Fri. Jun 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

13খোলা বাজার২৪,রবিবার,২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬: প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকার পর আর যুদ্ধ দেখতে চায় না বিশ্ববাসী। তবে পৃথিবীতে চলমান বিভিন্ন সংকট ও সংঘাতকে কেন্দ্র করে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধার আশংকা প্রকাশ করেন কন্সপাইরেসি থিউরিস্টরা।

এসব তাত্ত্বিকদের মতে নিকট ভবিষ্যতে বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মানবসভ্যতা। যেসব কারণ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধতে পারে তার মধ্যে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বশক্তিদের দ্বন্দ্ব।
দ্বিতীয়ত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ­াদিমির পুতিনের পূর্ব ইউরোপ আগ্রাসন।
তৃতীয়ত, দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি অবস্থান।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ উসকে দেয়ার সর্বশেষ সম্ভাব্য কারণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তানের সংঘাত।
মর্নিংগ্লেজারের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
সম্প্রতি কাশ্মীরের উরিতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৯ ভারতীয় সেনা নিহতের ঘটনায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারত পাকিস্তানে সার্জিক্যাল আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। পাল্টা জবাব দিতে দেশটির দিকে মিসাইল তাক করে রেখেছে পাকিস্তান।
বিশ্লেষকদের আশংকা, পরিস্থিতির রাশ টেনে না ধরলে ভারত-পাকিস্তান উভয়েই পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে। আর সত্যিই যদি পারমাণবিক যুদ্ধ লেগে যায়, তাহলে তা ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বব্যাপী, ঘটবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে কল্পনাতীত প্রাণহানির শিকার হবে বিশ্ববাসী। তিন বছর আগে করা এক গবেষণা বলছে, ভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধ হলে তা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। অন্তত ২০০ কোটি মানুষ এতে নিহত হবে। পৃথিবীজুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে মানবসভ্যতা।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সীমিত পর্যায়ে পারমাণবিক যুদ্ধ হলেও বিশ্বের আবহাওয়ামণ্ডলের ব্যাপক ক্ষতি ও শস্যক্ষেত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।
নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ইন্টারন্যাশনাল ফিজিশিয়ানস ফর দ্য প্রিভেনশন অব নিউক্লিয়ার ওয়্যার এবং ফিজিশিয়ানস ফর সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি নামে দুটি সংগঠন ২০১৩ সালে এই গবেষণামূলক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
সংগঠন দুটি ২০১২ সালের এপ্রিলে গবেষণাটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশ পারমাণবিক যুদ্ধে জড়ালে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
পরে ২০১৩ সালে গবেষণার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দু’দেশের সম্ভাব্য পরমাণু যুদ্ধে চীনের ওপরে প্রভাবের বিষয়টি বাদ রেখেই তারা ২০০ কোটি মানুষের মৃত্যুর আশংকা করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পরমাণু যুদ্ধের ফলে আবহাওয়ামণ্ডলে যে কার্বন অ্যারোসল কণা ছড়াবে, তাতে সুদূর আমেরিকাতেও কমপক্ষে এক দশক সময় ধরে কৃষি উৎপাদন প্রায় ১০ শতাংশ কমে যাবে। এ কণার প্রভাবে চীনে প্রথম চার বছরে গড়ে ২১ শতাংশ ও পরের ছয় বছর আরও ১০ শতাংশ ধান, গমের উৎপাদন কমে যাবে।
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জনের পর কাশ্মীরের স্বাধীনতাকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত অন্তত চারবার দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে।
কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হওয়ায় পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটি যে কোনো সময়ে ফের যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে, যা পারমাণবিক যুদ্ধে পর্যবসিত হওয়ার ব্যাপক আশংকা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা মার্কিন পরমাণু বোমায় দুই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
এখন পারমাণবিক বোমা আরও শক্তিশালী, আরও ভয়ংকর। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই ওই গবেষণায় বলা হয়, এখন কোনো পারমাণিবক যুদ্ধ মানেই তা মানবসভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার শামিল।