
ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ রাজিউর রহমান আজ বাসসকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সোনারায় বাজারে একটি হোটেলে নাস্তা করার সময় ডোমার থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
তিনি জানান, প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গ্রেফতারকৃত ওবায়দুলকে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা থানার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হবে।
নীলফামারী থেকে বাসস সংবাদদাতা জানান, এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে ডোমারের বিভিন্ন স্থানে ডিএমপি পুলিশ, ডোমার থানা পুলিশ ও র্যাব তাকে ধরতে সাঁড়াশী অভিযান পরিচালনা করছিল।
ডোমার থানার ওসি আহমেদ রাজিউর রহমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে থানার এসআই ফজলুল হকের নেতৃত্বে চাঞ্চল্যকর রিশা হত্যা কান্ডের ৭ দিনের মাথায় খুনি ওবায়দুল হক গ্রেফতার হলো।
ওবায়দুলকে গ্রেফতারের পর পর ডোমার থানায় ছুটে যান নীলফামারী পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান। তিনি জানান, এই আসামীকে গ্রেফতারে সারারাত ধরে ডোমারের বিভিন্ন স্থানে অভিযানের পর সকালে সোনারায় বাজারে গ্রেফতার করা হয়। তাকে এখন ঢাকা পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
ওবায়দুল ঠাকুরগাঁও গোয়ালপাড়া মহল্লার আব্দুস সামাদ ও চান্দনী বেগমের পুত্র। তাদের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মিরাটঙ্গী গ্রামে।
ডোমারের হরিনচড়া গ্রামের আফতাব উদ্দিনের পুত্র দুলাল হোসেন (৪০) জানান, সকাল পৌনে আটটার দিকে রিশার হত্যাকারী ওবায়দুলকে সোনারায় বাজারের রফিকুল ইসলামের হোটেলে নাস্তা খেতে দেখি। এর আগে এই খুনির ছবি বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ফেসবুকে দেখেছিলাম। চেহারা মিলে যাওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে ডোমার থানায় মোবাইল ফোন করে খবরটি জানালে ডোমার থানার পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে। এরপর ঘটনাস্থলে আসে ডিএমপি পুলিশ ও র্যাব।
ডোমারে অবস্থানকারী এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোশারফ হোসেন জানান, গত ২৪ আগস্ট বুধবার উইলস ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনের ফুটওভার ব্রিজে রিশাকে ছুরিকাঘাত করে বৈশাখী টেইলার্সের কাটিং মাস্টার ওবায়দুল হক। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৮ আগস্ট রোববার রিশা মারা যায়।
রিশাকে ছুরিকাঘাত করার পরদিন তার মা তানিয়া হোসেন বাদি হয়ে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। রিশার মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষে রিশা হত্যার ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর হিসেবে আখ্যায়িত করা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করে।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেয়েছে, ওবায়দুল প্রায়ই রিশার স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো। ঘটনার দিনও সে সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। রিশা এলে তার সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় ওবায়দুল।
ওবায়দুল ঢাকা থেকে পালিয়ে প্রথমে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে তার বোন ও দুলাভাইয়ের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছিল। সেখানেও পুলিশ অভিযান চালায়। তাকে পাওয়া না গেলেও ওবায়দুলের বোন মোছাম্মৎ খাদিজা বেগম (৩৬) ও দুলাভাই মো. খাদেমুল ইসলামকে (৪৬) আটক করে পুলিশ। তাদের ঢাকায় নেয়া হয়েছে।
গত ২৯ আগস্ট সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোশারফ হোসেন বীরগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় ঘাতক ওবায়দুলের নিজ বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মিরাটঙ্গী গ্রামে ও ঠাকুরগাঁও শহরের গোয়ালপাড়ার বাড়িতে অভিযান চালায়। সুত্রমতে সেখান থেকে পালিয়ে ওবায়দুল নীলফামারীর ডোমারে এসে অবস্থান নেয়।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, প্রায় সাত মাস আগে জামা বানাতে গেলে টেইলার্সে পরিবারের মোবাইল ফোন নাম্বার দেয়া হয়। আর সেই মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরেই রিশাকে উত্যক্ত করে আসছিল ওবায়দুল। এক পর্যায়ে নম্বরটি বন্ধ করে দিলে ওবায়দুল আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ আগস্ট উইলস ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনের ফুটওভার ব্রিজে রিশাকে ছুরিকাঘাত করে ওবায়দুল পালিয়ে যায়।