Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

13kখোলা বাজার২৪, রোববার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬: ২৪.৬০ বর্গ কিলোমিটারের উপর প্রতিষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানির অভাবে একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ৪৩ হাজার পাঁচ পরিবারের প্রত্যেকটিতে বিশুদ্ধ পানির হাহাকার চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এমনকি এই বর্ষা মৌসুমেও অধিকাংশ পরিবার পাচ্ছে না খাবার পানি। পুরো পৌরসভায় রয়েছে মাত্র ১৭টি গভীর নলকূপ। ইতোমধ্যেই আর্সেনিকের কারণে একাধিক গভীর নলকূপ বন্ধ করলেও তার বদলে কোন বিকল্প নিশ্চিত করতে পারেনি। যে ১৭টি গভীর নলকূপ এখন পানি সরবরাহ করছে তার মধ্যে অধিকাংশ পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করতে পারছে না। এমনকি একাধিক গভীর নলকূপ পানির স্তর না পাওয়ার কারণে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাকি নলকূপ ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরের খোঁজ পেলেও পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে না। এর প্রভাব পড়ছে পাইপ লাইনে। পুরো পৌরসভায় পানির লাইন স¤প্রসারিত হলেও কোন পরিবার পানি পাচ্ছে না। এমনকি এমনও মহল্লা রয়েছে যেখানে সপ্তাহে একদিনও পানি লাইনে সরবরাহ করতে পারে না। ফলে এসব মহল্লার মানুষ বাধ্য হয়ে পচা ডোবা, নালা, নদী ও খালের পানি ব্যবহার করছে। এমনকি নামে আধুনিক সদর পাসপাতালের পানি সরবরাহে ছেদ পড়াতে প্রায় দু’শ’ রোগী ও তাদের তত্ত্বাবধানকারী সহস্রাধিক মানুষ প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানির অভাবে বাধ্য হয়ে নদীর পানি খাচ্ছে ও ব্যবহার করছে।

সিভিল সার্জন বার বার পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্ণা দিয়েও হাসপাতালে পানি পাচ্ছে না। একই অবস্থা বিভিন্ন অফিস, স্কুল-কলেজ ও প্রতিষ্ঠানে। বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে তারা সাধারণ টিউবয়েল বসিয়ে লোহা ও আর্সেনিকযুক্ত পানি খাচ্ছে। সেই সাথে পৌরসভা সরবরাহকৃত পানি ব্যবহারকারী লক্ষাধিক মানুষ যারা ১১৭.৬৯ কি. মি. পাইপ লাইনে পানি পাবার কথা, তারা বহু চেষ্টা করেও পানি পাচ্ছে না। তবে তারা পাচ্ছে নিয়মিত পানির বিল। পানি পান বা ব্যবহার না করেও নির্দিষ্ট সময়ে পানির বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হলে সাধারণ ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর উপরে উঠে আসার কথা। কিন্তু জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে খরা মৌসুমে পানির স্তর যেভাবে বা হারে নিচে নেমেছে প্রচ- বর্ষা তা সামাল দিতে পারছে না। যার কারণে দ্রুত পানির স্তর উঠে আসার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। যার কারণে পৌরসভার ১৮টি গভীর নলকূপের কোনটিতেই পর্যাপ্ত পরিমাণে ভূ-গর্ভস্থ পানি পাচ্ছে না। ফলে ১১৮ কিলোমিটারের ওয়াটার পাইপ লাইনে পানি যাচ্ছে না। যার কারণে ৪৫ হাজার পরিবারের কেউ পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে না। পৌরসভা সংলগ্ন ইসলামপুর মহল্লায় কয়েক সপ্তাহ ধরে এক ফোটাও পানি পাচ্ছে না। ফলে নাওয়া খাওয়া বন্ধ রয়েছে প্রতিটি পরিবারে। তাদের আহাজারি থাকলেও পৌরসভা খুবই অসহায়।

