খাগড়াছড়ির আলুটিলায় এবং পানছড়িতে পর্যটন জোন স্থাপনের সরকারের প্রস্তাব বাতিলে দাবিতে রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলা সদরে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার বেলা ১১টায় বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম নানিয়ারচর থানা শাখা যৌথভাবে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে মিছিলটি বের করে নানিয়ারচর বাজার ঘুরে আবার উপজেলা প্রাঙ্গণ গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নানিয়ারচর থানা শাখার সভাপতি জয়ন্ত চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, নানিয়ারচর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান রণ বিকাশ চাকমা, কোয়ালিটি চাকমা, নানিয়ারচর ভূিমরক্ষা কমিটির আহবায়ক ও সাবেক্ষং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুশীল জীবন চাকমা সুপন, বুড়িঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রমোদ বিকাশ খীসা, নানিয়ারচর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতি লাল চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙ্গামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক কুনেন্টু চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা কমিটির সভানেত্রী মন্টি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম নানিয়ারচর থানার সাধারণ সম্পাদক নীলয় চাকমা প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন, শিক্ষা ও পর্যটনের নামে পাহাড়িদের ভূমি বেদখলের পায়তারা চালাচ্ছে। এ লক্ষে নিজেদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ পাহাড়ি জনগণের হাজার হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ করছে। ইতিমধ্যে পর্যটনের নামে খাগড়াছড়ির আলুটিলায় ৭শ’ একর ভূমি অধিগ্রহণের হুকুম দখলের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এছাড়া পানছড়ি উপজেলার ঝরনাটিলায় পাহাড়িদের উতখাত করে পর্যটন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে রাঙ্গামাটিতে মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নামে পাহাড়িদের শ’শ’ একর ভূমি বেদখল করে নিচ্ছে সরকার।
তারা বলেন, স্থানীয়দের উচ্ছেদ ও ক্ষতিগ্রস্ত করে সরকারের এমন কোনো উন্নয়ন জুম্ম জনগণ চায় না। অবিলম্বে সরকারে এসব নীলনকশা বন্ধ করতে হবে। তারা অবিলম্বে খাগড়াছড়ির আলুটিলায় এবং পানছড়ির ঝরনাটিলায় প্রস্তাবিত পর্যটন প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, অন্যথায় জুম্ম জনগণ বসে থাকবে না। আমরা সরকারের এসব পাহাড়িস্বার্থ পরিপন্থী কর্মকান্ড প্রতিরোধে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রস্তাবিত জমিতে আলুটিলা বিশেষ পর্যটন জোন গঠন করা হলে খাগড়াছড়ির দুই উপজেলার তিনটি মৌজায় ২১টি গ্রামের ৫১৮টি পরিবারের ২,১৫৩ জন পাহাড়ি নিজ জমি ও বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদের শিকার হবেন। পর্যটনের নামে অবকাঠামো নির্মাণ ও ব্যাপক সংখ্যক লোকের আনাগোনার ফলে এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়াও প্রস্তাবিত আলুটিলা বিশেষ পর্যটন জোন প্রকল্পটির সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত ক্ষতি মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী হবে।