Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

24খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬: বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বাংলাদেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মঙ্গলবার কিমের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রীর।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এই অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বৈঠকে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট সংস্থাটির অর্থায়নে বাংলাদেশে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে তিনি আগামীতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশে সহযোগিতা বাড়ানোর আশ্বাস দেন।”
১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনের বিভিন্ন বৈঠকে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কয়েকটি কারণে এ বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
প্রথমত: বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে ইউরোপে চলমান শরণার্থী সঙ্কট ও অভিবাসন সমস্যা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো থেকে অন্যান্য দেশে লাখ লাখ আশ্রয় প্রত্যাশীর সমস্যা সমাধানের বিষয়গুলো এবারের অধিবেশনে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়।
দ্বিতীয়ত: মধ্যপ্রাচ্যে আইএসসহ বিশ্বব্যাপী সহিংস জঙ্গি তৎপরতার উত্থান এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘের আওতায় আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মধ্যে মতৈক্য হয়।
তৃতীয়ত: এবারের অধিবেশনে গত বছরের শেষদিকে প্যারিসে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ঐতিহাসিক জলবায়ু চুক্তি বাংলাদেশসহ বেশ কিছু সদস্য রাষ্ট্র অনুসমর্থন করে।
চতুর্থত: একটি সমৃদ্ধ ও শান্তিময় বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে গত বছর জাতিসংঘের নেতেৃত্বে ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ছাড়াও বেশ কিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ গৃহীত হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সংবলিত ২০৩০ এজেন্ডা ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট এর চূড়ান্ত অনুমোদন, উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতা পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডা গ্রহণ, বিশ্বব্যাপী দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনের জন্য সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক ফর ডিজাসটার রিস্ক রিডাকশন অনুমোদন এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার জন্য প্রথমবারের মতো ওয়ার্ল্ড হিউম্যানিটেরিয়ান সামিটের আয়োজন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে উল্লেখযোগ্য এই উদ্যোগসমূহের বাস্তবায়ন পরিস্থিতি ও প্রারম্ভিক অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা হয়।
১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদরদপ্তরে উদ্বাস্তু ও অভিবাসনের ওপর সাধারণ পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের প্ল্যানারি বৈঠকে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “অভিবাসী ও শরণার্থী ইস্যুতে বংলাদেশের অগ্রাধিকারগুলো আমি তুলে ধরি। অভিবাসন বিষয়ক গ্লোবাল কমপ্যাক্টে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোর যথাযথ প্রতিফলন নিশ্চিত করার পাশাপাশি শরণার্থী, জলবায়ু উদ্বাস্তু ও অভিবাসীদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানাই।”
একই বিষয় নিয়ে ওই দিন বিকালে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লভেনের সঙ্গে একটি গোলটেবিল বৈঠকে যৌথ সভাপতিত্ব করার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পুরস্কার পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় আমার তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং বিকাশে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে।
“তার সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনমূলক চিন্তা-ভাবনার ফলেই বাংলাদেশ এত দ্রুত তথ্য-প্রযুক্তি খাতে সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
“ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং সুশাসনে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব গভর্নেন্স অ্যান্ড কম্পিটিটিভনেস, প্লান ট্রিফিনিও, গ্লোবাল ফ্যাশন ফর ডেভেলপমেন্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হেভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব বিজনেস সম্মিলিতভাবে তাকে সম্মানজনক ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট’ পুরস্কারে ভূষিত করে।”
ওই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “মা হিসেবে এটা আমার জন্য অনেক গর্বের। আমি আশা করি জয় জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা এবং ‘রূপকল্প ২০২১’ ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে আরও জোরালো ভূমিকা পালন করবে।”
‘নারীর ক্ষমতায়নে অবদানের জন্য’ এবার ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ এবং ‘এজেন্ট অব চেইঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ পান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ পুরস্কারটি দেওয়া হয় ইউএন উইমেনের পক্ষ থেকে। আর ‘এজেন্ট অব চেইঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ দেয় গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরাম।
“নারীর ক্ষমতায়ন এবং তাদের উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করে জাতিগঠনমূলক কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্বদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ দুটি পুরস্কার প্রদান করা হয়,” বলেন তিনি।
২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত ‘সাউথ সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কোঅপারেশন ইন স্কেলিং আপ ইনোভেশন ইন পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।
ওই সেমিনারে পাবলিক সেক্টরের বিভিন্ন উদ্ভাবনসমূহ এবং সৃজনশীল উদ্যোগ বিনিময়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দক্ষিণের দেশগুলোর মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন তিনি।
একই দিন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী মিজ এরনা সোলবার্গের আমন্ত্রণে নারী নেতৃত্ব ও সংহিস জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ নিয়ে একটি আলোচনায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমন্ত্রণে বিশ্বের আরও ৩১ জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে শরণার্থী বিষয়ে বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালে অন্যান্য আলোচনা এবং বিভিন্ন দেশের নেতা ও সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
“সামগ্রিকভাবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে আমরা বাংলাদেশের এজেন্ডাগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। বিভিন্ন ফোরামে আমাদের সক্রিয় এবং ফলপ্রসু অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে বলে আমার বিশ্বাস,” বলেন তিনি।