খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬: :মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নে কালিরচরে দুই জলদস্যু বাহিনীর দাপটে পদ্মা ও মেঘনা নদী তীরবর্তী মানুষ আতংকিত হয়ে দিন কাটাচ্ছে বলে অবিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, কালিরচর গ্রামটিতে ডাকাতি ও চাঁদাবাজির টাকার নেশায় বাহিনী পরিবর্তনের খেলা চলছে।
বর্তমানে গ্রামটিতে হুমায়ূন বাহিনীর আতংক চল্লেও তাকে হটিয়ে নতুন আরেক গ্রুপ তার জায়গা দখলের চেষ্টা মেতে উঠেছে। ইতো মধ্যে একাধিক বার উভয় গ্রুপের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ ২ বছর যাবত কালির চর গ্রামের হুমায়ন,বাবলা ও হেলাল বাহিনীর অত্যাচারে গ্রামের নিরহ মানুষদের ঘুম হারাম হয়েগেছে।
প্রতিনিয়তই সাধারন মানুষকে বিদেশি অস্ত্রেও ভয় দেখিয়ে আতংক করে রেখেেছ । এদের ভয়ে গ্রামটিতে এখন চরম আতংক বিরাজ করছে। বাহিনীর ডাকাত সদস্যরা প্রতিদিন নদীতে চুরি, ডাকাতি ছিনতাই করে আসছে। এ যেন দেখার কেউ নেই। নদী মাতৃক এলাকাটির পাশে রয়েছে মতলব, মহনপুর ও চাঁদপুর এলাকা।
এই বাহিনী প্রতিনিয়ত মেঘনা নদীতে বালুবাহী,তেলবাহী জাহাজ, লঞ্চ, স্টিমার ও নদীতে মাছ ধরার ট্রলারে ডাকাতি ও চাঁদাবাজি করে আসছে। আর বাহিনীটির নিয়ন্ত্রনে রয়েছেন বাংলাবাজার এলাকার আরেক গড ফাদার বাদশা ও শফি মিঝি। দীর্ঘদিন ধরে এই বাহিনী গ্রামে এবং নদীতে ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করে চলছে। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী কোন প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেনা।
পুলিশ প্রশাসন তাদের বাহিনীর কয়েকজনকে আটক করলেও বাকীদের আটক করতে পারছেনা। এর প্রধান কারন হলো এই বাহিনীটির নিজস্ব দ্রুত গতির সিবোর্ট রয়েছে। যার সাহায্যে তারা নদীতে নানা ধরনের অপরাধ অপকর্ম চালিয়ে বেড়ায়। নদীতে থাকা মহনপুর থানা পুলিশের সামনে তারা নানা অপরাধ ও অপকর্ম করলেও তারা নীরব দর্শকের ভুমিকায়।
প্রতিদিন নদীতে ডাকাতি হলেও নদীতে থাকা মহনপুর থানা পুলিশের সদস্যরা সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার অযুহাতে দেখিযে বিষয়টি এড়িয়ে যায়।মহনপুর থানা পুলিশ দুই জলদস্যু বাহিনীর কাছ থেকে মাসিক মাশোয়ারা নিয়ে থাকেন অভিযোগ কালিরচর গ্রামবাসীর। অপরদিকে এই বাহিনীকে হটিয়ে পূর্বের মিষ্টার মিঝি বাহিনী আবারো নিয়ন্ত্রেনে নিতে চাই এই রাম রাজত্ব । ইতো মধ্যে গ্রামটির নিয়ন্ত্রন নিয়ে একাধিক বার উভয় গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফায় গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে।
ডাকাতির স্বীকার বকচরের নিজাম বলেন , নদীতে প্রতিনিয়ত ডাকাতি ও ছিনতাই করছে দুই জলদস্যু বাহিনীর সদস্যরা। এই বাহিনীতে মহনপুর এলাকার একাধিক সদস্য থাকায় মহনপুর থানার পুলিশের টহল টিম পাশে থাকলেও কোন সহযোগিতা করেনা।
কালিরচর গ্রামের একাধিক গৃহবধু নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হুমায়ূন, বাবলা বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে নদীতে ডাকাতি করে আসছে। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় দিন দিন তারা এলাকায় ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করে চলছে। হুমায়নের বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় অস্ত্র ডাকাতি সহ ৬টি মামলা রয়েছে। প্রতিবাদ করেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিবাদ করলে আমাদের জানে মেরে ফেলবে। গ্রামবাসী প্রতিবাদ করলে তাদের নিরাপত্তা দিবে কে?
