জানা যায়, প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে হিলারি ক্লিনটনের ‘পা’ পড়লে বিএনপির জন্য ‘ভালো খবর’ হতে পারে বলে আশা করছেন অনেকে। যদিও কেউ কেউ মনে করছেন, হিলারি ক্ষমতায় এলেও স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ এশিয়া নীতিতে কোনও পরিবর্তন আসবে না। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বিবদমান সম্পর্কের ভিত্তিতেই বাংলাদেশের অবস্থান কন্টিনিউ করবে হিলারি সরকার।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী মনে করেন, ট্রাম্প যেভাবে এগোচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। মনে হচ্ছে, মুসলিম ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ট্রাম্প বিশেষ সমস্যার সৃষ্টি করতে উদগ্রীব হয়ে আছেন।
একইমত পোষণ করেন আরেক ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি ট্রাম্পকে ভয়াবহ, রুদ্র, ধর্মান্ধ, বদমেজাজী মানুষ হিসেবে আখ্যা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দুদুর ভাষ্য, “বিশ্বের রাজনীতির জন্য মার্কিন নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতায় এলে বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারেন ট্রাম্প।”
বিএনপির এই দুই নেতাই তাদের বক্তব্যকে ব্যক্তিগত বলে জানান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের বিষয়ে দলীয় অবস্থান কী হবে, এ নিয়ে দলে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিএনপির বেশিরভাগ নেতাই হিলারি ক্লিনটনকে পছন্দ করেন বলে জানান শামসুজ্জামান দুদু।
মার্কিন নির্বাচনে দুই মূল প্রার্থী ডেমোক্রেটিক পার্টির হিলারি ক্লিনটন আর রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসলাম এবং অভিবাসী ইস্যুতে ট্রাম্পের ভূমিকা বরাবরই আক্রমণাত্মক। আর এসব বিষয়ে তুলনামূলক উদারপন্থী অবস্থানে রয়েছেন হিলারি ক্লিনটন।
৬৮ বছরের হিলারির পক্ষে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ নিজ দলের নিরঙ্কুশ সমর্থন রয়েছে। তবে ৭০ বছরের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এটা পুরোপুরি বিপরীত। রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ এবারের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে (৬৮) ভোট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন নিজ দলের বহু প্রভাবশালী দাতা। ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে ট্রাম্প একাধিকবার মুসলিমবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। ৭ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে মুসলিমদের ওপর সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জানান ট্রাম্প। পরদিন ৮ ডিসেম্বর তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সব সীমান্তরক্ষীরা মার্কিন ভূমিতে প্রবেশ চাওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে, তারা মুসলমান কি না। মুসলমান হলে তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবে না।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ট্রাম্পকে ঠেকাতে একাট্টা মার্কিন মুসলিমরা। ইউএস কাউন্সিল অব মুসলিম অর্গানাইজেশনের বোর্ড মেম্বার ওসামা অবু ইরসাঈদ বলেছেন, “ভার্জিনিয়া ও ফ্লোরিডার মতো ফলাফল নির্ধারণী রাজ্যগুলোতে মুসলমান ভোটারেরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে ধরাশায়ী করা খুব কঠিন হবে না।”এছাড়া নির্বাচনে জয়ী হলে হিলারি একজন মুসলিমকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ দিতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তিনি হচ্ছেন হিলারির দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত সহকারী হুমা আবেদিন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের আশা, সাবেক প্রেসিডিন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ, বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও হিলারি; সবাই মিলে একবিন্দুতে কাজ করতে পারলে হিলারির সম্ভাবনা আছে। তার বিজয় উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে নারী হিসেবে যদি দেখা হয়, তাহলে সেটা মার্কিন নাগরিকদের ওপরে ছেড়ে দেয়াই ভালো।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সারা পৃথিবীর মতই যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে দলটিরও মনোযোগ রয়েছেন। এরই মধ্যে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান দেশটির নির্বাচনী পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখে এসেছেন। শুরুর দিকে জনমত হিলারির দিকে গেলেও সম্প্রতি ট্রাম্পের জনসমর্থনও কাছাকাছি।
বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের একটি সূত্র দাবি করে, দলীয়ভাবে হিলারির পক্ষেই বিএনপির অবস্থান। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি প্রবাসীদের বিএনপি সমর্থকরা হিলারির পক্ষে কাজ করলেও ট্রাম্পের পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাজ করছেন। যদিও এ বিষয়ে কোনও তথ্যপ্রমাণ দেখাতে পারেনি সূত্র।
বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু মনে করছেন, হিলারি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। বাংলাদেশে এসেও তিনি যেভাবে কথা বলেছেন, তাতে মনে হয়েছে এদেশের জনগণের পক্ষে ও গণতন্ত্রের পক্ষের মানুষ। সে কারণে হিলারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের জন্য শুভ হবে। নারী হিসেবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়ে ইতোমধ্যে হিলারি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছেন।”
‘ব্যক্তিগত বক্তব্য’ দাবি করে শামসুজ্জামান দুদু আরও বলেন, “হিলারি নির্বাচিত হলে অবশ্যই বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আরও বেশি সহযোগিতা করবেন। যেমন ব্যবসা বাণিজ্যে আমেরিকার রোষাণলে আছি। জিএসপি সুবিধা পাচ্ছি না। হিলারি ক্ষমতায় এলে এগুলোর সমাধান হবে। দ্বিতীয়ত, হিলারি ক্ষমতায় এলে ড. ইউনূসের সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে হয়তো আমরা অনেক সুফল পেতে পারি।”
হিলারির বিজয়ে বিএনপির লাভের কিছু নেই, বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য। নিজের নাম উল্লেখ না করার শর্তে তিনি বলেন, “এগুলো উইশেশ’। উনি কী করতে পারেন? আমেরিকা মোস্ট পাওয়ারফুল কান্ট্রি, কিন্তু এখানে তারা ভারতকে টপকিয়ে আসবে না।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ করা একটি সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে ভারতের নির্বাচনে কংগ্রেসের পরাজয়েও বিএনপিতে খুশির ঝলকানি দেখা গিয়েছিল। ওই সময় বিজেপিকে নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে এক ধরনের উৎকণ্ঠাও ছিল। যদিও বিগত দুই বছরে বিজেপি সরকারের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের সম্পর্ক গভীরে পৌঁছেছে। রাজনৈতিক সূত্রটির ভাষ্য, মার্কিন নির্বাচনে বিএনপির হিলারিকেন্দ্রীক প্রত্যাশাও আদতে অধরাই থাকবে। হিলারি বিজয়ী হলেও মার্কিন পররাষ্ট্র নীতিতে কোনও পরিবর্তন আসবে না।
ড. ইউনূস বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতা ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, “ড. ইউনূসের সঙ্গে হিলারির ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব থাকতে পারে। কিন্তু লিগ্যাল ফর্মুলায় কোনও পরিবর্তনের সুযোগ তার থাকবে না।”
একই মত দেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষক বিএনপি নেতা ইনাম আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, “হিলারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও স্টেট ডিপার্টমেন্টর অবস্থানে কোনও পরিবর্তন আসবে না।”