ঢাকার কাছে টঙ্গীতে একটি বহুতল কারখানা ভবনে বয়লার বিস্ফোরণের জেরে ঘটে যাওয়া অগ্নিকা- ও ভবন ধ্বসের পর সেখানে এখনও উদ্ধার অভিযান চলছে। এ ঘটনায় কারখানার মালিকসহ আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। রানাপ্লাজা ধ্বসের পর থেকে তৈরি পোশাকখাতে কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক কাজ শুরু হয়। নিরাপত্তা দেখার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ শুরু হয়।
গার্মেন্টসের তুলনায় অন্যান্য খাতের কারখানার নিরাপত্তার বিষয়টি কতটা গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে বা অবহেলিত থেকে যাচ্ছে এ বিষয় নিয়ে বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলেন শ্রম বিষয়ক গবেষণা সংস্থা বিলসের কর্মকর্তা সুলতান উদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি গত কয়েক বছর যাবৎ যেসব দুর্ঘটনা ঘটছে তাতে বোঝাই যাচ্ছে আমাদের সমস্ত শক্তি এবং সামর্থের একটা বড় অংশই গার্মেন্টসে নিয়োজিত হচ্ছে। এটি নিরাপত্তার প্রাথমিক ধরাণার সাথে সম্পৃক্ত না। কারণ নিরাপত্তা হতে হবে সবার জন্য। নিরাপত্তার যে উদ্যোগগুলো নেওয়া হয়েছে সেটা মূলত বাণিজ্যকে নিরাপদ করার জন্য। জীবনকে নিরাপদ করার জন্য নয়। সুতরাং বাণিজ্যের জন্য যেখানে চাপ আছে সেখানেই বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। এখন আমাদের সময় এসেছে এ অবস্থান থেকে সরে এসে একটা সামগ্রীক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করার।
বাণিজ্যিক লাভের কারণে রপ্তানিখাতে নিরাপত্তার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য যেসব কারখানাখাত আছে সেখানে চাপ আছে কিনা এর উত্তরে সুলতান উদ্দীন আহমেদ বলেন, অন্যান্য কারখানাখাতে চাপ নেই। বহুজাতিক কোম্পানি বা বিদেশিদের কাছ থেকে যখন চাপ আসে তখন বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষার জন্য নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়। রানাপ্লাজা ধ্বসের পর মানবাধিকার সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, ক্রেতা সবাই মিলে একটা চাপ তৈরি করেছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা নিয়ে অনেক নিয়ে অনেক তোড়জোর হয়েছে। ট্যাম্পাকো কারখানায় অনেক বহুজাতিক করাখানার লেভেল ছাপা হতো। এটাকে তারা সতর্কতার বিবেচনা করেন নি। অর্থাৎ পুরো বিষয়টাই উপরিকাঠামোর ব্যাপার হয়ে গেছে। এর সাথে ভিতরের যে চাহিদা এবং দায়িত্ববোধ সেটা কাজ করছে না।
প্রায়ই বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটছে এই বিষয়গুলোতে কেন নজর দেয়া হচ্ছে না এর উত্তরে সুলতান উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমাদের তরফ থেকে এই বিষয়গুলোকে কখনই অবহেলা করি নাই। কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু নিরাপত্তাতো বেসরকারি সংগঠনগুলো করতে পারবে না। এর জন্য সরকারের সামগ্রিক এবং সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন হবে। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে যেটা জরুরি হয়ে পড়েছে সেটা হচ্ছে সমগ্র জনগণকে সচেতন করতে হবে। সুতরাং এটি এখন শুধুমাত্র বাণিজ্য নির্ভর, শুধুমাত্র কারখানা নির্ভর, শ্রম পরিদর্শন নির্ভর বিষয় না। এটি একটি সমন্বিত এবং সামগ্রিক উদ্যোগ। এখানে সরকারের সবগুলো সংস্থা একসাথে কাজ করতে হবে। এছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা