুবরণ করলে আরো পাঁচজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশসহ তার মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
গত ১৯ জুন আপিল বিভাগের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন মীর কাসেম আলী। ওই আবেদনে ১৪টি আইনগত যুক্তি তুলে ধরে তাকে বেকসুর খালাস দেয়ার আবেদন জানানো হয়।
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেয়া মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে দেয়া আপিল বিভাগের পূর্নাঙ্গ রায় গত ৬ জুন প্রকাশ করা হয়। মীর কাসেম আলীর আপিল মামলায় রায় প্রদানকারী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রায়ে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে তা প্রকাশিত হয়। এটি আপিলে সপ্তম মামলা ও রিভিউ আবেদনের ষষ্ঠ মামলা যার চুড়ান্ত রায় হলো।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের আদেশে ২০১২ সালের ১৭ জুন মীর কাশেম আলীকে গ্রেফতার করা হয়। সে থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।