মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার কালির চর গ্রামের হেলাল নামের নৌ- ডাকাত দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বালুবাহী, মালবাহী, যাত্রীবাহী ট্রলার ও তেলের জাহাজে ডাকাতি করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঈদের আগে থেকে হেলাল, হুমায়ূন ও বাবলা বাহিনী নদীতে ব্যাপক মোহড়া দিচ্ছে। আর এই বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে রয়েছেন মিঝি বংশের আরেক কিং শফি মিঝি। দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা ঢাকা- নারায়নগঞ্জ গামী তেলবাহী জাহাজ, বালুভর্তি বাল্কহেড, কার্গোসহ বিভিন্ন পরিবহনে প্রতিনিয়ত ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি করে আসছে চক্রটি।
ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় নদী পথে মালবাহী জাহাজ,লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচলকারী একমাত্র নৌ পথ মেঘনা নদী। এই নদীটির মুন্সিগঞ্জ সীমান্ত পথ কালির চর থেকে শুরু করে মেঘনা নদীর গজারিয়ার ইছমানির চরের মেঘনা নদীর মোহনা পর্যন্ত এই বিস্তৃন্ন এলাকাজুড়ে প্রায় ১০-১৫ টি ডাকাত দল সক্রিয় রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কয়েক সাপ্তাহ পর পর মেঘনা নদীতে বর যাত্রীর ট্রলারে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। কালির চর, চর আব্দুল্লাহ, বাংলাবাজার, মহেশপুর, জাজিরাসহ নদী তীর বর্তী গ্রামের বাসিন্ধা ও জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের নদীতে এবং গ্রামে কোন স্থানে শান্তি নেই। নদীতে তারা চালায় জোড় ধবস্তি আর গ্রামে যুব সমাজের হাতে তুলে দেয় মরন নেশা মাদক।
এলাকাগুলো নদীমাতৃক হওয়ায় বিভিন্ন জেলা থেকে মাদক সহজেই ঢুকে পড়ছে নদী তীরবর্তী গ্রাম গুলোতে। এসব অপরাধীদের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রামবাসী আরো বলেন, নদীতে যে পরিমান পুলিশ প্রশাসন রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। এদিকে গত- ০৮-০৯-১৬ ইং তারিখে সকাল ১১ টার সময় মেঘনা নদীর জাজিরা খেয়া ঘাটের সামনে থেকে ঈদের ছুটি শেষে বাড়ী ফেরার পথে ড্রেজারের ৬ জন শ্রমিক ডাকাতদের কবলে পড়ে। ডাকাত দল শ্রমিকদের ড্রেজারের দিকে ২-৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁরে এতে আতংকিত হয়ে শ্রমিকরা মাঝ নদীতে থেমে যায়। হেলাল বাহিনী অস্ত্রের মুখে শ্রমিকদের জিম্মি করে ব্যাপক মারধর করেন। এ সময় আনার (৩৫), সিরাজ (৫০), হানিফ (৩৫), নুরইসলাম (৪০) আছান (৫০), শরীফ (২৪)সহ ৬ জন শ্রমিককে পিটিয়ে আহত করেন ডাকাত দল।
আহত শ্রমিক সিরাজ অভিযোগ করে বলেন, আমরা ড্রেজার নিয়ে বাড়ী ফেরার পথে হেলাল বাহিনী আমাদের ড্রেজার লক্ষ করে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেন। ভয়ে আমরা ড্রেজার থামাতে বাধ্য হই। পরে ড্রেজারে উঠে হেলাল বাহিনী আমাদের সকলকে মারধর করে ৬ টি মোবাইল, ২৬ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। তিনি আরো বলেন,পরে ডাকাতরা সকলকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ড্রেজারসহ আমাদের প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিনে কালিরচর গ্রাম পেরিয়ে পদ্মা নদীতে নিয়ে যায়। পদ্মার পাড়ে নিয়ে আমাদেরকে পদ্মার চরে নামিয়ে দেয়। যাওয়ার সময় বলে ড্রেজারটি বরিশালে বিক্রি করা হয়েছে তোরা এখন চলে যা নইলে জীবনে শেষ করে দিব।
সর্বশেষ ঈদের ২ দিন আগে মুন্সির হাট থেকে গরু বিক্রি করে বাড়ী ফেরার পথে পাইকারদের ট্রলারে এই চক্রটি ডাকাতি করেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের। এ সময় পাইকারদের সঙ্গে থাকা গরু বিক্রির প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা নিয়ে যায় ডাকাত দল।এ সময় ব্যাপরীদের ব্যাপক মারধর করা হয়েছে এবং একজন এখনও নিখোঁজ রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানাযায়।
কালিরচর গ্রামের একাধিক গ্রামবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হেলাল, বাবলা, বাহিনী শফি মিঝির আশ্রয় প্রশ্রয়ে মেঘনা নদীতে ত্রাশের রাজত্ব করে চলছে। নদী কিংবা গ্রামে পুলিশ আসার আগে থেকেই টের পেয়ে পালিয়ে যায় তারা। পুলিশ চলে গেলে তারা আবার পূর্বের স্থানে ফিরে যায়।
ড্রেজারের মালিক মিনাল সিকদার বলেন, আমি ড্রেজারে ডাকাতি ও শ্রমিকদের মারধর করার খবর শুনে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ওসিকে ফোন করি। খবর পেয়ে পুলিশ বাংলা বাজারের পদ্মার চর থেকে ড্রেজারটি উদ্ধার করে। এ সময় পুলিশের ধাওয়া খেয়ে হেলাল বাহিনীসহ শফি মিঝি নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে হেলালের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যাযনি। পরে তার পিতা সরাফত মিয়ার সাথে ফোনালাপকালে তিনি বলেন, এটা ভুল হয়েছে বিষয়টি নিয়ে বসে মিমাংশা করে দেওয়া হবে। আপনার ছেলে শ্রমিকদের মারধর করে আহত করে, টাকা পয়সা লুট, ডাকাতি ও ড্রেজার ছিনতাই করেছে। জবাবে সরাফত বলেন, আমার ছেলেসহ যারা এ অন্যায় কাজটি করেছে এটা অস্বীকার করার কোন কারন নেই। তিনি আরো বলেন,আমি জানতে পেরেছি ড্রেজারটি পুলিশ উদ্ধার করে মালিক পক্ষকে ফেরত দিয়েছে। আপাতত কোন মামলা বা নিউজ করার দরকার নেই। বিষয়টি আমি মিমাংশা করে দিব।
শফি মিঝির সাথে ফোনালাপকালে তিনি বলেন, আমি কোন ড্রেজারে ডাকাতি করিনাই। যারা করেছে তাদের বিচার আমি করবো। আপনি পুলিশ দেখে দৌড়ে পালালেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শফি কোন উত্তর দিতে পারেননি তিনি। আপনার নামে মামলা হচ্ছে থানায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কয়েক ডজন মামলা তাকেই আমার নামে এটা কোন বিষয় না।
মুন্সিগঞ্জ থানার এস আই হাশেম আলী বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে বাংলাবাজার এলাকার মহেশপুর গ্রামের পদ্মার চরে গিয়ে তাদেরকে ধাওয়া করিলে কৌশলে হেলাল, শফি মিঝিসহ অন্যান্যরা পালিয়ে যায়। ড্রেজারটি উদ্ধার করে মালিক পক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ড্রেজার মালিক লিখিত অভিযোগ করেছে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।