খোলা বাজার২৪,শুক্রবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬:
মৃত্যুর পর, মৃত্যুর স্তব্ধতা আর স্বেচ্ছা-নির্বাসনকে অতিক্রম করে, বলা উচিত—হার মানিয়ে দেশে ফিরলেন শহীদ কাদরী। জাতীয় শহীদ মিনারে, বুদ্ধিজীবীদের সমাধিস্থলে তাঁকে বাঁধভাঙা আবেগে অভিবাদন জানাল বাংলাদেশ। কবি ও কবিতার মুকুটে এর চেয়ে বড়ো সম্মান ও গৌরবদানের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্ভাস আর কী হতে পারে? বিলম্বিত, মরণোত্তর এ স্বীকৃতিতে আমরা আনন্দিত। উদ্বুদ্ধ।

যে কবিকে দ্রোহ, প্রেম, নাগরিকতা, তীক্ষ শ্লেষ (সন্দীপনীয়) এবং সব শেষে ইতিবাচকতার নিশ্চিদ্র স্বপ্ন নিরন্তর ছুঁয়ে থাকত— তাঁর দ্রোহের উত্স কোথায়? রাষ্ট্রের ক্লীবতা, অন্ধতা, সামাজিক ভাঙন আর প্রাতিষ্ঠানিকতার আগ্রাসন নয় কি? যে ক্ষমতামত্ততা আর অনুশাসন তাঁকে বিদ্রোহী, ক্ষুব্ধ করে তুলতো, যার বিরুদ্ধে তাঁর সহজিয়া, তুখোড় উচ্চারণ প্রবাদবাক্যের মতো যেকোনো সংকটে, দুঃসময়ে স্মরণ করি আমরা— ‘রাষ্ট্র মানেই স্ট্রাইক, মহিলা বন্ধুর সঙ্গে/ এনগেজমেন্ট বাতিল/ রাষ্ট্র মানেই পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত/ ব্যর্থ সেমিনার/ রাষ্ট্র মানেই নিহত সৈনিকের স্ত্রী/ রাষ্ট্র মানেই ক্রাচে ভর দিয়ে হেঁটে যাওয়া/ রাষ্ট্র মানেই রাষ্ট্রসংঘের ব্যর্থতা/… রাষ্ট্র মানেই লেফ্ট রাইট, লেফ্ট রাইট, লেফ্ট!’— তাঁকে আজ ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে নিয়ে তাঁর দেশ যেভাবে সমাহিত করল, তাতে প্রমাণিত হয়ে গেল, সত্ আর শুদ্ধ কবির বচন অনিরুদ্ধ। মৃত্যু তাত্ক্ষণিক একটি ঘটনা মাত্র, মৃত্যুকে আড়াল করে জেগে ওঠে আমিত্বহীন সত্তার স্মৃতি। এও আরেক স্বাস্থ্যময় উদ্যাপন। ব্যক্তি অথবা সমষ্টির বেঁচে থাকার অপ্রতিহত লক্ষণ। কবিতায় আর ব্যক্তিকতায়, সম্পর্কের নির্মাণ আর প্রাণবন্ত স্বভাবে এভাবে জেগে থাকতেন শহীদ কাদরী নিজেও। তাঁর বন্ধুসঙ্গ, দিনযাপনের আড্ডা, আড্ডার বহুগামিতা সময়ের সঙ্গে স্মৃতির সূত্রস্থাপনকে সামনে রেখে আজ তাঁকে স্মরণ করি আসুন। ভারিক্কি চেহারা, দীর্ঘাঙ্গ, চওড়া বুক, বলিষ্ঠ বাহুর শহীদকে পরিচয়হীন দূরত্বে দাঁড়িয়ে খানিকটা গুরুগম্ভীর মনে হতো। কিন্তু প্রথম আলাপেই তিনি যে দরজা খুলে দিতেন, সে দরজার ভেতরে বেজে উঠত তাঁর দিলদরাজ, বন্ধুত্বময়, নতুন বন্ধুসন্ধানী এমন এক চরিত্র, যা যেকোনো কনিষ্ঠ অথবা সমবয়স্ক আগন্তুককে মুগ্ধ করে দিত। সাতাত্তরের দুপুর। ঢাকার বাংলা একাডেমিতে রফিক আজাদের পাশের চেয়ারে বসে আছি। হঠাত্ গহীন পদক্ষেপে তাঁর আবির্ভাব। রফিক আলাপ করিয়ে দিতেই শক্ত কব্জির করমর্দনে অচেনা, অখ্যাত তরুণের ডানহাত বন্দি—বললেন—আমিও ওদেশের লোক। আদি বাড়ি মুরশিদাবাদ। আমাদের পরিবার কলকাতায় থাকত। বাবার কবরও আমার জন্ম শহরে, দেশভাগের পর আমরা ঢাকায় চলে আসি, কিন্তু নাড়ির টান সে তো এক অবিভাজ্য প্রবাহ। বলেই তীক্ষ, শ্লেষাত্মক হাসি। আলাপ চলছে। বাংলাভাষার অন্যতম প্রধান কবিকে সম্মোহিত হয়ে দেখছি। অনাড়ম্বর, নিরহংকার। বলতে