এক হাতে ছোট বাটি, তাতে বিভিন্ন রং মিশ্রিত পানি। আরেক হাতে কাঠের তৈরি ব্রাশ। সেই ব্রাশ ভেজাচ্ছেন বাটিতে। তা নিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের রং করছেন প্রতিমায়। কেউ নিয়েছেন ছোট ছোট চিকন কাঠ। সেই কাঠি দিয়ে প্রতিমায় নকশা তৈরি করছেন। যেন দম ফেলার সময় নেই তাদের। এভাবে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা।
মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্র জানায়,বন্দর নগরী চট্টগ্রামে এবার ছোট বড় প্রায় এক হাজার ৮০০ মন্ডপে পূজার আয়োজন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সার্বজনীন ও ঘরোয়া পূজা মিলিয়ে ৩১০টি, দক্ষিণ জেলায় ৮০৭ উত্তর জেলায় ৭৪৫টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
কোনো কোনো পুজামন্ডপে চলছে প্রতিমা সাজসজ্জার কাজ। দেবী মূর্তি নির্মাণ শেষ, গায়ে এখন রং ছোঁয়ানোর অপেক্ষায় ভাস্কর, নিপূণ শিল্পীরা। আয়োজকরা ছুটছেন দর্জি পাড়ায়। মা দুর্গার লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ির জরির কাজ, গণেশের ধুতিতে নকশাদার পাড় বসানো, আর মহিষাসুরের জমকালো পোশাক তৈরির কাজ এখনও যে বাকি। কেউবা ছুটছেন কামার পাড়ায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে বানিয়ে নিচ্ছেন দেবীর হাতের চক্র, গদা, তীর-ধনুক ও খড়গ-ত্রিশূল। আর ঘষা-মাজায় মিস্ত্রিরা ব্যসত্ম মন্ডপগুলোকে নতুন করে তুলতে।
আর মাত্র ২০ দিন পর হিন্দু স¤প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা। আর তা ঘিরে ইতোমধ্যেই চট্টগ্রামের পূজামন্ডপগুলোতে সাড়ম্বরে শুরু হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রতিমা শিল্পীরা দিনরাত ব্যস্ত প্রতিমা নির্মাণে। রাত দিন পরিশ্রম করে শিল্পীরা তৈরি করছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, স্বরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুর, মহিষ, সিংহের মৃন্ময় মূর্তি।
দূর্গার পাশাপাশি লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের মূর্তি তৈরিতেও রয়েছে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দূর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি এই পুজার আয়োজন করায় দেবীর এ পুজাকে বাসন্তী পুজাও বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার আগে শ্রী রামচন্দ্র দুর্গাপুজার আয়োজন করেছিলেন। তাই শরৎকালের এই পুজাকে হিন্দুমতে অকালবোধনও বলা হয়। তাই এই অকালবোধনে শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে নানা আয়োজনে ব্যস্ত হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষ।ডেকোরেটরওয়ালাদের ঘুম নেই। আয়োজকদের ফরমায়েশ ও ডিজাইন অনুযায়ী গড়ে তুলছেন দৃষ্টিনন্দন অস্থায়ী পুজামন্ডপ। চলছে সংস্কারের শেষ কাজ টুকুও।
প্রতিমাশিল্পীরা জানান, প্রতিমা গড়া শেষ হলে রঙ্গতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হবে অবয়ব। ফুটিয়ে তোলা হবে নাক-চোখ-মুখ। এরপর শুরু হবে পোশাক-পরিচ্ছদ পরানোর কাজ। প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি অনেক পূজামন্ডপে চলছে সাজসজ্জার বর্ণিল আয়োজন। শুরু হয়েছে চোখ ধাঁধানো পূজা মন্ডপের মঞ্চ তৈরি ও নানা পরিকল্পনার কাজ। আয়োজকরাও কর্মব্যস্ত রয়েছেন। সব কিছিু মিলে দূর্গোউৎসবের সঙ্গে জড়িত কারো দম ফেলার সুযোগ নেই।
এদিকে বিভিন্ন মন্দির, মঠ ও মহল্লার আয়োজকরা বলেন, মন্ডপের সাজসজ্জাতেও থাকছে নানা চমক। পূজা শুরুর কয়েকদিন আগে মন্ডপ পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি সম্পন্ন হবে আলোকসজ্জা ও পূজার অন্যান্য আয়োজন। মন্দির প্রাঙ্গণকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে মন্দিরগুলোতেও চলছে ঘষা মাজা ও রংয়ের কাজ।
সদরঘাট কালী বাড়ীর সুজন পাল সংবাদ সংস্থা এনবিএসকে বলেন, ‘এখানে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। কিছু কিছু বাকি থাকলেও আশা করছি ঠিক সময়ে সব প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হবে।’