Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
images
খোলা বাজার২৪,মঙ্গলবার,০৬ সেপ্টেম্বর  ২০১৬ঃ সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজ্জামেল হকের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের তারিখ অর্থাৎ ২৭ মার্চ থেকে দুই মন্ত্রী কর্তৃক স্বাক্ষরিত সকল আদেশ বাতিল ঘোষণা করার আহবান জানায় দলটি।
সোমবার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এ দাবি করেন।

মওদুদ আহমদ বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি মনে করে, সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি রক্ষার্থে কাল বিলম্ব না করে দুই মন্ত্রী অবিলম্বে মন্ত্রীত্ব ও জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করা উচিৎ। আমরা অবিলম্বে দুই মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি করছি। সেই সঙ্গে গত ২৭ মার্চ থেকে দুই মন্ত্রী কর্তৃক স্বাক্ষরিত সকল আদেশ বাতিল ঘোষণার আহ্বান জানাচ্ছি। তা না হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সুদুরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত করে ছয় মাস আগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যে সাজা দিয়েছিল, সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, আদালত নিয়ে মন্তব্য করে অবমাননার দায়ে দণ্ডিত দুই মন্ত্রী তাদের সংবিধান রক্ষার শপথ ভেঙেছেন। যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর চূড়ান্ত রায়ের আগে সর্বোচ্চ আদালতকে নিয়ে করা মন্তব্যের জন্য দুই মন্ত্রীর নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের আপিল বিভাগ  গত ২৭ মার্চ ওই রায় দেয়। সেই রায় বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। রায়ে বলা হয়, সংবিধানে বর্ণিত আইনের শাসন রক্ষার যে শপথ বিবাদীরা নিয়েছেন, সেই দায়িত্বের প্রতি তারা অবহেলা করেছেন। তারা আইন লঙ্ঘন করেছেন এবং সংবিধান রক্ষা ও সংরক্ষণে তাদের শপথ ভঙ্গ করেছেন।

সরকারের দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রসঙ্গে সাবেক আইন মন্ত্রী মওদুদ আহমদ বলেন, এই রায়ের পর সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের কেউ এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেননি। উদ্ভুত এই পরিস্থিতি জাতির জন্য এক ভয়ানক জাতীয় ও সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করেছে। কারণ দেশে ১৬ কোটি মানুষের ভাগ্য সোমবার আদালত অবমাননা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দুই মন্ত্রীর হাতে বন্দি। সাজাপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছে। একজন মন্ত্রী শুধুমাত্র দেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, কোনো দলের নয়। দুই মন্ত্রীর মধ্যে একজন আইনজীবী হওয়া সত্ত্বেও বিচার বিভাগ সম্বন্ধে এরকম নেতিবাচক মন্তব্য এবং আইনের প্রতি এরকম বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন কোনভাবেই কাম্য নয়।

মন্ত্রীদ্বয়ের স্বপদে থাকার বৈধ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মওদুদ আহমদ বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর দুই মন্ত্রীর নৈতিকতার অবক্ষয় প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। বিষয়টি শুধুমাত্র আইনগত নয়, নৈতিকতার সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত। আমরা মনে করি, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দুই মন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিৎ। দি পাবলিক সার্ভেন্টস (ডিসমিসাল অন কনভিকশন অডিরেন্স, ১৯৮৫ এর ধারা- ৩ (১) অনুযায়ী রায় ঘোষণার তারিখ হতে তারা (মন্ত্রীদ্বয়) পদচ্যুত হবেন। কারণ কোনো পাবলিক সার্ভেন্ট আদালত কর্তৃক ফৌজদারী মামলায় ১০ হাজার টাকার অধিক জরিমানা করা হলে তিনি তার স্বপদে বহাল থাকতে পারেন না। এক্ষেত্রে ২০১২ সালে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানী এবং ২০০৬ সালে ভারতের মহারাষ্ট্রের পরিবহন মন্ত্রী স্বরুপ সিং নায়েক ও ১৯৮২ সালে কেরালার মন্ত্রী আর বালা কৃষ্ণ পিল্লাইয়ের পদত্যাগের নজির তুলে ধরেন মওদুদ আহমদ।

পদত্যাগের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্টের প্রবীন আইনজীবী মওদুদ বলেন, একদিকে ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণ, সেই সঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত মন্ত্রী দিয়ে মন্ত্রিসভা পরিচালনা করা হলে আইনের শাসন বাঁধাগ্রস্থ হবে এবং বিচার বিভাগের মান ক্ষুন্ন হবে। আমরা মনে করি, আশা করি এই দুই মন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন। আদালতের আদেশের কারণে যদি তাদের পদত্যাগ করতে হয়, তাতে তাদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে না। বরং যদি তারা পদত্যাগ করেন, আমি মনে করি, তারা নিজেদের আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখবেন। সরকার ও দলের ভাবমূর্তিও রক্ষা পাবে।

মন্ত্রীরা পাবলিক সার্ভেন্ট কিনা প্রশ্ন করা হলে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, তারা (মন্ত্রী) পাবলিক সার্ভেন্টের মধ্যে পড়ে। আপনারা যদি প্যানাল কোডে দেখেন। অনেক সিদ্ধান্ত আমাদের সুপ্রিম কোর্টেরও আছে- একজন এমপি একজন পাবলিক সার্ভেন্ট। মন্ত্রীরাও এমপি, তারাও পাবলিক সার্ভেন্ট। আমি মনে করি, এই পদত্যাগ তাদের নিজের, তাদের দলের ও সরকারের জন্য মঙ্গল হবে। দুই মন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে কী বিধান রয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো সুপ্রিম কোর্টের রায়। আমরা অপেক্ষা করবো, সুপ্রিম কোর্ট কী করে।

রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের আলোচনা সভা করতে না দেয়ায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান মওদুদ। মিলনায়তনের ভাড়া, পুলিশের কাছে অবহিতকরণসহ সব কিছু করার পরও আমাদের ছাত্র দলকে আলোচনা সভা করতে দেয়নি। পুলিশ মিলনায়তনের গেইটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমরা এহেন ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন, ব্যারস্টার জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট সালেহ একরাম সম্রাট প্রমুখ।