বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে মানববন্ধন থেকে আগের ঘটনাগুলোর মতো না করে রিশার ‘খুনি’ ওবায়দুল খানের বিচার দ্রুত করার দাবি জানানো হয়।
এই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রিশাকে (১৪) গত ২৪ অগাস্ট স্কুলের সামনের ফুটওভারব্রিজে এক যুবক ছুরিকাঘাত করে। তিন দিন পর হাসপাতালে তার মৃত্যু ঘটে।
ওই ঘটনায় রিশার মা তানিয়া বেগম রমনা থানায় এলিফ্যান্ট রোডের বিপণি বিতান ইস্টার্ন মল্লিকার বৈশাখী টেইলার্সের কর্মী ওবায়েদকে আসামি করে মামলা করেন।
বুধবার নীলফামারীতে ওবায়েদকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় আনার পর বৃহস্পতিবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
ঢাকার আদালতে ওবায়েদকে নিয়ে পুলিশের যাওয়ার মধ্যে রিশার খুনির শাস্তি দাবিতে কাকরাইলে তার বিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হন শিক্ষক-শিক্ষার্থী- অভিভাবকরা।
‘রিশা হত্যাকারীর ফাঁসি চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জান্টিস, ওবায়েদুলের ফাঁসি ফাঁসি’ শ্লোগানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা ফেস্টুনগুলোতে দাবি ছিল- ‘সেদিন তনু/ আজ রিশা/ কাল আমরা, এভাবে আর কত?’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফর রিশা’।
মানববন্ধনে বক্তব্যে রিশার বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী অধ্যাপক আসিফুর রহমান বলেন, “রাষ্ট্রযন্ত্র যদি তনু-আফসানা-মিতুদের হত্যার বিচার করত, তাহলে হয়ত আমাদের কোমলমতি ছাত্রী রিশার রক্ত ঝরত না।”
তনুর খুনি শনাক্ত হয়নি ছয় মাসেও
কুমিল্লা সেনানিবাসে কলেজছাত্রী তনুর লাশ উদ্ধারের পর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো খুনিকে শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
রিশা হত্যার বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এক মাসের মধ্যে শেষ করার দাবি জানিয়ে শিক্ষক আসিফুর বলেন, “এই দেশে বিচার শুরু হলে রায় পেতে ১০ বছর, ২০ বছর লাগে।
“গণআন্দোলনের মাধ্যমে রিশা হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। আমি চাই, তাড়াতাড়ি বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে এক মাসের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা।”
সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “দুই মাস পরে রিশার ফাইনাল পরীক্ষা, স্কুলে পরীক্ষা ছিল, পরীক্ষা দিতে এসে যদি ছাত্র-ছাত্রীরা নিরাপত্তা না পায়, তাহলে তাদের বাবা-মা কি নিরাপদ থাকে?
“স্কুলের পাশে প্রধান বিচারপতি বাসা, পুলিশের কার্যালয়; কীভাবে দিন-দুপুরে রিশাকে হত্যা করে খুনি চলে যেতে পারে? কেন আজ আমাদের রাস্তায় বিচারে দাবিতে রাস্তায় নামতে হয়?”
ওবায়েদুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফের আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন তিনি।
রিশার খুনির শাস্তি দাবিতে সহপাঠীরা
সন্তানদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে অভিভাবক ফারজানা আক্তার বলেন, “রিশা হত্যাকারী ওবায়েদুলের ফাঁসি চাই, আমাদের আর কোনো দাবি নাই।”
শিক্ষার্থী কাজী তাহিদ বলেন, “জনগণের সহায়তায় পুলিশ খুনি ওবায়েদুলকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে, যদি বিচার নিয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়, তবে জনগণকে সাথে নিয়ে আবারও আমরা আন্দোলনে নামব।”
তাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, রিশার জন্য শুক্রবার জুমার নামাজের সময় সারাদেশের মসজিদ গুলোতে দোয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। মন্দিরেও বিশেষ প্রার্থনার আহ্বান রয়েছে তাদের। শনিবার তারা রিশার কবর জিয়ারত করবেন।
এর আগে একই দাবিতে সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত একই স্থানে মহিলা পরিষদের ঢাকা নগর শাখা, ছাত্র ইউনিয়নের পল্টন শাখা এবং উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শান্তি নগর শাখা যৌথভাবে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে।
মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী বলেন, “রিশার হত্যাকারীর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন। একইভাবে তনু-মিতু-আফসানা হত্যার রহস্য উদঘাটন করে তাদের বিচারের সম্মুখীন করুন।”