বলতে শৈশবের সরণি দিয়ে হাঁটছেন, হাঁটতে হাঁটতে ফিরে আসছেন কবিতায়, ভাঙা-গড়ার বৃত্তান্তে। রফিক তাঁর স্বভাবজাত খিকখিক হাসি ছড়িয়ে বলছেন, চল্ শালা বেরিয়ে পড়ি, তৃষ্ণায় বুক ফাটছে। শহীদ রাজি হলেন না, উঠে পড়লেন। বড়োজোর এক ঘণ্টার আলাপিত সংসর্গ—এটাই প্রথম এবং শেষ চাক্ষুষ। সত্যি কি এদিনই শহীদ কাদরীর সঙ্গে আমাদের আলাপের আরম্ভ এবং এখানেই তার নিবিড় সমাপ্তি? না, এরকম নয়। হতে পারে না। কেন, তা একটু বিশদভাবে বলা প্রয়োজন। ১৯৭১, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলছে। ওপারের লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তুর মতো সীমান্ত পেরিয়ে ওখানকার কবি ও কবিতার সংবাদও আগরতলা হয়ে, শিলচর হয়ে গুয়াহাটিতে পৌঁছে যাচ্ছে। বুঁদ হয়ে শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, ফজল শাহাবুদ্দিন পড়ছি। পাশাপাশি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বরের শহীদ কাদরীও—যাঁর দ্রোহ, বেপরোয়া গদ্যভঙ্গি আর নাগরিকতার কশাঘাত আমরা আরও বেশি পড়তে চাইছি, কিন্তু বই কোথায়? তখনও তাঁর প্রকাশিত সংকলন মাত্র একটি —‘উত্তরাধিকার’ (১৯৬৭), এটিও দুষ্প্রাপ্য। ১৯৭১ সালে, মুক্তিযোদ্ধা বন্ধুর খোঁজে কলকাতায় এসে হাজির। তখনই সংকলিত ‘বাংলাদেশের কবিতা’ হাতে এলো, সম্ভবত কফি হাউসে, ওখানেই শহীদ কাদরীর দীর্ঘ একটি কবিতা পড়ে স্তম্ভিত— বন্ধুরা কোথায়, সবাই ব্যস্ত, নিজেদের কর্মস্থলে, কাগজের অফিসে কিংবা অন্যত্র —শহীদ আড্ডার খোঁজে ঘুরছেন, আত্মকেন্দ্রিকতা, শহরের ব্যস্ততা তাঁকে নিঃসঙ্গ করে তুলছে, নিঃসঙ্গতার ভেতরেও একসময় সংযতস্বরে বাজতে থাকল তাঁর নাগরিক চাবুক—। ওই যে শহীদ-পাঠের শুরু আর অদেখা কবির সঙ্গে পরিচয়ের সূচনা—চার দশকের বেশি সময় জুড়ে আমাদের কবিতা পড়ার অভ্যাসে, আত্মজিজ্ঞাসার মুহূর্তে তিনি প্রায় নৈমিত্তিক হয়ে উঠবেন। তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা; কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই, আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও—এই তিন সংকলনেও তাঁকে আমরা ঘুরে-ফিরে খুঁজব, এ খোঁজার শেষ নেই হয়তো। খুঁজতে খুঁজতে বোঝার চেষ্টা করব তাঁর কবিসত্তাকে এবং এর নির্মাণে তাঁর মেজাজি আড্ডা, বন্ধু-প্রীতি, দেশপ্রেম এবং আন্তর্জাতিকতার নিরলস ভূমিকা।
বেলাল চৌধুরী ঢাকার কাগজে তাঁর প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন—আমাদের ঢাকা, কলকাতার রাত পরিক্রমার দিনগুলোতে সে সবার আগে এগিয়ে যেত। আমরা রাতভর হাঁটতাম, শহরের এ মাথা থেকে ও মাথায়। শহীদ ছিল সবচেয়ে বেশি আড্ডাতুর। শুধু কি আড্ডা আর পথ-হাঁটায় বন্ধুদের আগে থাকতেন শহীদ কাদরী? না, কবিতার স্বতন্ত্র নির্মাণেও তাঁর সমবেত প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার চেয়ে আলাদা— আধুনিকতার দুঃসাহসী, সচেতন অশ্বারোহী।
