খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬: দিনাজপুরে কাপড় দোকানে কর্মচারীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত ব্যতিক্রমধর্মী বউ বাজার। এই বাজারে আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে।
ছুটির দিনে নিজেদের আর্থিক অভাব দুর করতে ও ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে দোকান কর্মচারীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে শহরের বাসুনিয়াপট্রিতে এই বউ বাজার বসে প্রতি শুক্রবার, চলে আধা বেলা। বউ বাজারের সব গ্রাহকই মহিলা। ক্রেতারা বউ বাজারে এসে যেমন স্বল্প মূল্যে তাদের পণ্যের চাহিদা মেটাচ্ছেন তেমনি ভাবে ছুটির দিনে দোকান কর্মচারীরা ব্যবসা করে কিছুটা হলেও লাভবান হচ্ছেন। এই বউ বাজারে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে কাপড় কম দামে কিনতে পারায় মহিলা ক্রেতারাও বেশ খুশি।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের বাসুনিয়াপট্রিতে প্রতি শুক্রবারের ন্যায় সকাল ৭ টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ২ টা পর্যন্ত এই বউ বাজারের কেনা বেচা চলে। কোরবানী ঈদ উপলক্ষ্যে একটু বেশি সময় ধরেই দোকান খোলা রাখেন তারা। ক্রেতা বিক্রেতার পদভারে মূখরিত হয়ে উঠেছে বউ বাজার। কোরবানী ঈদ উপলক্ষ্যে সকাল থেকেই মহিলা ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা যায় এই বউ বাজারে। উন্নতমানের দোকানে যেসব কাপড় পাওয়া যায় ঠিক সেইসব কাপড় এই বউ বাজারেও পাওয়া যায়। তবে সাধারন বিপনী বিতান গুলোর থেকে কম মূল্যে পাওয়া যায় এসব অস্থায়ী দোকানে।
কিভাবে কম মূল্যে কাপড় বিক্রি করছেন জিজ্ঞাসা করলে বউ বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে যারা ব্যবসা করেন তাদের দিতে হয় না দোকান ভাড়া, নেই কর্মচারীদের বেতন এবং নেই কোন ইলেক্ট্রনিক্স বিল বা খাজনা। তাই বাইরে থেকে কাপড় যে দামে কেনা হয় তার উপর কিছুটা লাভ রেখেই সেসব কাপড় বিক্রি করা হয়। কিন্তু এই কাপড়গুলোই যখন উন্নতমানের দোকানে বিক্রি হয় তখন সেগুলোর উপর দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি যোগ করে এসব কাপড়ের মূল্য বেশি হয়ে যায়।
একই কাপড় কম মূল্যে পাওয়া যায় স্বীকার করে কাপড় কিনতে আসা শহরের উপশহর এলাকার আঞ্জমান আরা, ঘাসিপাড়ার কাজলি বেগম, কলেজ ছাত্রী আয়শা আকতার বানু এবং হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তনু জানান, কম মূল্যে কাপড় পাওয়া যায় সেজন্যই আমরা শুক্রবার করে এসব দোকানে কাপড় কিনতে আসি তাছাড়া মেয়েদের জন্য এই বউ বাজার অত্যান্ত নিরাপদ।
বউ বাজারের বর্তমান পরিচালক বিমল আগরওয়ালা জানান, মোট ২ শতাধীক কাপড়ের দোকান কর্মচারী এসব দোকানের মালিক। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে কাপড় কিনে নিয়ে এসে এসব দোকানে বিক্রি করে। কিন্তু ছুটির দিনে বাড়তি আয়ের জন্য তারা এই ব্যবসা পরিচালনা করে। আবার তাদের কাপড় ও পুঁজি দিয়ে সহযোগীতা করি। এবার কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে বউ বাজারের দোকানদাররা রকমারি কাপড় সংগ্রহ করেছে। সব ধরণের কাপড়ের মজুদ থাকায় ও দামে কম পাওয়ায় বউ বাজারটি দিনাজপুরের মহিলা ক্রেতাদের কাছে বেশ জন প্রিয় হয়ে উঠেছে।
তবে ঈদের আগে ক্রেতাদের ভীড় বেড়েছে। এখানে আগে সাধারণত গরীব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মহিলারা কাপড় কিনতে আসত। কিন্তু বর্তমানে ধনী পরিবারের মহিলারাও আসছে এখানে কাপড় কিনতে।
এই বউ বাজারে ক্রেতাদের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে বিমল আগাওয়াল জানান, বউ বাজারের নিরাপত্তায় নেই কোন পুলিশ বা আনসার ভিডিপির সদস্যরা। তবে প্রতি শুক্রবার নিজেদের ব্যবস্থাপনায় গার্ড নিয়োগ করে দেয়া হয়। বাসুনিয়াপট্টির যে রাস্তায় বউ বাজার বসছে সে রাস্তা দিয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বউ বাজার চলাকালীন সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে ক্রেতারা স্বাচছন্দে কেনা কাটা করতে পারেন।
প্রসঙ্গ ক্রমে উল্লেখ্য যে, এ বউ বাজারে পুরুষ এবং নারী সকলের কাপড় পাওয়া গেলেও ক্রেতারা সব মহিলা হওয়ায় এই বাজারের নাম বউ বাজার। দীর্ঘদিন থেকে প্রতি শুক্রবার এই বউ বাজর বসছে। তবে সামনে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা তাই এই বউ বাজারে প্রচুর ভীড় লক্ষ্য করা গেছে।