গত ঈদুল ফিতরে জঙ্গি হামলার অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে এবার নিরাপত্তাকে ‘সর্বোচ্চ’ প্রাধান্য দিয়ে শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
দেশের সবচেয়ে বড় এ ঈদ জামাতে প্রথমবারের মতো বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েনের মাধ্যমে নজিরবিহীন নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ঈদুল আজহার ১৮৯তম জামাতের জন্য কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। গত ঈদে মাঠের কাছে জঙ্গি হামলার কারণেই এবার বাড়তি সতর্কব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘গত ঈদে অপ্রত্যাশিত জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার ও ঢেলে সাজানো হয়েছে। ঈদকে ঘিরে সব প্রস্তুতি শেষের দিকে রয়েছে।’
পুলিশ সুপার (এসপি) আনোয়ার হোসেন খান বলেন, সবকিছু মাথায় রেখে এবার শোলাকিয়ায় নজিরবিহীন নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনস্তরের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে বিপুলসংখ্যক বিজিবি, র্যাব-পুলিশ, এপিবিএন ও আনসার সদস্য থাকবে। তা ছাড়া সাদা পোশাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মাঠের ভেতর ও বাইরে কাজ করবেন।
‘ঈদের দিন মাঠের তিন দিকের সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হবে। মাঠের সামনের দুটি গেট দিয়ে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশির পর মুসল্লিদের মাঠে ঢুকতে দেওয়া হবে। মাঠে কাউকে কোনো ধরনের ব্যাগ বা পোটলা-পাটলি নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’
এসপি আরো জানান, মাঠ ঘিরে থাকবে সিসি ক্যামেরার নজরদারি। পুলিশ তার সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চটাই করবে। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
এবার ঈদের জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ। জামাত শুরু হবে সকাল ৯টায়।
গত ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন সকালে শোলাকিয়ার ঈদগাহের পাশে আজিমুদ্দিন স্কুলের সামনে জঙ্গিরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলা ও চাপাতির কোপে নিহত হন পুলিশের দুই সদস্য জহিরুল ইসলাম ও আনসারুল হক।
পরে পুলিশের সঙ্গে জঙ্গিদের প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়। এতে নিজের ঘরে থাকা ঝর্ণা রানী সূত্রধর নামে এক গৃহবধূ নিহত হন। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় আবির রহমান নামে এক জঙ্গি। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ধরা পড়ে শফিউল ইসলাম নামের আরেক জঙ্গি। কিছুদিন পর ময়মনসিংহের নান্দাইলে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় শফিউল।
এ ঘটনার এক সপ্তাহ আগেই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। হামলার পর রাতেই তারা ২০ জনকে হত্যা করে।
ওই দিন রাতে উদ্ধার অভিযানের সময় বন্দুকধারীদের বোমার আঘাতে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। পরদিন সকালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত হয় পাঁচ হামলাকারী। এ নিয়ে হামলার পর ২৮ জন নিহত হয়।
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করে। সংগঠনটির মুখপাত্র আমাক হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করে বলে জানায় জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স।
প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, শোলাকিয়ায় মূলত ঈদুল ফিতরের জামাতে তিন থেকে চার লাখ মুসল্লির সমাগম হয়। কিন্তু ঈদুল আজহার জামাতে এর অনেক কম মুসল্লি মাঠে নামাজ আদায় করতে আসেন। ফলে এবার নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে না বলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করে।
আজ দুপুরে শোলাকিয়া মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, পুলিশ বাহিনীর লোকজন এরই মধ্যে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ঈদ জামাতের জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে শ্রমিকরা।