দেড় দশক আগে, অশোকদা (আজকাল-এর সম্পাদক) বলেছিলেন, শহীদ কাদরী সম্ভবত সমসাময়িক বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিমান, আধুনিক কবি। একটু খটকা লেগেছিল। কারণ, আমরা অনেকেই শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, রফিক আজাদেরও অনুরাগী। আবার সবাইকে একসঙ্গে পড়ে মনে হলো, অশোক দাশগুপ্ত খুব একটা ভুল বলেননি। দিন বদলাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে কবিতার শরীর আর আত্মা, (ফর্ম অ্যান্ড কনটেন্ট) তবু শহীদের প্রতি আমাদের আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে। কেন? সংযত আবেগ, প্রবল দ্রোহেও দায়বদ্ধ সুন্দর তাঁর সহগামী। ব্যক্তিগত কিংবা সমষ্টির ভাঙনে, রাজনীতির ঘোর সংকটেও হতাশা তাঁর কাছে পরাজিত—‘ভয় নেই/ আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী/ গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে/ মার্চ পাষ্ট করে চলে যাবে/ এবং স্যালুট করবে/ কেবল তোমাকে প্রিয়তমা।’
প্রশ্ন উঠবে, এমন একজন কবি, ত্রাণকর্তার মতো সঘন আর বেপরোয়া যাঁর স্বরধ্বনি— তিনি কেন, কোন্ অভিমানে ১৯৭৮ সালে দেশান্তরি হয়ে গেলেন, ভবঘুরের মতো ঘুরতে থাকলেন লন্ডন আর জার্মানিতে, পরে আমেরিকায় থিতু হয়েও দীর্ঘদিন কবিতা থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন বেছে নিলেন? এ কি প্রতিভার আত্মঘাতী সংবরণ ? না সংবরণের আড়ালে ভিন্নতর প্রস্তুতি পর্ব?
শহীদ কাদরীর বন্ধু আর অনুরাগীরা বিদেশে তার স্বেচ্ছা নির্বাসনকে মেনে নিতে পারেননি। পলায়নবাদী, আত্মকেন্দ্রিক বলেছেন কেউ কেউ তাঁকে। সত্যি কি বাংলাদেশ থেকে, বাংলাভাষা থেকে, কবিতা থেকে, জাতির সুখ-দুঃখ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মনে হয় না। অসুস্থতা আর ব্যক্তিগত সংকট ঘেরাও করছিল, স্বজনহীন নিঃসঙ্গতায় হাঁপিয়ে উঠছিলেন। কিন্তু তাঁকে ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি। নিভৃত কবিতা চর্চা তার প্রধান, প্রধানতম আশ্রয় হয়ে উঠল। ফর্ম ভাঙছেন, বিষয় বদলাচ্ছে, দেশাত্মবোধের আত্মসংবরিত আর্তনাদ স্বপ্নের সঙ্গে মর্মের সঙ্গে ‘চেঙ্গিস খানের তরবারির মতো’ ঝলসে উঠছে, ব্যক্তিকতা ও সময়ের ঝড়জল আবার তাঁর কাছে হার মানছে। বহুপ্রজ নন, বরাবর কম লিখতে অভ্যস্ত, পরবাসের নিঃসঙ্গতায়ও এ অভ্যাস বজায় রইল, বজায় রইল শানিত ভাষা, শ্লেষ আর পরাজয়হীন আশাবাদ। তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ, ‘কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই’— প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে। চতুর্থ কবিতা সংকলন, ‘আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও’—বের হলো তিন দশক পর, যা বিদেশবাসের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ, ‘কাসার থালা-বাটির মতো ঝকঝকে’, হীরকখণ্ডের মতো, উজ্জ্বল প্রাণবন্ত। পলায়নপর, পরাজিত, আত্মকেন্দ্রিক বলে যেসব অভিযোগ উঠছিল—শহীদ তার জবাব দিলেন কবিতায়, বুঝিয়ে দিলেন তিনি পালাননি, পালাতে পারেন না, তাঁর দুঃসাহসী কব্জি, তাঁর উচ্চারণের পরিচিত দ্যুতি এখনও অক্ষত—ঐ যে তোমরা যাকে বলো শাপদসঙ্কুল অরণ্য/ওখানেই আমাকে পাবে (ওটাই আমার শেষ আশ্রয়)/না, হাতে সময় নেই/পালাতে হচ্ছে এখুনি/দ্যাখো দ্যাখো/পাহাড়ের সানুদেশ বেয়ে উঠে আসছে তলোয়ার/’—কী অদ্ভুত সমাপন আর সমাপতন। মৃত্যুর পর কাঙ্ক্ষিত, শেষ আশ্রয়ে ফিরে এলেন সংযত ক্ষোভ আর প্রেমের কবি। দেশ তাকে ফিরিয়ে আনল, পূর্ণ করল তার অন্তিম ইচ্ছা।
