ব্যবসায়ী আক্কাস বলেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি আমাকে বিমানবন্দর থেকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার স্নিগ্ধ আক্তার ও তার দল। ওই দিন রাতেই আমার কাছ থেকে ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকা কেড়ে নেয়া হয়। আরো ৮০ লাখ টাকা দেয়ার জন্য চাপ দেয় তারা। রাতে স্নিগ্ধ আক্তার প্রথমে লাথি মেরে আমাকে বসা থেকে ফেলে দেন। এরপর বেত দিয়ে বেধড়ক পেটান। আমাকে বলেন, তুই অস্ত্র ব্যবসা করস, তুই মাদক ব্যবসা করস। বাঁচতে চাইলে আরো ৮০ লাখ টাকা দিবি। এ সময় আক্কাস আরো ১০ লাখ টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু সিগ্ধ এতে রাজি হয়নি।
দুই দিন আটকে রাখার পর ২ মার্চ সহকারী কমিশনার স্নিগ্ধ আক্তার ও তার দলের দাবি অনুযায়ী ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার ব্যবস্থা করেন আক্কাস। দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিকাশ ও এসএ পরিবহনের পার্শ্বেল সার্ভিসে আসে ওই টাকা। টাকা তোলার দায়িত্বে ছিলেন ইন্সপেক্টর আলীম, এসআই মোতাহার ও এএসআই আশরাফ।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই দিনই শান্তিনগরে ইভা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি বিকাশের দোকান থেকে আক্কাসের ভাইয়ের পাঠানো ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা তুলে নেন এএসআই আশরাফ। দোকান মালিক জানান, আক্কাসের ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি টাকা তুলে নেয়। ফোন নম্বরের শেষ ডিজিটগুলো বললে তাকে টাকা দিয়ে দেয়া হয়।
একইভাবে এবি ব্যাংকের কাকরাইল শাখা থেকে চার লাখ টাকা তোলেন এএসআই আশরাফ। সেখানে তিনি প্রমাণ হিসেবে চেকে নিজের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, নিজের মোবাইল নম্বর ও স্বাক্ষর করেন। ব্যাংকের কাউন্টার ম্যানেজারের সঙ্গে ফোন দিয়ে আক্কাসের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন আশরাফ। ব্যাংকের কাউন্টারে সিসি ফুটেজে যার প্রমাণ রয়েছে।
একইভাবে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের নয়াপল্টন শাখা থেকে আক্কাসের অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা হয় আরো এক লাখ টাকা। ওই টাকা তোলার সময়ও এএসআই আশরাফ প্রমাণস্বরূপ নিজের পরিচয়পত্র জমা দেন। পূরণ করেন অনলাইনে লেনদেনের স্লিপ।
বাকি এক লাখ টাকা তোলা হয় শান্তিনগরের এসএ পরিবহনের শাখা থেকে। সেখান থেকেও এএসআই আশরাফ আক্কাসের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে টাকা তোলেন। এই টাকা দেয়ার পরও আক্কাসকে চালান করা হয় অস্ত্র মামলায়। ৯ মার্চ আক্কাসের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এর ৫ দিন পর আক্কাসকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন স্নিগ্ধ আক্তার।
আক্কাস বলেন, আমি পল্টন থানায় জিডি করায় তারা আবার আমাকে তুলে নেয়ার হুমকি দিয়েছে। আমি এ দেশের নাগরিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই। চট্টগ্রামের এ ব্যবসায়ী প্রতিকার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরে আবেদন করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে সহকারী কমিশনার স্নিগ্ধ আক্তার, ইন্সপেক্টর আবদুল আলীম, এসআই মোতাহার, এএসআই আশরাফ ও কনস্টেবল রহমতের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের সিকিউরিটি সেল (শৃংখলা শাখা)।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দিদার আহমেদ বলেন, কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে তার দায় বাহিনী নেবে না। আমরা প্রাথমিক তদন্তে কিছু প্রমাণ পেয়েছি। পুলিশ সদর দফতর যে সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে।
এ বিষয়ে এসি স্নিগ্ধ আক্তার, পরিদর্শক আবদুল আলীম বা অন্যরা কথা বলতে রাজি হননি।