Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

92খোলা বাজার২৪,শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬: এক মাস আগে গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে গিয়েছিলেন ৩০ বছরের টগবগে যুবক ইদ্রিস আলী। সংসারের বড় সন্তান ও প্রধান উপার্জনকারী ইদ্রিস বাবা-মা ও একমাত্র ছেলে সাব্বির (১০)কে বলে এসেছিলেন- কোরবানি ঈদে ছুটি পাবার সম্ভবনা কম। এজন্য ঈদের আগে বাড়ি এসেছেন। কিন্তু কে জানতো, ওই যাওয়াই ছিল জীবিত ইদ্রিসের শেষ যাওয়া। শোকাহত স্বজনরা এখন অপেক্ষা করছেন ইদ্রিসের লাশের জন্য। টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকার টাম্পাকো ফয়সল লিমিটেড প্যাকেজিং কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে সবার থেকে চিরতরে ছুটি নিতে হলো ইদ্রিসকে।
শনিবার বেলা ৩টার দিকে নিষ্প্রাণ ইদ্রিস আলীকে পাওয়া যায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের পাশে। ট্রলির উপর ইদ্রিস আলীকে রাখা হয়েছিল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সাদা রঙা লাশবাহী ব্যাগে। ব্যাগের উপরে স্কচটেপ দিয়ে ইদ্রিস আলীর ছবি ও এক টুকরো কাগজ লাগানো ছিল। কাগজে হাতে লেখা ছিল নাম-পরিচয়। ট্রলির নিচে পড়ে যাওয়া ফোটা ফোটা রক্ত শুকিয়ে অনেকটাই কালচে বর্ণের হয়ে গিয়েছিল।
মাছি ভনভন করে উড়ছিল-বসছিল লাশের ব্যাগে। খুব কাছেই গগন বিদারী আর্তনাদ করছিলেন- বয়সে ইদ্রিসের ছোট ও একমাত্র বোন সামিনা। মোবাইল ফোনে গ্রামের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, আর ভাইকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বুকফাটা চিৎকার করছিলেন। তার পাশে বসা ইদ্রিস আলীর শ্যালিকা ও আপন মামা আবদুল গফুরের অবস্থা অনেকটা সামিনার মতোই ছিল।
গফুর কাঁদতে কাঁদতে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ঈদের আগে বাড়ি থেইক্কা আইস্যা আমারে কইছিল, ঈদে বাড়িত যাইব না, ছুটি নাই। কিন্তু এমনে আমাগোরে ছাইরা ভাইগ্না এক্কারে গেল গা, এইটা কেমনে হয়। ওর বাচ্চা কারে বাপ কইয়া ডাকব, ওর বাবা-মায়েরে কে দেখব . . .’।
জানা যায়, পাঁচ ভাই, এক বোনের মধ্যে ইদ্রিস সবার বড়। প্রায় পাঁচ বছর আগে ইদ্রিস চাকুরি নেন টাম্পাকো ফয়সল লিমিটেড প্যাকেজিং কারখানায়। তার তিন ভাই সংসার করছেন অন্যত্র। তার আয়েই চলতো বাবা-মা-ছোট ভাই ও সন্তান। ইদ্রিসের স্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের গার্মেন্টসকর্মী ও ছেলে সাব্বির নিজ গ্রামের একটি মাদ্রাসায় পড়ছে।
এ প্রতিবেদক লাশের পাশে থাকাকালীন ইদ্রিসের বিধবা বোন সামিনা কিছুক্ষণ পর পর যাচ্ছিলেন ভাইয়ের লাশের পাশে। লাশ ছুঁয়ে আহাজারি করে বলছিলেন, ‘ভাই রে, আমারে কে দেইখা রাখব, কেডায় আমার খবর লইতে বাসায় যাইব। তুমি উঠো ভাই, তোমার কিছু হয় নাই . . . ’।