সচিবালয়ে রোববার খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির এক বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, টিআর ও কাবিখাতে বছরে সাড়ে আট লাখ টন চাল ও গম দেওয়া হত। এখন ওই পরিমাণ চাল-গমের মূল্য টাকায় দেওয়া হবে।
এতে সাংসদদের ‘সুবিধা হবে’ মন্তব্য করে কামরুল বলেন, টাকায় পেলে তাদের কাজ আরও ‘পরিষ্কার, ভালো আর সুন্দর’ হবে।
“এমপি সাহেবরা বরাদ্দটা চাল বা গম আকারে নিয়ে সেটা আবার বাজারে বিক্রি করে, সেটাকে টাকায় পরিণত করে কাজ করার চেয়ে সরাকরি টাকা গেলে আরও উপকৃত হয় ও সহজে কাজ করাটা সুবিধাজনক হয়।”
টেস্ট রিলিফ (টিআর) এবং কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। এতে কাজের মজুরি হিসেবে চাল ও গম দেওয়া হয়।
গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কাঠামো মেরামতের জন্য চালানো কাবিখা কর্মসূচির উদ্দেশ্য হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও গরিব মানুষের আয় বাড়ানো, দেশের সব এলাকায় খাদ্য সরবরাহের ভারসাম্য এনে দারিদ্র্য বিমোচনে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি।
টিআর কর্মসূচির অধীনে শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মেরামতের মাধ্যমে দুর্বল ও দরিদ্র জনগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সঙ্গে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা বিধানে সহায়তা সরকারের লক্ষ্য।
এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। তবে তারা চাল-গমের বরাদ্দ পান সংসদ সদস্যদের হাত দিয়ে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে সংসদ সদস্যদের সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলেও তারা বরাবরই হস্তক্ষেপ করেন বলে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ।
চলতিবছরের শুরুতে জাতীয় সংসদে কয়েকজন সদস্য চাল ও গম থেকে সরে এসে এসব কর্মসূচিতে নগদ অর্থ বরাদ্দ করতে সরকারের কাছে দাবি জানালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি সংসদে বলেন, “আমরা অর্থমন্ত্রীকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।… এ বিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করে এটা বাস্তবায়ন করবেন।”
এদিকে হতদরিদ্রদের জন্য আলাদাভাবে ‘খাদ্যবান্ধব’ কর্মসূচি নিয়েছে সরকার, যার আওতায় ৭ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজিতে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।
খাদ্যমন্ত্রী জানান, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে সাড়ে সাত লাখ টন চাল লাগবে। আর টিআর-কাবিখায় লাগত বছরে সাড়ে আট লাখ টন চাল-গম। টিআর-কাবিখায় নগদ টাকা দেওয়া হলে সরকারকে আর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির জন্য আলাদাভাবে চাল কিনতে হবে না।
নগদ টাকা বিতরণের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, “হতদরিদ্রের মধ্যে যখন চাল বিতরণ করব, তখন স্বাভাবিকভাবেই চালের দাম কমে যাবে। কাজেই সুবিধার জন্য টাকায় দিলে কাজটা তরান্বিত হবে, গতিশীল হবে, সুবিধা হবে।”
টিআর-কাবিখা প্রকল্পের প্রায় ‘পুরোটাই চুরি হয়’ বলে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বক্তব্যের জের ধরেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিল কি না- এমন প্রশ্নে কামরুল বলেন, “নো নো নো, এ সমস্ত কথাবার্তা কেন?
“আমি তো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিলাম- অন্য প্রশ্ন আনেন কেন? আমাদের সাড়ে সাত লাখ টন নতুন কর্মসূচিতে (খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি) বেরিয়ে যাচ্ছে, টিআর-কাবিখার খাদ্যশস্যটা কারা দেবে? এটা (টিআর-কাবিখা) মঞ্জুর করে ত্রাণ মন্ত্রণালয় কিন্তু চাল-গম যায় আমার এখান (খাদ্য মন্ত্রণালয়) থেকে।
“টিআর-কাবিখাতে সাড়ে আট লাখ টন খাদ্যশস্য দিতে হলে আমি কোত্থেকে দেব? আমার ক্রয়টা আরও বাড়াতে হবে। এত ক্রয় বাড়ানো সম্ভব না। একটা টার্গেট আছে, একটা সীমা আছে, একটা হিসাব আছে। সব কিছুকেই হিসাবের মধ্যে রাখতে হয়। বিদেশ থেকে গম আমদানি বেশি করতে হচ্ছে।”
অন্যদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।