খোলা বাজার২৪,বুধবার,২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬: সব দলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করতে হবে। ইসি গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটিতে জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় জনমতের বাইরে কোনো কমিটি গঠন হলে জনগণ তা মানবে না বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৯ম ‘কারামুক্তি দিবস’ উপলে উক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর বিএনপি। গত ১১ সেপ্টেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার ‘কারামুক্তির দিন’ থাকলেও ঈদুল আজহার কারণে তা পিছিয়ে দেয়া হয়। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে ‘সার্চ কমিটি’র প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য সার্চ কমিটি বা অন্য কোনো কমিটি গঠনের েেত্র জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই, তবে সেটি গণতান্ত্রিক উপায়ে এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে, গৃহপালিত ইসির অধীনে নয়। : প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নিজের মতো করে সবকিছু সাজিয়ে নেবেনÑ তা হবে না। সার্চ কমিটি করেন, আর যে কমিটিই করেন জনমতের বাইরে গিয়ে কোনো কমিটি এদেশের মানুষ মেনে নেবে না। : বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণের জন্য এক-এগারোতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সেই ধারাবাহিকতায় এখন একটি দল দেশে বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মতায় এসে আওয়ামী লীগ সকল কৌশল নিয়ে বাংলাদেশকে রাজনীতি মুক্ত করতে চাচ্ছে। সেজন্য বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। : গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বেগম খালেদা জিয়া সংগ্রাম করে যাচ্ছেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, উপমহাদেশে যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারো চেয়ে কম ত্যাগ স্বীকার করেননি। আপোসহীন মনোভাবের কারণে তাকে আজকে এই পরিস্থিতি পড়তে হয়েছে। : তিনি বলেন, সরকার সুপরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে। ভিন্ন মোড়কে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হচ্ছে। মামলা বিচারের পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যতই মামলা দেয়া হোক না কেন এ দেশের মানুষ কখনো দমন নীতিকে মেনে নেবে না। : সরকার জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছে অভিযোগ করে বিএনপির মাহসিচব বলেন, সরকার সন্ত্রাস দমনের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে কমিটি করেছে। এই কমিটিগুলো এখন তালিকা তৈরি করছে। তারা বিএনপি নেতাদের বলছে, এতো টাকা দেও, না হলে তোমাদের নাম জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়ানো হবে। : মতাসীন আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চায় না দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা জানে, সুষ্ঠু ভোট হলে জনগণের ভোট পাবে না। সবকিছুই তারা করছে চিরদিন মতায় টিকে থাকার জন্য। তবে ইতিহাস বলে এভাবে মতায় থাকা যায় না। দমন নীতি চালিয়ে যারা মতায় থাকতে চায়, একদিন জনগণের সামনে তাদের জবাবদিহি করতে হয়। : বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে দেশের মানুষ তো মানবেই না। কোনো দেশই সে নির্বাচন মানবে না। : সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশে উন্নয়নের নামে লুটপাট হচ্ছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম, খুন, নির্যাতন করা হচ্ছে। এসবের বিচার একদিন হবেই। : বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদের অধীনে কোনো নিরপে কমিশন গঠন হতে পারে না । : সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সার্চ কমিটি গঠনের জন্য সকল রাজনৈতিক দল থেকে ৫ জন প্রতিনিধি নিয়ে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) তখনই নির্বাচন দেবে, যখন তাকে বাধ্য করা যাবে। : স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে আন্দোলন চলছে এবং ভবিষ্যতে হবে, তাতে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে শরিক হতে হবে। : স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশে ভয়ভীতি সৃষ্টি করা হয়েছে। মতাসীনরা মতা আঁকড়ে রাখতে শুধু রাজনৈতিক প্রতিপ নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও ভয়-ভীতি সৃষ্টি করেছে। উন্নয়নের দোহাই দিয়ে তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে। : সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে যাদেরকে ইসির নেতৃত্বে আনা হয়েছিলো তাদের দিয়ে কি নির্বাচন হয়েছে তা মানুষ দেখেছে। সার্চ কমিটির নাটকের পরিচালক আওয়ামী লীগ। এই নাটক দেশের মানুষ দেখে না। : তিনি বলেন, আবার সেই সার্চ কমিটির কথা বলা হচ্ছে দেশের মানুষকে প্রতারণা করার জন্য। বাংলাদেশের মানুষ এই সার্চ কমিটি আর গ্রহণ করবে না। রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে হবে। তা না হলে গঠিত নির্বাচন কমিশন দিয়ে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচন মানুষ কখনো গ্রহণ করবে না। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন না হলে তা প্রতিহত করতে বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। : বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়েল ভুঁইয়া, জয়নাল আবেদিন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, মহিলা দলের সভাপতি নুরে আরা সাফা, যুুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনু প্রমুখ। : দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সাল কামাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, শহিদুল ইসলাম বাবুল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা শিরিন সুলতানা, সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী, সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ড. মোর্শেদ হাসান খান, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, সহ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন সবুজ, সহ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এস এম গালিব, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, ওবায়দুল হক নাসির, আকরামুল হাসান, মামুনুর রশিদ প্রমুখ।