কালির চর গ্রামের মুরুব্বি আবুল জানান, এমনিতে আমরা হুমায়ূন বাহিনীর অত্যাচারে নদীতে ও গ্রামে কোনখানে নিরাপদে চলতে পারছিননা। দুই বছর আগে জোড়া খুনের মামলায় মিষ্টার বাহিনী এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন,পুরাতন জলদস্যু বাহিনীর প্রধান মিষ্টার মিঝি ও তার লোকজন জামিনে বের হয়ে এলাকায় ঢুকতে শুরু করেছে।এ নিয়ে দু”গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক গুলিবিনিময় হয়েছে। মিষ্টার বাহিনী গুলি করতে করতে এলাকায় প্রবেশ করেছে। দুই বাহিনীর আতংকে এলাকার লোকজন ভয়ে আছে।
সরে জমিন গিয়ে আরো জানাযায়,গত দুই বছর আগে কালির চর গ্রামের মহন ব্যাপারি ও শফি মিঝির ভাই ফয়েজ মিজি নিহত হয় দুর্বিত্তের গুলিতে নিহত হন। আর এই জোড়া খুনের মামলায় মিষ্টার মিঝি গংদের আসামী করা হয়। দুইবছর জেলা হাজত খেটে জামিনে মুক্ত হয়ে হত্যা মামলার আসামি মিষ্টার মিজি গত ৯/৯/১৬ ইং তরিখে ব্যাপক শো- ডাউন কালিরচর তার গ্রামে প্রবেশ করেন। গ্রামে ঢোকার পর পর হুমায়ন বাহিনি প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে বাড়ি মিষ্টার বাহিনীকে হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গুলিবিনিময়ের ঘটনাও ঘটে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের ।এলাকাবাসী আরো অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান বাহিনীটিকে গুড়িয়ে দিয়ে আগের সেই হত্যা , ডাকাতি মামলার আসামী মিষ্টার মিঝি এলাকায় পূনরায় আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রতিদিন কালির চর গ্রামে দুই বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময় হয়। এতে কালিরচর গ্রামবাসীর মনে আতংক বিরাজ করছে।
হুমায়ুন বাহিনীর বিষয়ে বাহিনীর প্রধান শফি মিঝির কাছে ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিষ্টার মিঝি ও তার লোকজন আমার আপন ভাই ও ভগ্নিপতিকে গুলি করে হত্যা করেছিল। জামিনে বের হয়ে তারা এখন গুলি করতে করতে এলাকায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। আমরা এলাকার শান্তি চাই। শান্তি চাইলে হূমায়ন, বাবলা ওদেরকে ধরিয়ে দিতে পুলিশকে সাহায্য করছেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওরা অপরাধী হলে পুলিশ ওদেরকে ধরে নিয়ে যাক।
ডাকাত হুময়ান পদ্বা মেঘনা নদীর জলদুশ্য বাহিনির প্রধান বাবলার অন্যতম সহ যোগী দাবী করে হত্যা মামলার জামিন প্রাপ্ত আসামী মিষ্টার মিজি বলেন,আমার জন্মভূমি কালির চরে । আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা হত্যা মামলা দিয়ে দীর্ঘ দুই বছর গ্রামের বাইরে রেখেছে। তিনি আরো বলেন,আমরা জামিনে মুক্ত হয়ে আমাদের বাড়ীতে গিয়েছি । হুমায়নের গুলির বিষয়ে তিনি জানান, আমাকে হত্যার উদ্দ্যেশে হুমায়ূন বাহিনী আমাকে লক্ষ করে গুলি করেছে।
এ বিষয়ে জলদস্যু বাহিনীর হুমায়ূনের সাথে তার সহযোগী খালেকের মোবাইলে ফোন করে গোলাগুলি ও ডাকাতির কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিষ্টার মিঝি আমার বাবা ও আমার ছোট মামাকে গুলি করে হত্যা করেছিল। তারা এলাকায় থাকলে আবারো অপরাধ হবে। আপনিও তো অপরাধী নদীতে ডাকাতি. ছিনতাই করেন? এমন প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, আমি আমার বাবা এবং মামাকে হত্যার প্রতিশোধ নিবই। এই কথা বলেই ফোন কেটে দিয়ে ফোনটি বন্ধ করে দেন হুমায়ূন।
মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম পিপিএম বলেন, ওদেরকে আমরা খুঁজতেছি। যে কোনমূলে ওদেরকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে। এই বাহিনীর সদস্যদের আটক করতে আমাদের পুলিশ যথেষ্ট তৎপর রয়েছে।