স্বেচ্ছা নির্বাসন আর প্রায় ৩৮ বছর জুড়ে শহীদ কাদরীর বাধ্যতামূলক পরবাসের কারণ কী? আত্মকেন্দ্রিকতা না স্বাভিমানের দ্রোহ বা দ্রোহজ অভিমানের অভিব্যক্তি? উত্তর খুঁজতে হলে তাঁর শৈশব, তাঁর প্রাণচাঞ্চল্য, তাঁর ভবঘুরে দিনযাপন আর বাংলাদেশকে ঘিরে তাঁর প্রত্যাশার দ্বারস্থ হতে হবে। জানতে হবে কোন্ পরিস্থিতিতে ঢাকা ছেড়ে অনিশ্চিত ঠিকানায় পাড়ি দিতে বাধ্য হলেন? বাংলাদেশে তখন ছদ্মবেশী সামরিক শাসন। নির্বাসনে দিন কাটছে শেখ হাসিনার। নিহত বঙ্গবন্ধুর সব স্বপ্ন, এমনকি ছবিটিও দেশ থেকে উপড়ে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। রাষ্ট্র বহুত্বের প্রতিশ্রুতি বিসর্জন দিয়ে সর্বগ্রাসী অন্ধতার কাছে মাথা নোয়াচ্ছে। রাষ্ট্রের এসব পরাজয়কে, জাতির স্বপ্নহত্যাকে মেনে নিচ্ছে সমাজের একাংশ—অদ্ভুত উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ। পরিবেশ প্রতিকূল অস্থির, শাপদসঙ্কুল। আর্থিক অবস্থা ভারসাম্যহীন, পুরোপুরি বিদেশি সাহায্যনির্ভর। ধূলিঝড়ে ম্রিয়মাণ অধিকাংশ বুদ্ধিদীপ্ত। গুটিকয়েক উজ্জ্বল ব্যতিক্রমকে বাদ দিলে আপসকামিতা কিংবা নীরব অবস্থানকে বরণ করছে মধ্যবিত্তের ব্যঙ্গময় প্রতিনিধিত্ব। সম্মিলিত আলোড়ন নেই, প্রতিরোধ নেই। অদ্ভুত আঁধার এক, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা— হূদয়হীন প্রেমহীন স্থবিরতাকে ঝাঁকুনি দেওয়া দরকার, অতএব নীরব ক্ষোভে অভিমানে স্বেচ্ছা নির্বাসন বেছে নিলেন শহীদ কাদরী। এটাই তার দ্রোহ আর প্রতিবাদের ভাষা—যা ক্রমশ ব্যাপ্ত, সঞ্চারিত হতে থাকল কবিতায়, শব্দের তীক্ষ্নতায় শানিত, তীর্যক আর সংযত আর্তনাদে। নিছক বিরহ নয়, নিঃসঙ্গতার বিচ্ছুরণ নয়, অন্য ধরনের হীরকদ্যুতি যা পরবাসী চুম্বন হয়ে দেশপ্রেম হয়ে শ্লেষ হয়ে ঝলসে উঠল শহীদ কাদরীর কবিসত্তায়। প্রেমিক, জাগ্রত দায়বদ্ধ এ কবির মৃত্যুর স্তব্ধতাকে উপেক্ষা করে জেগে উঠল বাংলাদেশ, জাগছে তাঁর ঘোষিত অঙ্গীকার। আমাদেরও এ অঙ্গীকারের সরব সঙ্গী হওয়া জরুরি। কিন্তু তার লক্ষণ কোথায়? বাংলার পশ্চিমি সমতট, তারই সন্তানের মৃত্যুতে, মৃত্যুর উদযাপনে কেন এত নীরব? জন্ম যেমন কলকাতায়, শহীদ কাদরীর প্রথম প্রকাশও এই শহরে। বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ পত্রিকায়— তখন বয়স মাত্র ১৪। আর সেদিনই ঢাকায় মৃত্যু হয় তাঁর মায়ের। প্রকাশের ওই সুখ আর মাতৃশোক শহীদ কখনও ভুলতে পারেননি। ভোলেননি কলকাতাকে। তাঁর পূর্বপুরুষের ছায়া, এ শহরের কবরে শায়িত বাবার মুখ হামেশা বুকে শুয়ে থাকত, তাঁকে সঙ্গ দিত বাংলার অবিভাজ্য, অখণ্ড প্রবাহ। এ কথা আর এসব তথ্যচারণের প্রয়োজন নেই বুঝি!