Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

shag_94766
খোলা বাজার২৪,সোমবার,২৬ সেপ্টেম্বর  ২০১৬ঃ  ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখন পর্যন্ত কোনো দেশি বা বিদেশির শরীরে জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়নি। তবে কয়েকজনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বিশেষ করে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে যাঁরা আসছেন, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফ্লাইটে যাঁরাই আসছেন, প্রত্যেককে বিশেষ একধরনের আর্চওয়ের মধ্যে দিয়ে আসতে হচ্ছে। ওই আর্চওয়ের কাছেই বসে থাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা প্রত্যেকের শরীরের তাপমাত্রা দেখছেন।

এই কাজের সঙ্গে যুক্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স সাইফুল ইসলাম জানান, কেউ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাঁর শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকবে। এ কারণেই প্রত্যেকের তাপমাত্রা দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রয়োজন হলে ইনফার্টা দিয়েও পরীক্ষা করা হচ্ছে। কাউকে সন্দেহ হলে ইনফ্রা রেড নামে বিশেষ একধরনের থার্মোমিটার দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৩২ জন কর্মকর্তা–কর্মচারী এ কাজে যুক্ত আছেন।

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম গতকাল শনিবার বলেন, ‘যাঁরাই এখন বিদেশ থেকে আসছেন, প্রত্যেকেরই শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কারও শরীরে জিকা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) তিন-চারজনের শরীরের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছে। তবে তাঁদের কেউ জিকা আক্রান্ত হননি।

বিমানবন্দরে থেকে জিকা ভাইরাস সংক্রমণ–সংক্রান্ত স্বাস্থ্য তথ্য কার্ডও দেওয়া হচ্ছে আগত ব্যক্তিদের। বাংলা ও ইংরেজি—দুই ভাষাতেই তাতে নির্দেশনা দেওয়া। এতে বলা হয়েছে, কেউ জিকা আক্রান্ত হলে ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি তাপমাত্রা থাকবে। চামড়ায় লালচে দানার মতো ছোপ এবং এর সঙ্গে চোখ লাল হওয়া অথবা মাংসপেশিতে কিংবা গিরায় ব্যথা হতে পারে। এসব উপসর্গ দেখা দিলে ০১৯৩৭১১০০১১ অথবা ০১৯৩৭০০০০১১ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।

সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত ১১৫ ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশি ১৯ জন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রভাবশালী জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চীনসহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল ও আফ্রিকার ২৬০ কোটি মানুষ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাব্য ঝুঁকিতে আছে। এই অঞ্চলের দেশগুলোতে মশার উপস্থিতি ও জিকা ভাইরাস সংক্রমণের উপযুক্ত পরিবেশ এই ঝুঁকি তৈরি করেছে।

ল্যানসেটে প্রকাশিত প্রবন্ধের গবেষকেরা বলছেন, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় জিকার প্রকোপ বাড়ছে। ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে তা আফ্রিকা ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।

ওই প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ১৯৪৭ সালে উগান্ডার বনে বানরের শরীরে প্রথম জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এর পাঁচ বছর পর নাইজেরিয়ায় মানুষের শরীরে তা প্রথম শনাক্ত হয়। এডিস মশার কয়েকটি প্রজাতির মাধ্যমে জিকা ভাইরাস ছড়ায়। গত দশকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় জিকার প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। গত বছর মে মাসে ব্রাজিলের কয়েকটি প্রদেশে জিকার প্রকোপ দেখা দেয়। নবজাতকের জন্মে ত্রুটি ঘটায় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জিকাকে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগ বলে ঘোষণা করে।