পৌর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হচ্ছে নতুনভাবে কোন এলাকায় গভীর নলকূপ বসাতে গেলে বেরিয়ে পড়ছে আর্সেনিক কিংবা লোহা মিশ্রিত পানি। ফলে বাধ্য হয়ে সেই এলাকা ছেড়ে আসছে পৌরসভা। পুরো পৌর এলাকার প্রায় প্রতিটি এলাকার ভূ-গর্ভস্থ পানি লোহা ও আর্সেনিক মিশ্রিত হবার কারণে পৌরসভা আর সাহস করে নতুন গভীর নলকূপ কসানোর চেষ্টা করছে না। বিকল্প হিসেবে চাচ্ছে মহানন্দা নদীর পানি শোধন করে পৌরবাসীকে সরবরাহ করতে। ”সার্ফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট” নির্মাণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অনুমোদনসহ ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯৫ হাজার ২৮২ টাকা বরাদ্দ দিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরকে প্রকল্প জরুরী ভিত্তিতে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিলেও কাজে গতি নেই। ২০১৪ সালের ২২ আগস্ট খালঘাট এলাকার প্রায় ৮ একর জমির উপর কাজ শুরু করলেও নির্দিষ্ট সময়ে তা শেষ হয়নি। বাস্তবায়নের মেয়াদ দুই বছর থাকলেও সময়সীমা আর শেষ হচ্ছে না। বার বার সময় বর্ধিত করার কারণে প্রকল্পটির ভাগ্য অনেকটাই অনিশ্চত। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য বিভাগের খামখেয়ালি। নির্বাহী প্রকৌশলী রাজশাহীতে থেকে ইচ্ছেমতো অফিস করেন। এর বাইরেও রয়েছে জনবল সংকট। এক কথায় অফিসের অবস্থা অনেকটা লেজেগোবরে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রকল্পের ঠিকাদার কাজ করছে সেইভাবে। ঠিকাদারের অভিযোগ একদিকে অফিসের অনিয়মিত তদারক, ফান্ড রিলিজে গড়িমসি বা অবৈধ শর্তারোপ তারা বেকায়দায় রয়েছে। এর পরেও লেবার সংকটের কারণে ইচ্ছে থাকলেও কাজে গতি আনা সম্ভব হচ্ছে না। তার পরেও মূল কাঠামোর কাজ ও যন্ত্রপাতি বসানোসহ নদীতে ভাসমান প্ল্যাটফরম নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য, মহানন্দা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে তা শোধনের পর পাইপ লাইনে সরবরাহ করা হবে। পৌরসভার প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ সুপেয় পানির সরবরাহ পাবে। এই শোধনাগারের উৎপাদনক্ষমতা হবে প্রতিঘণ্টায় ৩৫০ ঘন মিটার। এখনও ভবন ও মূল অবকাঠামো ঢালাইয়ের কাজ চলছে। অনেক ভবনের ফিনিশিং কাজ এখনও চলছে। এরপর রয়েছে বিদ্যুত সংযোগের কাজ। যা খুবই জটিল ও সময়সাপেক্ষ । তবে নতুন কোন পাইপ লাইন স¤প্রসারণ কিংবা প্রতিস্থাপন না করে পুরান পাইপ লাইনগুলো পরিষ্কার করে পানি সরবরাহ করবে। সব মিলিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ জোর দিয়ে বলছে, আগামী ডিসেম্বরে পানি সরবরাহ করতে পারবে। এইভাবে আশ্বস্ত করলেও একাধিক সূত্র বলছে, আগামী বছরের জুন পার হয়ে যাবে পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে। একদিকে পৌরসভা বলছে এই প্রকল্প চালু হলে বিদ্যুত খরচ দ্বিগুণ হবে। যার দায়দায়িত্ব গ্রাহককে বহন করতে হবে। অর্থাৎ পানির মাসিক বিল দ্বিগুণ করার পাঁয়তারা চলছে এখন থেকেই। বর্তমানে পানির সংযোগ রয়েছে ১১ হাজার ১৭০টি। এটি বেড়ে ১৪ হাজারে গিয়ে ঠেকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ বহু পরিবার এখনও পানির সংযোগ না দিয়ে পানি শোধনাগারের দিকে চেয়ে আছে। পৌরবাসীর অভিযোগ এর পরেও সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ পানি শোধনাগার পরিচালনাতে দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে।

তাছাড়া শোধনাগারটি নির্মাণে বহুবিধ ত্রুটি রয়েছে। বিশেষ করে ব্যবহার করছে নিম্নমানের সামগ্রী। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে যে সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে তা নাকি খুবই নিম্নমানের। কারণ নির্বাহী প্রকৌশলী রাজশাহীতে অবস্থান করায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেভাবে দেখভাল করছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি পৌরসভাও সার্বক্ষণিক নজরদারিতে কোন দক্ষ বা অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে রাখেনি। প্রকৌশল শাখার একজন উন্নয়ন সহকারী যার কোন প্রকৌশলগত জ্ঞান, দক্ষতা বা ডিগ্রী নেই তাকে সার্বক্ষণিক নির্মাণ তদারকিতে রেখে পৌরসভা দায়সারা গোছের দায়িত্ব পালন করছে।