Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
images
খোলা বাজার২৪, শনিবার,০৩ সেপ্টেম্বর  ২০১৬: যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন না। কাশিমপুর কারাগারের জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শুক্রবার বিকালে তিনি জানান, প্রাণভিক্ষা না চাওয়ার বিষয়ে মীর কাসেম তার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কারা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এতে করে মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকরে আর কোন বাধা রইল না। ফলে এ সিদ্ধান্ত জানার পর ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে কারাসূত্র জানিয়েছে।

এদিকে এ ফাঁসি কার্যকরকে ঘিরে কারাগার এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আশপাশে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। কারারক্ষীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে জল্লাদ। তবে কাশিমপুর কারাগারেই ফাঁসি হবে এমনটি এখনও কারা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেনি। ইতোমধ্যে যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর ফাঁসির দণ্ড কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করে প্রাথমিক মহড়া দেয়া হয়েছে। জল্লাদ দলকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। কাসেম আলীর প্রাণ ভিক্ষা না চাওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি লিখিতভাবে ঢাকায় পাঠানো হবে। এতে করে সময় লাগবে। ফলে আজ ফাঁসি কার্যকর সম্ভব নাও হতে পারে। শুক্রবার সন্ধ্যা পযর্ন্ত মীর কাসেমের পরিবারকে খবর দেয়া হয়নি। কারারক্ষীদের পাশাপাশি জেলা পুলিশও কারাগারের প্রবেশ পথে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়েছে।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক বলেন, আমরা শুক্রবার দুপুরের পর আবারো তার সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছিলাম। উনি জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন না। আমরা সরকারের আদেশ পেলে রায় কার্যকর করব। এজন্য আমাদের যাবতীয় প্রস্তুতি আছে। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মঞ্চটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। মোম মাখানো দড়িতে বালুর বস্তা দিয়ে প্রাথমিক মহড়া সম্পন্ন হয়েছে। জল্লাদ দল ইতোপূর্বে যুদ্ধাপরাধের মামলায় দণ্ডিত আসামি মতিউর রহমান নিজামী, কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করেছিল। এখন সরকারের সিদ্ধান্ত পেলেই মীর কাসেম আলীর দণ্ড বাস্তবায়ন করা হবে। এ কারাগারে মীর কাসেম এর ফাঁসি বাস্তবায়ন হলে এটাই হবে এখানে কোনো যুদ্ধাপরাধীর প্রথমবারের মতো দণ্ড কার্যকর। তাই কারাগারে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তবে কবে এবং কোথায় তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে সে বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না এলেও কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেলার নাশির আহমেদ আগেই জানিয়েছেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সব প্রস্তুতি তারা নিয়ে রেখেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, দণ্ড কার্যকরের আগে আরো এক দফা পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন মীর কাসেম আলী।

জেলার নাসির আহমদ জানান, কারাগার থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে জানানো হবে। তিনি আরো জানান, প্রাণভিক্ষা না চাওয়ার লিখিত কপি কারাগার থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠাতে ও সেখান থেকে ফাঁসির সময় ও তারিখ জানানো হবে। এতে একটু সময় লাগবে। তাই আজকে আর ফাঁসি দেয়া সম্ভব হবে না। মীর কাসেম আলীকে ৪০নং কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। তিনি সুস্থ আছেন। কারাগারের চিকিৎসকরা তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। তাকে স্বাভাবিক খাবার দেয়া হয়েছে। এর আগে বুধবার বিকালে মীর কাসেম আলীর স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন কারাগারে তার স্বামীর সঙ্গে দেখা করার পর কারা ফটকে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তার স্বামী মীর কাসেম আলী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সিদ্ধাস্তের জন্য তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম (আরমান)-এর জন্য অপেক্ষা করছেন। তার  ছেলে ২৪ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে।

গত মঙ্গলবার ৩০ আগস্ট রাত ১২টা ৪৮ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মীর কাসেম আলীর রিভিউ খারিজ সংক্রান্ত রায়ের কপি গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২এ পৌঁছানো হয়। রাত অনেক বেশি হওয়ায় তখন মীর কাসেম আলীকে তা পড়ে শোনানো হয়নি। বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় আনুষ্ঠানিকভাবে রায় পড়ে শোনানো হয়। কারাকর্তৃপক্ষ বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দফায় প্রাণভিক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে মীর কাসেম আলী সময় চেয়েছেন। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে তখনকার এই বদর নেতাকে ২০১৪ সালে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। চলতি বছর মার্চে আপিল বিভাগেও সেই রায় বহাল থাকায় তিনি রিভিউ আবেদন করেন। গত মঙ্গলবার আপিল বিভাগ কাসেমের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিলে এ মামলার সব বিচারিক প্রক্রিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটে। সেদিন সন্ধ্যায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে পরদিন সকালে তা মীর কাসেমকে পড়ে শোনায় কারা কর্তৃপক্ষ। কাসেম প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না তখনই তা জানতে চাওয়া হয়। তিনি সেই সুযোগ না নিলে বা প্রাণভিক্ষা চেয়ে বিফল হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ তার প্রাণদণ্ড কার্যকর করবে। ৬৩ বছর বয়সী মীর কাসেম আলী কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসির কনডেম সেলে বন্দী রয়েছেন। গ্রেফতারের পর ২০১২ সাল থেকে তিনি এ কারাগারে রয়েছেন। ২০১৪ সালের আগে তিনি এ কারাগারে হাজতবাসকালে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীর মর্যাদায় ছিলেন। পরে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তির পর তাকে ফাঁসির কনডেম সেলে পাঠানো হয়। ২০১৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। চলতি বছর ৮ মার্চ মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গত ১৯ জুন ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন মীর কাসেম আলী। ২৫ জুলাই উচ্চ আদালত রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি এক মাস পিছিয়ে ২৪ আগস্ট পুননির্ধারণ করেন। রিভিউ শুনানির প্রস্তুতির জন্য দুই মাস সময় চাওয়া হয়েছিল। এই রিভিউ আবেদনের ওপর ২৪ আগস্ট শুনানি শুরু হয়। পরে ২৮ আগস্ট শুনানি গ্রহণ শেষ করে ৩০ আগস্ট রায়ের দিন ধার্য করা হয়। ধার্যদিন মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির  বেঞ্চ রিভিউ আবেদন খারিজের রায় ঘোষণা করেন।

কাশিমপুর কারাগারে ও কারাগারের বাহিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কারা ফটকের সামনে জেলা পুলিশের পাশাপাশি কারারক্ষীদের নিরাপত্তা চৌকিও বসানো হয়েছে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ শুক্রবার সন্ধ্যায় কারাগারের বাইরের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের জানান, কারাগারে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেও নিরাপত্তা জোরদারে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকদারীরা নিয়োজিত রয়েছে। জেলখানা সড়কে ও আশপাশের বাসা বাড়িতে নজরদারী করা হচ্ছে যাতে করে কোন দুষ্কৃতিকারী প্রবেশ করতে না পারে। নিরাপত্তায় জলকামানও প্রস্তুত রয়েছে।