Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

95খোলা বাজার২৪,শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬: দু’দিন পরই ঈদ। বাবা-মা’র সঙ্গে ঈদ করার জন্য শনিবারই গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জে যাওয়ার কথা ছিল অটোরিকশা চালক রাশিদের।

শুক্রবার যানজট থাকায় তার আজ (শনিবার) দুপুরে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার কথা। কিন্তু তার আর বাড়ি ফেরা হলো না। চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
টঙ্গী হাসপাতালের সামনে বাবা সজিম উদ্দিন ও দুই বোন মজিদা এবং বেদানা কান্নারত কণ্ঠে এসব কথা জানান।
বোন মজিদা জানান, দুপুরে বাড়ি যাওয়ার আগে সকালে অটোরিকশা নিয়ে বের হন রাশিদ।
সকাল ৬টার কিছু আগে বিসিক এলাকায় টাম্পাকো কারখানা অতিক্রম করার সময় হঠাৎ ওই কারখানার বয়লার বিস্ফোরণের কারণে দেয়াল চাপা পড়ে রাশিদ নিহত হয়। রাস্তায় তার ভাইয়ের রিকশা পড়ে থাকতে দেখে তার সন্ধান নিতে এসে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় তার ভাইকে দেখতে পান। নিহত রাশিদের তিন বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
স্ত্রী নিগার সুলতার সঙ্গে সকালে শেষ কথা হয় স্বামী প্রকৌশলী আনিসুর রহমানের।
স্ত্রী সন্তানকে ঘুমের মধ্যে রেখেই সকালে ডিউটিতে আসেন আনিস। হটাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভাঙ্গে নিগারের।
বাইরে বেরিয়ে তাকিয়ে দেখেন আগুন এবং ধোঁয়া বের হচ্ছে। খবর নিয়ে জানতে পারেন তার স্বামীর যে কারখানায় চাকরি করেন সেখানেই এ বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন লাগে। সাত বছর ধরে জেনারেটর ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন আনিসুর। আজ অফিস ছুটির পর কেনাকাটা করবেন স্ত্রী সন্তানের জন্য। কিন্তু স্ত্রী ও সন্তানের জন্য কেনাকাটা এবং ঈদ করা হলো না আনিসের। স্ত্রীর বুক ফাটা আর্তনাদে হাসপাতাল এলাকা ভারি হয়ে উঠে।
আনিস কারখানা সংলগ্ন স্থানীয় গোপালপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। দুই শিশু ছেলে নাফিস (৫) ও নাবিল (৩) বাবার সঙ্গে ঈদের পর দাদা-দাদির সঙ্গে ঈদ করা কথা ছিল।
ওই কারখানার অপারেটর মাইনুদ্দিন সকালে কারখানায় আসেন। মাইনুদ্দিনের ভাতিজি সুলতানা বেগম জানান, তারা মুরকুন এলাকার রাসেল মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতো।
ঈদের পথে পথে যানজট। তাই তাকে সে জন্য ঈদের পর বাড়ি যাওয়া কথা জানিয়েছিল তার বাবা-মাকে। শনিবার ছুটির পর কেনাটাকা করবে স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মায়ের জন্য। কিন্তু সকালেই সব ইচ্ছে শেষ হয়ে যায় মাইনুদ্দিনের। স্ত্রী ও তার স্বজনরা হাসপাতাল থেকে লাশ নেয়ার সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
শনিবার গাজীপুরের বয়লার কারখানায় বিস্ফোরণের পর হাসপাতাগুলোতে স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মরদেহ ঢাকা মেডিকলে কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।