বাগেরহাট জেলা কারাগার এখন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হযয়েছে। সরকার যেখানে কারাগার আধুনিকতার ছোঁয়ায় শোধনাগারের চেষ্টা করছে সেই মুহুর্তে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের অসৎ উদ্দেশের কারণে তা ভেস্তে যাচ্ছে। গত ৪ বছর আগে বাগেরহাট কারাগারে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এক কারারক্ষী চাকরিচ্যুত হযয়েছেন। তার পরও থেমে নেই কতিপয় কর্মকর্তার অপকর্ম কান্ডের তৎপরতা। সেখানে অর্থ ছাড়া যেন কোন কাজই বিথা। অনিয়ম এখন নিয়মে পরিনত হয়েছে।
কারাগারের কয়েকজন বন্দির সাথে কথা বলে জানা গেছে, কারাগার মানেই একটি বন্দি জীবন। নানা সুবিধা-অসুবিধার মধ্যে দিয়ে কাটাতে হয় এখানে। ‘জোর যার মুল্লুুক তার, অনেক সময় কারা অভ্যন্তরে এ ধরনের ঘটনাও কম নয়’। তবে কেউ জানে না একজন বন্দীর জন্য সরকার দৈনিক তাদের কি পরিমাণ খাবারের বরাদ্দ দিয়েছেন। বাজার দরে কারা অভ্যন্তরে ক্যান্টিন চালু করা হলেও চড়া দামে কিনতে হয় পন্য সামগ্রী। প্রত্যেকটি দ্রব্যের মূল্যের ২-৩ গুন বেশি দামে বিক্রি করে। আর এই অর্থ কয়েকজন ভাগবাটোয়ারা করে নেয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারারক্ষী জানান।
একাধিক সুত্রে জানা গেছে, কারাগারের দুই প্রধান কারারক্ষী দেলোয়ার হোসেন ও শরীফুল ইসলাম তারা দুজন প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা অবৈধ পন্থায় আয় করার লক্ষে নানা কৌশল ব্যবহার করছেন। তিন বছরের বেশি একই স্থানে চাকরি করার সুবাদে এই দুই প্রধান কারারক্ষী ব্যাপক আধিপত্য বিস্তার করে চলছেন। বদলীর আদেশ আসলেও বিভিন্ন উপায় ম্যানেজ করে বহাল তবিয়াতে রয়েছেন। তারা দুজন ৮শ বর্গফুটের কোয়ার্টারে থাকলেও দুই বছরের বেশি সময় ধরে ভাড়া কর্তন করছেন না।
ডেপুটি জেলারের কক্ষে বন্দীদের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থায় জনপ্রতি ২-৪ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অন্য কর্মকর্তাদের সহয়তায় মসজিদের ছাদ তৈরির নামে সাক্ষাতকারীদের কাছ থেকে পাওয়া দান বাক্সের অর্থ অর্ধেকেরও কম টাকা জমা রেখে বাকি টাকা লোপাট করছে। আরও জানা গেছে ১৬টি কোয়টারের প্রতিটিতে একটি করে পরিবারের বসবাসের নিয়ম থাকলেও সেখানে সাবলেট দিয়ে ২টি পরিবার বসবাস করছে। কারাগারে কোন প্রকার অনিয়ম যেন না হয় সে বিষয়টি দেখভাল করার জন্য শামীম আক্তার নামে এক সিআইডি রক্ষী। তিনি রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করছেন। ভাগ বাটোয়ারায় তিনিও অংশীদার। এর নেপথ্যে রয়েছেন জেল সুপার ও জেলার।
চাহিদা মতো টাকা দিলে কারাগারের মধ্যে রান্না করে খাওয়া যাবে,- মিলবে মাদকদ্রব্য। থাকা যাবে রাজার হালে। গুরুত্বর অসুস্থ না হয়ও কারাগারের বাইরে হাসপাতালের কেবিনে থাকার সুযোগ মিলবে। যাওয়া- আসাসহ কোর্ট হাজতে বসে মোবাইল ফোনে কথা যাবে। আর যেসব হাজতী ও কয়েদীরা টাকা দিতে পারবে না তারা যতোই অসুস্থ্য হোক না কেন,- তাদের নূন্যতম চিকিৎসা মিলবেনা। বাগেরহাট জেলা কারাগার চত্তর ও কোর্ট হাজতখানা ঘুরে হাজতী ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানাগেছে।
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বাহিরদীয়া গ্রামের আব্দুল গহর শেখ (৮০) কারাগারের তার স্বজনদের সাথে দেখা করার বিষয়ে বলেন, দুপুরে ৩জনের সাথে ২০ মিনিট কথা বলার সুযোগ দেয়ার জন্য করারক্ষিদের দিতে হয়েছে ৬০০ টাকা। এক-এক প্যাকেট সিগারেটের জন্য বাড়তি দিতে হয়েছে ৫০ টাকা করে। মাসে ২ হাজার টাকা দিলে এক-একজন স্বজনদের ভালো খাবার ও থাকার জায়গা দেয়া হবে বলেও কারারক্ষিরা তাকে জানিয়েছে। এমনই অভিযোগ করলেন, কারাগারে আটক স্বজনদের দেখতে আসা পিরোজপুর শহরের মাছিমপুর সড়কের গৃহবধু আকলিমা বেগম, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার শিবনগর গ্রামের নজরুল ইসলাম, যাত্রাপুর এলাকার তহমিনা আক্তার, মোড়েলগঞ্জের নিশানবাড়িয়া এলাকার একরাম হোসেনের।
বাগেরহাট সহকারী আইনজীবী সমিতির কয়েক জন নেতার দাবী প্রতিটি ওকালত নামায় আসামীদের স্বাক্ষর আনার জন্য ৫০ টাকা করে দিতে হয়। এই অনিয়ম বন্ধের দাবি জানান তারা।
বাগেরহাট জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এ্যাড. ড.একে আজাদ ফিরোজ টিপু বলেন, বাগেরহাট কারাগারের অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়টি জেলা আইন শৃঙ্খলা ও জেলা লিগ্যাল এইড এর মাসিক সভায় একাধিকবার উত্থাপন করা হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা কারাগারের জেলার মোস্তফা কামাল কারাগারের সকল প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘২০০৮ সালে চালু হওয়া এই কারাগারের ধারন ক্ষমতা চার শত জনের হলেও বর্তমানে গড়ে পাচঁ শত জন হাজতী ও কয়েদী থাকছে। কারাগারে চিকিৎসার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। আমাদের অসুস্থ বন্দীদের নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
বাগেরহাট কারাগারের সুপার গোলাম দোস্তগীর অনিয়মের বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করে জানান, আগের তুলনায় কারাগার অনেক উন্নত হয়েছে। কারা অভ্যন্তরে বন্দীদের বৃত্তিমুলক প্রশিক্ষণসহ বিনোদনের সব রকমের ব্যবস্থা রয়েছে। এর বেশি কিছু তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। খবর এনবিএসের