তুরস্ক অসন্তোষ জানিয়ে এলেও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার থেকে সরকার বিন্দুমাত্র পিছু হটবে না বলে দেশটির রাষ্ট্রদূতকে বলে দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
রাষ্ট্রদূত ডেভরিম ওজতুর্ক মঙ্গলবার সচিবালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতে গেলে তাকে এই বার্তা জানিয়ে দেন মন্ত্রিসভার জ্েযষ্ঠ এই সদস্য।
তোফায়েল সাংবাদিকদের বলেন, “মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচারকাজ আমরা শুরু করেছি, সেটা আমরা করবই। দেশের মানুষেরও এটা সিদ্ধান্ত। নির্বাচনে আমরা ম্যান্ডেট লাভ করেছি, সেটা আমরা তাকে (রাষ্ট্রদূত) অবহিত করেছি।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ নিয়ে পাকিস্তানের মতো তুরস্কও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করে আসছে।
যুদ্ধাপরাধী জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের পর নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দেয় তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ফাঁসির প্রতিবাদে তুরস্কে বিক্ষোভও হয়।
নিজামীর ফাঁসির খবরে ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, তার ‘এ ধরনের শাস্তি প্রাপ্য ছিল বলে’ তুরস্ক মনে করে না।
নিজামীর ফাঁসির প্রতিবাদের পর তুরস্ক সরকার ঢাকা থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত ওজতুর্ককে আঙ্কারায় ফিরিয়ে নিয়েছিল। পরে তাকে আবার পাঠানো হয়।
তোফায়েল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস অত্যাচার-নির্যাতনের কথা তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের কাছে তুলে ধরেছেন তিনি।
“যার কারণে আমরা স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধীদের বিচার করতে বাধ্য হয়েছি। তাদের বিচারে ফাঁসির হুকুম হয়েছে সেই দণ্ড কার্যকর হয়েছে।”
এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, কিছু দিন আগে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর তুরস্কও যে এখন মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনার বিষয়টি ভাবছে, তা নিয়েও রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে তার।
তুরস্কের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চায় বাংলাদেশ
তুরস্কের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা চলছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল বলেন, “তুরস্কের সাথে আমরা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যেতে চাই।
“দুই দেশের বাণিজ্য এক দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার এবং এটা বাংলাদেশের পক্ষে। আমরা এই বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি করতে চাই।”
তুরস্কের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে পারলে বাংলাদেশের রপ্তানি আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট ডেভেলপিং-এইট (ডি এইট) এর সদস্যদের মধ্েয একমাত্র স্বল্পোন্নত বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটাতে তুরস্কের সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনায় স্থান পায়।
তোফায়েল বলেন, “রুলস ও অরিজিনকে আরও আমাদের পক্ষে নিতে চাই, আরও রিল্যাক্স করতে চাই। ডি এইটভুক্ত অধিকাংশ দেশই এ ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। আমরা তুরস্কের কাছে এ ব্যাপারে সম্মতি চাই যেন বাংলাদেশের পক্ষে আরও নমনীয় করতে পারি।”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মনোজ কুমার রায় ও অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) মুন্সী সফিউল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।